ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের একান্ত বৈঠক;###;অবকাঠামো উন্নয়ন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ, সমুদ্রসীমা রক্ষায় একযোগে কাজ করতে ঐকমত্য;###;২৭ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই

নতুন যুগের সূচনা ॥ বাংলাদেশ চীন সম্পর্ক

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৫ অক্টোবর ২০১৬

নতুন যুগের সূচনা ॥ বাংলাদেশ চীন সম্পর্ক

তৌহিদুর রহমান ॥ বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ, সমুদ্রসীমা রক্ষায় ঢাকা-বেজিং একযোগে কাজ করবে। বাংলাদেশ ও চীন দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতা জোরদার করবে। দুই দেশের মধ্যে অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক এখন কৌশলগত সম্পর্কে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার’ বলে মনে করে চীন। দেশটিকে ‘এক চীন নীতি’তে বাংলাদেশ জোরালো সমর্থন দিয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়ন ও সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২৭ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ ও চীন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে একান্ত বৈঠকে এসব আলোচনা হয়। সে সময় দুই দেশের প্রতিনিধি দলও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেয়। বৈঠক শেষে দুই শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতা এগিয়ে নিতে তাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। অপরদিকে শি জিনপিং বলেন, আমরা চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের জায়গা থেকে কৌশলগত সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছি। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে শি জিনপিং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, আমি খুব খুশি ছয় বছর পর বাংলাদেশের মতো একটা সুন্দর দেশ সফর করতে পেরেছি। চীন ও বাংলাদেশ ভাল প্রতিবেশী, ভাল বন্ধু এবং ভাল অংশীদার। আমি মনে করি, এ সফর সামগ্রিকভাবে দুই দেশের অগ্রযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে ফলপ্রসূ বৈঠকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয়ে বেশ কয়েকটি চুক্তি সই হয়েছে। শি জিনপিং বলেন, কৌশলগত যোগাযোগের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক কিভাবে আরও উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেয়া বিবৃতিতে বলেন, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে একটি ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। আমরা এক চীন নীতিতে আমাদের জোরালো সমর্থন দিয়েছি। আমরা খুবই ঘনিষ্ঠভাবে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ব্যবসা ও বিনিয়োগ, অবকাঠামো, শিল্প, বিদ্যুত ও জ্বালানি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ও কৃষি খাতে একযোগে কাজ করতে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। তিনি বলেন, আজ আমরা এখানে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সাক্ষী হলাম। এ চুক্তিগুলো হয়েছে ব্যবসা, বিনিয়োগ, সমুদ্র অর্থনীতি, বিসিআইএম-ইসি, সড়ক ও সেতু, রেলপথ, বিদ্যুত, সমুদ্র, আইসিটি, শিল্প উৎপাদন, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষতার উন্নয়নসংক্রান্ত। শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা ছয়টি প্রকল্পও উদ্বোধন করেছি। এই চুক্তি ও প্রকল্পগুলো উদ্বোধনের পর দুই দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়া উচ্চপর্যায়ে পৌঁছবে। আজকে আমরা ঘনিষ্ঠ পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র থেকে কৌশলগত অংশীদারিত্বের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছি। তিনি বলেন, এ কৌশলগত অংশীদারিত্বের অধীনে আমরা দুই দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করতে সম্মত হয়েছি। আমাদের এ প্রচেষ্টার লক্ষ্য হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক মধ্য আয়ের দেশ এবং পর্যায়ক্রমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উপনীত হওয়া। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বঞ্চনামুক্ত হবে এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হব। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, চীনা প্রেসিডেন্টের ঐতিহাসিক বাংলাদেশ সফরে সফল দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের ‘নতুন দিগন্ত’ উন্মোচিত হয়েছে। শি জিনপিংয়ের এ সফরের মধ্য দিয়ে চীন ও বাংলাদেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক কৌশলগত সম্পর্কে উন্নীত হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সচিব জানান, সহযোগিতা এগিয়ে নিতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দুই দেশের সরকারের মধ্যে ১৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক এবং ১২টি ঋণ ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। তবে ঋণ চুক্তির আর্থিক পরিমাণ ও বিস্তারিত জানতে কয়েক দিন সময় লাগবে বলে জানান তিনি। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক সফল হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, চীনের রাষ্ট্রপতির সফর ঐতিহাসিক, দুই দেশের মধ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্কে বহুমাত্রিকতা আরও বিস্তৃত ও গভীর হবে, ব্যাপ্তি বাড়বে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক এখন কৌশলগত সম্পর্কে উন্নীত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে আমরা সম্পর্কের নতুন অবয়ব দেখব। বৈঠকে উঠে আসা বিষয়গুলোর ‘রাজনৈতিক দিক রয়েছে’ মন্তব্য করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আগামীতে বিভিন্ন পর্যায়ে দুই দেশের সফর দেখা যাবে। ব্যবসা বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। আইসিটিতে নতুন ফ্রেমওয়ার্কের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং একটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প ও পাটে বিনিয়োগের ইঙ্গিত দিয়েছে চীন। উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক রয়েছে জানিয়ে শহীদুল হক বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ যে উন্নয়ন করেছে সেখান থেকে চীনের অনেক কিছু শেখার রয়েছে। দুই নেতা জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে একসঙ্গে কাজ করতেও একমত হয়েছেন বলে পররাষ্ট্র সচিব জানান। তিনি বলেন, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ও তথ্য আদান-প্রদানে এমওইউ হয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের রাষ্ট্রপ্রধানের এ সফরকে সম্পর্কের নতুন যুগের সূচনা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর শুক্রবার সকালে ঢাকা পৌঁছার পর এক বিবৃতিতে শি জিনপিং বলেছেন, তার দেশ বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বলে মনে করে। পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থার সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার জন্য আমরা প্রস্তুত। তিনি বলেন, দুই দেশের সহযোগিতার সম্পর্ককে আমরা আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে চাই। চীনের প্র্রেসিডেন্ট বিকেল তিনটায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পৌঁছলে শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একান্ত বৈঠকে অংশ নেন দুই নেতা। পরে দুই দেশের প্রতিনিধিরা দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকের পর হয় চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ নীতি ধরে এগিয়ে যাওয়া চীনের সহযোগিতা সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে শি জিনপিংয়ের এ ঢাকা সফর। ১৯৮৬ সালে লি শিয়াননিয়ানের পর বাংলাদেশে আসা প্রথম চীনা রাষ্ট্রপ্রধান তিনি। তিন দশকের মধ্যে চীনের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এসেছেন শি জিনপিং। তিনি কম্বোডিয়া থেকে ঢাকায় আসেন। শি জিনপিংকে বহনকারী এয়ার চায়নার স্পেশাল ভিভিআইপি ফ্লাইট ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় শুক্রবার বেলা পৌনে বারোটার দিকে। বারোটা চার মিনিটে বিমান থেকে নেমে এলে তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ। বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি চীনের প্রেসিডেন্টের উড়োজাহাজটি বাংলাদেশের আকাশসীমায় ঢোকার পর তাকে পাহারা দিয়ে বিমানবন্দরে নিয়ে আসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর চারটি জেট ফাইটার। অবতরণের পর রাষ্ট্রীয় এই অতিথিকে ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়। লালপাড়ের সবুজ শাড়ি পরা একটি শিশু ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়ার পর লালগালিচায় হেঁটে তিনি সংবর্ধনা মঞ্চে পৌঁছান। সামরিক বাহিনীর সুসজ্জিত একটি দল এ সময় চীনের প্রেসিডেন্টকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। বাজানো হয় দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত। বিমানবন্দরে চীনা প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেনÑ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ফজলুল করিম এবং তিন বাহিনীর প্রধানগণ। চীনা প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেনÑ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় পলিটব্যুরোর (সিসিসিপিসি) সদস্য ওয়াং হুনিং ও লি ঝানশু, স্টেট কাউন্সিলর ইয়াং জেইচি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের মন্ত্রী সু সাউসি, অর্থমন্ত্রী লাউ জিউই, বাণিজ্যমন্ত্রী গাউ হুচেং, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর ঝাউ শিয়াওছুয়েন প্রমুখ। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে চীনের প্রেসিডেন্ট রওনা হন বিমানবন্দর সড়কের হোটেল লা মেরিডিয়ানের পথে। এ সফরে সেখানেই থাকবেন তিনি। তার আগমন উপলক্ষে বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনাল দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের ছবি দিয়ে সাজানো হয়। বিমানবন্দর ও হোটেল লা মেরিডিয়ানের পথে বাংলা ও ইংরেজীতে লেখা ব্যানারে দেখা যায় সম্ভাষণÑ ‘স্বাগতম হে মহামান্য অতিথি।’ চীনা প্রেসিডেন্ট এমন এক সময়ে ঢাকা এলেন, যখন বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের কাতার থেকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য শিল্পায়ন আর বিনিয়োগের জন্য মুখিয়ে আছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের রাষ্ট্রপ্রধানের এ সফরকে সম্পর্কের নতুন যুগের সূচনা বলছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শি জিনপিংও দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আশার কথা বলেছেন। চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে ঢাকা-বেজিং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গতি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বাড়বে। ২০১৫ সালে ঢাকা-বেজিং কূটনৈতিক সম্পর্কের চল্লিশ বছর পূর্তি হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ৪০ বছর কূটনৈতিক সম্পর্ক পূর্তি উপলক্ষে গত বছরই ঢাকায় আসার কথা ছিল চীনা প্রেসিডেন্টের। তবে বিভিন্ন কারণে চীনা প্রেসিডেন্টের সফর পিছিয়ে যায়। শি জিনপিং এর আগে ২০১০ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। তখন তিনি চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এদিকে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনা প্রেসিডেন্টকে ঢাকা সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। চীনা রাষ্ট্রপ্রধানের চলাচলের জন্য বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত করা হয়। হোটেল থেকে বেলা তিনটার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান চীনের প্রেসিডেন্ট। সেখানে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দুই নেতার উপস্থিতিতে সই হয় চুক্তিগুলো। এরপর চীনা প্রেসিডেন্ট হোটেলে ফিরলে সেখানে তার সঙ্গে দেখা করতে যান স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন দুই রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদ ও শি জিনপিং। সফররত প্রেসিডেন্টের সম্মানে নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। আজ শনিবার সকাল নয়টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর চীনা প্রেসিডেন্ট ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। সেখানে তিনি ব্রিকস-বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দেবেন।
×