ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জুলাইয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তহবিল ব্যয় কমেছে

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১১ অক্টোবর ২০১৬

জুলাইয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তহবিল ব্যয় কমেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি বছরের জুন মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গড় তহবিল ছিল ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর অর্থ ওই মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এক শ’ টাকা তহবিল ব্যবস্থাপনায় গড়ে ৮ টাকা ১৩ পয়সা ব্যয় করেছে। জুলাই মাসেও এ তহবিল ব্যয় একই রয়েছে। মে মাসে এ খাতে তহবিল ব্যয় ছিল ৮ দশমিক ২২ শতাংশ। তবে জুলাইয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত তহবিল ব্যয় সামান্য বেড়েছে। জুনে সমন্বিত তহবিল ব্যয় ছিল ৯ দশমিক ০৫ শতাংশ, যা জুলাইয়ে হয়েছে ৯ দশমিক ০৮ শতাংশ। বিভিন্ন কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তহবিল ব্যয় কমতে পারে। এর মধ্যে রয়েছেÑ বাজারে সুদের হারের ওঠানামা, তহবিল সংগ্রহের উৎসে সুদের হার পরিবর্তন, সংযুক্তি ও অধিগ্রহণ কার্যক্রম, হিসাব পদ্ধতির পরিবর্তন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক সুদহার ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের নবেম্বরে ভিত্তি হার পদ্ধতি নামে একটি তদারকি পদ্ধতি চালু করে, যার মূল উপাদান হচ্ছে তহবিল ব্যয় সূচক। সাধারণ ও সমন্বিত দুই পদ্ধতিতে তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় হিসাব করা হয়। এ খাতে তহবিল ব্যয় বলতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদভিত্তিক প্রাপ্ত সব তহবিল সংগ্রহের ব্যয়কে বোঝায়। আর সমন্বিত তহবিল ব্যয় বলতে, স্বল্প ব্যয়ে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে গঠিত প্রকল্প তহবিল ব্যতীত অন্যান্য সুদভিত্তিক প্রাপ্ত তহবিল সংগ্রহের ব্যয়কে বোঝায়। তহবিল ব্যয় সূচক হিসাবের ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সকল নন-ইক্যুইটি তহবিলের দায় বিবেচনায় নেয়া হয়ে থাকে। সংশ্লিষ্টরা জানান, তহবিল ব্যয় সূচক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পণ্য তথা ঋণের সুদহার নির্ধারণের একটি সূচক, যার মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদহারের নির্ধারিত সীমা জানা যায়। তহবিল ব্যয় কমলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদের হার কমবে এবং তহবিল ব্যয় বাড়লেও সুদের হারও বেড়ে যাবে। এর মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা বজায় রাখা যায়। ব্যাংকবহির্ভূত এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আগে ব্যবসার মূল ভরসা ছিল ব্যাংক আমানত। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নমনীয় নীতির কারণে তারা এখন জনসাধারণ থেকে স্বল্পমেয়াদী আমানতও সংগ্রহ করতে পারছে। এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে ব্যাংক নির্ভরতা কমিয়ে জনসাধারণ থেকে আমানত সংগ্রহে জোর দেয়ায় এ খাতে সার্বিক তহবিল ব্যয় কমছে। পাশাপাশি বিনিয়োগ স্থবিরতায় ব্যাংক থেকেও তারা তুলনামূলক কম সুদের আমানত সংগ্রহ করতে পারছে। জানা গেছে, এ খাতে তহবিল ব্যয় সূচক চালুর পর থেকেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গড় তহবিল ব্যয় কমে আসতে থাকে। এ তহবিল যখন চালু করা হয় ওই সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গড় তহবিল ব্যয় ১২ শতাংশের উপরে ছিল। তবে প্রথমবারের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গড় তহবিল ব্যয় সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসে ২০১৪ সালের নবেম্বর মাসে। এরপর গেল বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তহবিল ব্যয় সিঙ্গেল ডিজিটের নিচেই ছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের গড় তহবিল ব্যয় ফের ডাবল ডিজিট অতিক্রম করে। পরের মাস মার্চেই তহবিল ব্যয় আবার সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসে। এরপর থেকে গড় তহবিল ব্যয় সিঙ্গেল ডিজিটের নিচেই রয়েছে। এদিকে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রথমবার ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠাগুলোর সমন্বিত তহবিল ব্যয় সিঙ্গেল ডিজিটের নিচে নামে। ওই মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত তহবিল ব্যয় ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তবে গেল বছরের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত তহবিল ব্যয় ১০ শতাংশের উপরে ছিল।
×