ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাচ মিসের মহড়া বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:০১, ৮ অক্টোবর ২০১৬

ক্যাচ মিসের মহড়া বাংলাদেশের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এক ম্যাচে এত ক্যাচ মিস করলে কি আর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ থাকে? কোনভাবেই থাকে না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শুক্রবার তাই হলো। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে এক এক করে চারটি ক্যাচ মিস হলো। এক বেন স্টোকসেরই দুটি ক্যাচ মিস হয়েছে। একটি হয়েছে বেন ডাকেটের। আরেকটি ক্রিস ওকসের। ওকস শেষ মুহুর্তে ব্যাটিংয়ে নামায় কিছু করতে না পারলেও স্টোকস ও ডাকেট মিলে ইংল্যান্ডকে যেন উড়ার সুযোগ করে দিলেন। দুইজন মিলে চতুর্থ উইকেটে ১৫৩ রানের জুটি গড়লেন। আর তাতে করে ইংল্যান্ডও ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩০৯ রান করল। স্টোকসতো ওয়ানডেতে প্রথম শতকটিই পেয়ে গেলেন। ১০১ রান করলেন। আর অভিষেক ওয়ানডেতেই ৬০ রানের ইনিংস খেললেন ডাকেট। শেষে গিয়ে জস বাটলারের ব্যাট থেকে আসে ৬৩ রান। বাংলাদেশও ক্যাচ মিসের মহড়া দেখাল। ইংল্যান্ড টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। শুরুতে ৪১ রান পর্যন্ত কোন উইকেট শিকার করতে পারেননি বাংলাদেশ বোলাররা। তবে ৪১ রান হতেই যে জেমস ভিঞ্চকে (১৬) আউট করে দেন শফিউল ইসলাম; ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপ যেন ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে। মুহূর্তেই আর ২২ রান যোগ হতেই আরও ২ উইকেটের পতন ঘটে যায়। ৬১ রানে এ মুহূর্তে ইংল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন ওপেনার জেসন রয়কে (৪১) আউট করেন সাকিব আল হাসান। লং অফে রয়ের ক্যাচটি ধরেন বাংলাদেশের এ মুহূর্তের সেরা ফিল্ডার সাব্বির রহমান রুম্মন। রয় আউট হওয়ার পর রানের খাতা খোলার আগেই জোনাথন বেয়ারস্টো রান আউট হয়ে যান। রান আউটটিও করেন সাব্বির। ইংল্যান্ডকে চাপে ফেলে দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরই ঝিমিয়ে পড়ে বাংলাদেশ বোলাররা। উইকেটতো নিতেই পারেন না। উল্টো রান হতে থাকে। ওপেনার রয় ও পেস অলরাউন্ডার বেন স্টোকসকে নিয়েই আসলে ব্যাটিংয়ে ভয় ছিল। অর্ধশতক করার আগে রয়কে সাজঘরে ফেরানো গেলেও স্টোকস ঠিকই বাজিমাত করেন। ৪৫ বলেই চারটি চার ও তিনটি ছক্কা হাঁকিয়ে ৫০ রান করে ফেলেন। টি২০ স্টাইলে খেলতে থাকেন। তার সঙ্গে থাকা অভিষেক ওয়ানডে খেলা বেন ডাকেটও একই ছন্দে ব্যাট করতে থাকেন। একের পর এক রিভার্স সুইপ খেলে বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন। দুইজন মিলে ৯৭ বলেই ১০০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। দল ১৭১ রানে চলে যায়, এমন সময় ৬৯ রানে থাকেন স্টোকস। তাসকিন তার চতুর্থ ওভারটি করতে আসেন। ওভারের দ্বিতীয় বলে গিয়ে স্টোকস মিড অনে শট নেন। সেখানে ছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। একেবারে সহজ ক্যাচ। কিন্তু ধরেও মুহূর্তেই ছেড়ে দিলেন রিয়াদ। মাটিতেও লুটিয়ে গেলেন। আবার পরের ওভারেই ৭১ রানে মাশরাফির করা চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে আরেকটি ক্যাচ মিস! এবার ডিপ কাভারে মোশাররফ হোসেন রুবেল ক্যাচটি মিস করেন। মুহূর্তেই দুইবার ‘নতুন জীবন’ পেয়ে যান স্টোকস। ডাকেট কোন ‘নতুন জীবন’ ছাড়াই অবশ্য অভিষেক ওয়ানডেতেই ঝলক দেখান। ৬৩ বলে অর্ধশতক করে ফেলেন। স্টোকস এরমধ্যে ক্যারিয়ার সেরা ওয়ানডে ইনিংসও খেলে ফেলেন। এর আগে ৭৫ রান ছিল তার ওয়ানডে সর্বোচ্চ ইনিংস। দলের ১৮৩ রানের সময় ১ রান করে সেই সর্বোচ্চ ইনিংসটাকে ৭৬ এ নিয়ে যান। এরপর আরও দূর এগিয়ে যেতে থাকেন। এরমধ্যে ৫৯ রানে ডাকেটও ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ হওয়া থেকে বাঁচেন। আবার ক্যাচ মিস করেন মোশাররফ। কি যে দুরবস্থা ফিল্ডিংয়ের! ২০৮ রান হওয়ার আগেই তিনটি ক্যাচ মিস। কোথায় ১২.৩ ওভারে ৬৩ রানেই ৩ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। সেখান থেকে স্টোকস-ডাকেট মিলে দলকে শুধু বড় স্কোর গড়ার দিকেই নিয়ে যাননি, দুইজন মিলে ২৫.৩ ওভার খেলে ১৫০ রানের জুটিও গড়েন। তখন মনে হচ্ছিল সাড়ে তিন শ’ রানও করে ফেলতে পারে ইংল্যান্ড। জুটি অবশ্য আর বেশি বড় হতে পারেনি। আর ৩ রান যোগ হতেই দলের ২১৬ রানের সময় ডাকেটকে (৬০) বোল্ড করে দেন শফিউল ইসলাম। সবার মধ্যে যেন তখন স্বস্তি ফিরে আসে। অনেক চেষ্টার পর জুটিটি যে ভাঙ্গা গেল। জুটি ভাঙ্গা গেলেও স্টোকস যে সুযোগ পেয়েছেন, তা কাজেও লাগিয়েছেন। ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো শতক করে ফেলেন। ৪১তম ওভারের চতুর্থ বলে গিয়ে ১ রান নিয়ে শতক হাঁকান। টেস্টে এর আগে তিনটি শতক থাকলেও, ওয়ানডেতে কোন শতক ছিল না। এবার বাংলাদেশের মাটিতে তা হয়ে গেল স্টোকসের। আর ১ রান যোগ করতেই স্টোকসও (১০১) আউট হয়ে যান। মাশরাফির বলে ডিপ মিডউইকেটে সাব্বির ক্যাচ ধরেন। দুইবার ‘নতুন জীবন’ পেলেও এবার সাব্বির থাকায় সেই সুযোগ মিলল না স্টোকসের। দলের ২৩০ রানের সময় ১০০ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেই সাজঘরে ফেরেন স্টোকস। স্টোকস আউটের পর মনে হয়, বাংলাদেশ বোলাররা ভাল বল করলে, ফিল্ডাররা ভাল ফিল্ডিং করলে ৩০০ রানের নিচে ইংল্যান্ডকে বেঁধে রাখা যাবে। তবে বিসিবি একাদশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ষষ্ঠ উইকেটে জস বাটলার ও মঈন আলীর ১৩৯ রানের জুটির কথাও সবার মনে থাকে। এ দুইজন যদি আবার বড় জুটি করে ফেলেন, তাহলে ইংল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে ৩০০ রান জমা হওয়া কোন কঠিন ব্যাপার নয়। কিন্তু আলীকে (৬) দ্রুতই সাজঘরে ফেরান মাশরাফি। তাতেও কাজ হয়নি। বাটলার টি২০ স্টাইলে খেলে ইংল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে ৩০০ রানেই নিয়ে যান। শেষ মুহূর্তে তাসকিনের বলে তামিম-মোসাদ্দেকের ভুল বোঝাবুঝিতে ক্রিস ওকস ক্যাচ আউট হওয়া থেকে বাঁচেন। ততক্ষণে ৪৯ ওভারে ৩০৪ রান হয়ে যায় ইংল্যান্ডের। বাটলার ৩৮ বলে ৬৩ রান করতেই সাকিবের বলে আউট হয়ে যান। এরপর ১ রান যোগ হতেই ৩০৯ রানে ওকসও (১৬) আউট হন। এখানেই থেমে যায় ইংল্যান্ডের ইনিংস। তবে এ ইনিংসই যে হত না যদি ক্যাচ মিসের মহড়া না হত। বাংলাদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো ৩০০ রানের বেশি স্কোর করে ইংল্যান্ড। এরআগে ২০০৫ সালে নটিংহ্যামে ৩৯১ ও ২০১০ সালে বার্মিংহামে ৩৪৭ রানের স্কোর করেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু বাংলাদেশের মাটিতে এর আগে সাতটি ওয়ানডে খেলে কোনটিতেই ৩০০ রান করতে পারেনি ইংল্যান্ড। এবার বাংলাদেশ ফিল্ডারদের ক্যাচ মিসের মহড়ার সঙ্গে স্টোকস-ডাকেট জুটিতে উড়ন্ত ইংল্যান্ডকেই মিলেছে।
×