ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্ট্রাইপ ফ্যাশনের দুনিয়ায়

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ৭ অক্টোবর ২০১৬

স্ট্রাইপ ফ্যাশনের দুনিয়ায়

স্ট্রাইপের শার্ট বা টি-শার্ট নেই এমন পুরুষ সম্ভবত অকল্পনীয়। ফ্যাশনের এই প্যাটার্ন পুরুষদের ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত হলেও নারী-শিশুরা পিছিয়ে নেই। বয়স, দেশ, কাল, জাতি- সবকিছুর উর্ধে উঠে স্ট্রাইপ মোটিফ এখন ইউনিভার্সাল প্যাটার্ন হিসেবে ফ্যাশন জগতে জায়গা করে নিয়েছে। স্পোর্টস, অফিস, পার্টি, ফরমাল, ক্যাজুয়াল- সবকিছুতেই সমান মানানসই এই ধরনের পোশাক। ঠিক কখন থেকে এ পোশাকের প্রচলন শুরু হয় তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ফ্যাশনের রঙিন দুনিয়ায় স্ট্রাইপের প্রচলনের ইতিহাস মোটেও ইতিবাচক ছিল না। মধ্যযুগে দন্ডিত আসামি, দেহব্যবসায়ী অর্থাৎ যাদের সমাজচ্যুত কিংবা অচ্ছুত মনে করা হতো, তাদেরই পরানো হতো সাদাকালো স্ট্রাইপের পোশাক। এ নিয়ে ফ্রেঞ্চ ঐতিহাসিক মিশেল প্যাস্টোউরিয়া তার ‘দ্য ডেভিল’স ক্লোদ আ হিস্ট্রি অব স্ট্রাইপস’ নামে একটি বইতে লিখেছেন, স্ট্রাইপের পোশাক পরার জন্য ফ্রেঞ্চ এক মুচিকে ১৩১০ সালে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়। কারণ, এই পোশাককে তখন শয়তানের পোশাক বলে মনে করা হতো। ১৮০০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েদিদের পোশাক হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে সাদা-কালো স্ট্রাইপের পোশাক। যদিও তা সীমিত হয়ে এসেছে। এরপর সাদার ওপর নেভি ব্লু স্ট্রাইপের প্যাটার্নটি মূলত পরতো নাবিকরা। ফরাসী উপকূলের ব্রেত অঞ্চলের নাবিকদের হাত ধরে এই পোশাকের প্রচলন শুরু হয়। ১৮৪৬ সালে রানী ভিক্টোরিয়া তাঁর চার বছরের ছেলে আলবার্ট এডওয়ার্ডকে এই স্ট্রাইপের সেইলর স্যুট পরিয়ে দেন। ধারণা করা হয়, এর মাধ্যমেই শিশুদের গায়ে প্রথম উঠে আসে স্ট্রাইপের পোশাক। ফ্যাশন জগতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্ট্রাইপের পদার্পণ হয় ডিজাইনার গ্যাব্রিয়েল কোকো শ্যানেলের মাধ্যমে। ফরাসী উপকূল ভ্রমণের সময় তিনি নাবিকদের গায়ে নেভি ব্লু স্ট্রাইপের সাদা পোশাক দেখে উজ্জীবিত হন এবং ১৯১৭ সালে তাঁর নতুন কালেকশন নটিক্যাল স্ট্রাইপ বাজারে আনেন। এর মাধ্যমেই জল থেকে স্থলে উঠে আসে নেভি ব্লু স্ট্রাইপের সাদা পোশাক। সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ব্লেজারের নিচে এই ধরনের শার্ট পরতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে এটি শিল্পীদের কাছে জনপ্রিয় হতে থাকে। পাবলো পিকাসো এবং এন্ডি ওয়ারহলের মাধ্যমে পুরুষ মহলে স্ট্রাইপ জনপ্রিয়তা লাভ করে। এদিকে ১৯৫০ সালে মেরিলিন মনরো, আন্দ্রে হেপবার্নের হাত ধরে চলে আসে নারীর ফ্যাশনেও। ষাট-সত্তরের দশকে স্ট্রাইপের পোশাক হয়ে ওঠে বিদ্রোহের প্রতীক। সাধারণত জন লেননের মতো বিপ্লবী তারকাদের গায়ে দেখা যেত এই স্টাইলের পোশাক। এরপর ফ্যাশন ডিজাইনারদের হাত ধরে স্ট্রাইপ পুরুষদের ফরমাল পোশাকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। প্রথম দিকে কয়েকটি নির্দিষ্ট রঙের স্ট্রাইপের জনপ্রিয়তা থাকলেও এখন অজস্র রঙের, নানা আকারের স্ট্রাইপের ব্যবহার হচ্ছে পোশাকে। যারা নিজেদের আরও লম্বা দেখাতে চায়, তাদের লম্বালম্বি স্ট্রাইপের পোশাক পরার পরামর্শ দেয়া হয়। একসময় ধারণা করা হতো, মোটা স্ট্রাইপের চেয়ে চিকন স্ট্রাইপই বেশি স্টাইলিশ। আবার রঙের বিন্যাসেও একসময় সবাই খুব সচেতন থাকত। দেখা যেত, বেশিরভাগ সময় সাদা-কালো-নীল এসব প্রচলিত রঙের স্ট্রাইপ নিয়েই বেশি কাজ হচ্ছে। ফ্যাশন জগতে এখন এসেছে প্রথা ভাঙার চল। প্রায় সব বড় ফ্যাশন হাউসই এ নিয়ে নতুন নতুন কাজ এনেছে। কলেজ-ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের জন্য রাজধানীর নিউ মার্কেট, নূরজাহান মার্কেট, আজিজ সুপার মার্কেটসহ অন্যসব শপিংমলগুলোতে পাওয়া যাবে স্ট্রাইপের পোশাক। এছাড়া একটু বেশি দাম দিয়ে কিনতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে যমুনা ফিউচার পার্ক মার্কেট কিংবা বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স মার্কেটে। এছাড়া আরও রয়েছে ইয়ালো আর ট্রেন্ডের মতো ফ্যাশন হাউস। ঝলমলে রঙিন এসব স্ট্রাইপের পোশাকের সঙ্গে স্নিকারস গলিয়ে ভ্রমণে যাওয়া হতে পারে, কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে কোন আড্ডায় হাজির হওয়া যায়। ২০১৬ সালে এসেও এই মোটিফের পোশাক একই সঙ্গে অফিস আদালত, পার্টি, ভ্রমণ- সর্বত্র সমানভাবে জায়গা করে নিয়েছে।
×