ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কলেজ মহিলা হ্যান্ডবল ॥ ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের রাইদার অভিমত

দুইদিনের অনুশীলনে আমরা চ্যাম্পিয়ন

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২ অক্টোবর ২০১৬

দুইদিনের অনুশীলনে আমরা চ্যাম্পিয়ন

রুমেল খান ॥ বাংলাদেশের স্কুল পর্যায়ে মেয়েদের হ্যান্ডবল মানেই ভিকারুননিসা নূন স্কুলের দাপট। সেই দাপট তারা দেখাচ্ছে কলেজ পর্যায়েও। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তারা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দীর্ঘ চার বছর পর আয়োজিত ‘ট্রিট কলেজ মহিলা হ্যান্ডবল’ আসরেও। জাতীয় হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে তারা ৯-৬ গোলে হারায় সর্বশেষ ২০১২ সালের চ্যাম্পিয়ন ইডেন মহিলা কলেজকে। ম্যাচে ভিকারুননিসার রাইদা আশরাফুন ওমর করে ব্যক্তিগত সর্বাধিক ৪ গোল। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও হয় সে। কথা হয় বিজয়ী দলের সুর্দশনা ৫ নম্বর জার্সিধারী রাইদার সঙ্গে। ঢাকা নিবাসী ব্যবসায়ী বাবা এসএম ওমর ফারুক এবং ধানম-িতে অবস্থিত প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপিকা মা শামীমা হকের তিন মেয়ের সবচেয়ে ছোটজন রাইদা। ‘আমার হ্যান্ডবল ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত যত শিরোপা জিতেছি (৫টি), সেগুলোর সবই স্কুল পর্যায়ে (ভিকারুননিসা), তবে কলেজ পর্যায়ে এটাই আমার প্রথম দলীয় শিরোপা। এজন্য এই শিরোপা জেতার গুরুত্ব এবং আনন্দ দুটোই আমার কাছে অসীম।’ রাইদার উচ্ছ্বাস। আগের চ্যাম্পিয়ন ইডেন কলেজকে হারানোর ব্যাপারে কতটা আত্মবিশ^াস ছিল? ‘শুনলে বিশ^াস করবেন না, কোচ জাহিদ স্যারের অধীনে এই টুর্নামেন্টে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আমরা মাত্র দুইদিন সময় পেয়েছি অনুশীলনের জন্য! অন্য কলেজগুলো তো সারা বছরই অনুশীলন করে। তারপরও আমাদের শিরোপা জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ^াসের কোন কমতি ছিল না। চ্যাম্পিয়ন হতে আমরা মরিয়া ছিলাম। পরিকল্পনা ছিল প্রতিপক্ষকে সহজে ছেড়ে দেব না। শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব। খুব ভাল লাগছে আমাদের চেষ্টা সফল হয়েছে বলে।’ রাইদার ভাষ্য। ইডেনকে হারানোর আরও একটা গোপন রহস্য ফাঁস করে রাইদা, ‘ইডেনের সবচেয়ে ভাল খেলোয়াড় রূপা হাবীবা। তাকে আমরা বোতলবন্দী করে রেখেছিলাম বলেই তারা বেশি গোল করতে পারেনি।’ ২০০৮ সালে যখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে, তখন রাইদা হ্যান্ডবল খেলা শুরু করে। ‘শুরুতে এত ভাল খেলতাম না। ক্লাস এইটে ওঠার পর থেকেই আমার খেলায় উন্নতি ঘটে।’ হ্যান্ডবল ছাড়া আর অন্য কোন খেলা খেলে না রাইদা, ‘এ খেলাটি খেলে এবং গোল করে যে আনন্দ পাই, সেটা অন্য কোন খেলাতে পাই না। যতদিন পারি হ্যান্ডবল খেলে যাব। সহজে ছাড়ব না এ খেলাটি। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখি।’ জাতীয় দলের খেলোয়াড় ডালিয়া আক্তারকে নিজের আদর্শ মনে করে রাইদা। এছাড়া মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের মেয়ে রাইদা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে সাবেক জাতীয় হ্যান্ডবলার ইরা বেগম লিপির নামটিও, ‘তার জন্যই আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন।’ স্কুল পড়ার সময় বিদেশী স্কুলভিত্তিক টুর্নামেন্ট এবং প্রীতিম্যাচ খেলতে এ পর্যন্ত সুইডেন, নেপাল, ভারত এবং থাইল্যান্ড সফর করেছে রাইদা, ‘সুইডেনের টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্বে ২টি ম্যাচে জিতেছি। কিন্তু বাকি ম্যাচগুলোতে হেরে নকআউট পর্বে যেতে পারিনি। বাকি দেশগুলোতে গিয়ে প্রীতিম্যাচ খেলেছি। নেপালে ৩ ম্যাচের সবকটিতেই জিতি। ভারতে ২ ম্যাচের ১টিতে এবং থাইল্যান্ডেও ২ ম্যাচের ১টিতে জিতেছিলাম।’ সবশেষে বাংলাদেশের মহিলা হ্যান্ডবলের ভবিষ্যত সম্পর্কে রাইদারই কথা- এখন যেভাবে চলছে, তার চেয়ে আরও ব্যাপক পরিসরে দেশজুড়ে হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা উচিত হ্যান্ডবল ফেডারেশনের। বেশি করে হ্যান্ডবলে এগিয়ে আসা উচিত পৃষ্ঠপোষকদের। তাহলেই মেয়েদের হ্যান্ডবল এগিয়ে যাবে উন্নতির দিকে। দেশের গ-ি পেরিয়ে একসময় এদেশের মেয়েরা সফল হবে বিদেশের মাটিতেও।
×