ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৯/১১ আইনের ‘পরিণতি ভয়াবহ’

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১ অক্টোবর ২০১৬

৯/১১ আইনের ‘পরিণতি ভয়াবহ’

২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বরের হামলায় হতাহতদের আত্মীয়-স্বজনকে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমতি দিয়ে যুুক্তরাষ্ট্রে পাস হওয়া এক আইনের ‘পরিণতি ভয়াবহ’ হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে সৌদি আরব। এতে দীর্ঘদিনের দু’মিত্র দেশের মধ্যে উত্তেজনা বড় মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে, মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরা আইনটির বিষয়ে সন্দেহ ব্যক্ত করে বলেছেন, বিদেশে আমেরিকানদের ওপর নতুন এ আইনের প্রভাব নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগ প্রশমিত করতে এর আওতা সংকুচিত করা যেতে পারে। খবর বিবিসি, এএফপি ও ইয়াহু নিউজের ঐ আইন জাস্টিস এ্যাগেইনস্ট স্পন্সরস অব টেররিজম এ্যাক্টের (জাস্ট) ওপর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দেয়া ভেটো মার্কিন কংগ্রেস বিপুল ভোটাধিক্যে খারিজ করার পর সৌদিরা যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিল। জাস্টটায় ওই সন্ত্রাসীরা হামলায় বেঁচে যাওয়া লোকজন এবং হতাহতদের আত্মীয়-স্বজনকে বিদেশী সরকারের বিরুদ্ধে মার্কিন ফেডারেল আদালতে মামলা করার অনুমতি দেয়া হয়। যদি এরূপ সরকারগুলো মার্কিন ভুখ-ে হামলার জন্য কিছু মাত্রাতে দায়ী বলে প্রমাণিত হলে তাদের কাছে বাদীরা ক্ষতিপূরণও দাবি করতে পারবেন। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্রে আইনটির বিপর্যয়কর ও বিপজ্জনক পরিণতি রোধের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন এক মুখপাত্র বলেন, আইনটি বড় উদ্বেগের উৎস। সরকারী সৌদি প্রেস এজেন্সি একথা জানায়। তিনি বলেন, এ আইন রাষ্ট্রসমূহের দায়মুক্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশের ওপর এক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিজ্ঞতারই জয় হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। আইনটির বিরোধিতা করতে গিয়ে ওবামা বলেন, সার্বভৌমের দায়মুক্তিকে দুর্বল করে দিয়ে এটিও মার্কিন স্বার্থের ক্ষতি করবে। কারণ এর ফলে বিদেশে মার্কিন সামরিক মিশনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বেসরকারী লোকজন মামলা করতে পারবেন। সৌদি আরবের উপসাগরীয় মিত্ররাও আইনটির সমালোচনা করেছে। এর আগে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দেন যে, কংগ্রেসের ঐ পদক্ষেপের পর সৌদি আরব তার দীর্ঘদিনের মিত্র ওয়াশিংটনের সঙ্গে মূল্যবান নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সহযোগিতা হ্রাস করতে পারে। তারা বলেন, এরূপ সহযোগিতা হ্রাস করা রিয়াদের হাতে থাকা উপায়গুলোর অন্যতম। সৌদি আমেরিকান পাবলিক রিলেশন এ্যাফেয়ার্স কমিটির প্রধান সালমান আর আনসারি বলেন, বিলটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুতর সামরিক পরিণতি ডেকে আনবে বলে আমি শঙ্কিত। আনসারি বলেন, এ অংশীদারিত্ব যুক্তরাষ্ট্রকে নিখুঁত গোয়েন্দা তথ্য প্রদানে এবং হামলা নিবৃত্ত করতে সহায়ক হয়েছিল। সৌদি তেলের বিনিময়ে মার্কিন নিরাপত্তার ভিত্তিতে রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কয়েক দশক ধরে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বর হামলা চালিয়েছিল এমন বিমান ছিনতাইকারীর ১৯ আল কায়েদা সদস্যের মধ্যে ১৫ জনই ছিল সৌদি নাগরিক। এ হামলায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ মার যান। রিয়াদ ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করে। গালফ রিসার্চ সেন্টারের সিনিয়র উপদেষ্টা মোস্তাফা আলানি সৌদি মার্কিন মৈত্রী পর্যালোচনা করার পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আপনাদের আর্থিক বিনিয়োগ কমাতে হবে। আপনাদের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা হ্রাস করতে হবে। এদিকে, প্রেসিডেন্টের ভেটো খারিজ করার একদিন পর বৃহস্পতিবার সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান নেতারা ‘জাস্টা’ আইন সংশোধনের পথ খুলে দেন। সিনেটর মেজরিটি লিডার মিচ ম্যাককোনেল সাংবাদিকদের বলেন, আমি মনে করি এটি নিয়ে আরও আলোচনার সুযোগ রয়েছে। জাস্টার সম্ভাব্য পরিণতি থাকতে পারে বলে তিনি স্বীকার করেন। প্রতিনিধি পরিষদের স্পীকার পল রায়ান বলেন, বিশেষত মার্কিন সৈন্যদের রক্ষা করতে কংগ্রেসকে আইনটির সংস্কার করতে হতে পারে। ৯/১১ ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন বিলটি পাস করার পদক্ষেপকে স্বাগত জানান।
×