ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

পথের দুর্ভোগ এবং স্বস্তির ঈদ

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পথের দুর্ভোগ এবং স্বস্তির ঈদ

বরাবরের মতো এবারও ঈদের আগে মহাসড়কগুলোয় দীর্ঘ যানজটের কারণে ঘরমুখো মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। প্রতি ঈদে বাড়িফেরা এবং ঈদ শেষে কর্মস্থলে আসা মানুষের সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈদের আগের দিন ট্রেনে যাত্রীদের এতটাই ভিড় ছিল যে, টিকেট থাকা সত্ত্বেও ভিড়ের কারণে বহু যাত্রী তার নির্ধারিত আসনে বসতে পারেননি। ফলে চিড়ে-চেপটা হয়ে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না অনেকের। এবারও বিপুলসংখ্যক যাত্রীকে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করতে দেখা গেছে। বাস-লঞ্চেও চাপ ছিল বেশি। ফিরতি পথেও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। অথচ রাস্তার দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতিই ছিল দৃশ্যমান। রেলপথ ছাড়া বাকি সব যাত্রা পথেই ভোগান্তি আর ভোগান্তি। ফেরি স্বল্পতা, নদীতে তীব্র স্রোত ও দুটি ঘাট বন্ধ থাকায় পাটুরিয়া ফেরিঘাটে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে যাত্রীরা। নদীতে স্রোত বেশি থাকায় পাটুরিয়া থেকে যানবাহন বোঝাই করে দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছাতে অধিক সময় লেগেছে। অপরদিকে দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট ছিল দৃশ্যমান। ফলে রাস্তায় আটকা পড়তে হয় অসংখ্য মানুষকে। প্রকৃতিও এবার কম বিরূপ ছিল না। প্রকৃতিও যেন বাদ সেধেছে ঈদ আনন্দ উদযাপনে। বরাবরের মতো এবারও লাখ লাখ লোক গ্রামের বাড়িতে গেছেন পরিবারসহ। তবে এ কথা সত্য দুর্ভোগ চরমে থাকলেও কাউকে ঈদ রাস্তায় করতে হয়নি। যথারীতি যারা গ্রামের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন তারা যার যার গ্রামেই ঈদ করেছেন, কোরবানি দিয়েছেন। ঈদকে সামনে রেখে লাখ লাখ মানুষ কয়েকদিনের ব্যবধানে ঢাকা ছাড়ে আবার ঢাকায় ফিরে। কারণ ঢাকার বেশিরভাগ মানুষের শিকড় গ্রামে। এবার কোরবানি ঈদের ছুটি শুরু হয় ১২ সেপ্টেম্বর থেকে। ঘরমুখো বেশিরভাগ মানুষই দীর্ঘ ছুটি পায়। ছুটি দীর্ঘ হওয়ার পরও ঈদের আগের কয়েকদিন ব্যাপক চাপ পড়ে রাস্তাঘাটে। এমনিতেই কোরবানির ঈদে দুই দিক থেকেই রাস্তার ওপর চাপ থাকে। এক দিকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরমুখী পশুবাহী গাড়ির চাপ। অপরদিকে, রাজধানী থেকে ঘরমুখো মানুষের চাপ। এবার সেই ভোগান্তি আরও তীব্র হয়ে উঠেছিল। ঈদ-উল-আযহা উদযাপনের সময়টিতে সারাদেশে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোন অঘটনের কথা শোনা যায়নি। এটা স্বস্তির কথা হলেও ঈদের দু’দিন আগে দেশের মানুষ যখন উৎসব পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন সময় টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীতে একটি প্যাকেজিং কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে ৩৫ জন মারা গেছেন। তাদের পরিবারের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। ঈদে ঘরেফেরা এবং ঈদের পর কর্মস্থলে ফেরার সময় দুর্ঘটনায় প্রতিবছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ হতাহত হয়। এবারও সারাদেশে কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এসব দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও উল্লেখ করার মতো। গতকালও সড়ক দুর্ঘটনায় ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় ৮ জন এবং টাঙ্গাইলে ৫ জন মারা গেছে। ঈদে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণই ছিল। রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা করা হলেও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সতর্ক ও সোচ্চার থাকায় সে ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। এবারও রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ মোটামুটি ভালভাবেই সম্পন্ন হচ্ছে। সবমিলিয়ে এবারের সাফল্য অনেক বেশি। পথের বিরক্তি বাদ দিলে স্বস্তির ঈদ উদযাপন হয়েছে বলা যায়। চলাচলের মাধ্যমগুলোর যথাযথ সংস্কার, পরিবহন সঙ্কটের সমাধান ও সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে আগামীতে পথের এই বিরক্তি দূর করা সম্ভব।
×