ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সব ধরনের ফুটবল ছাড়ছেন রোনাল্ডিনহো

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সব ধরনের ফুটবল ছাড়ছেন রোনাল্ডিনহো

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ব্রাজিল জাতীয় দলের জার্সি গায়ে সবশেষ খেলেছেন ২০১৩ সালে। আনুষ্ঠানিক অবসর না নিলেও ক্লাব ফুটবল চালিয়ে যাচ্ছিলেন রোনাল্ডিনহো। অবশেষে সব ধরনের ফুটবল থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ২০০২ সালের বিশ্বকাপ জয়ী এই এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। বৃহস্পতিবার ৩৬ বছর বয়সী রোনাল্ডিনহো জানিয়েছেন, চলতি মৌসুম শেষে আগামী বছর পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেবেন তিনি। ২০১৪ সালে ব্রাজিলের ক্লাব এ্যাটলেটিকো মিনেইরো থেকে বিদায়ের পর থেকেই ফুটবল বিশ্বে অনিয়মিত হয়ে পড়েন রোনাল্ডিনহো। দীর্ঘ সময় খেলে যাওয়ার মতো কোন ক্লাব খুঁজে পাচ্ছেন না এক সময় মাঠ কাঁপানো এই তারকা। গত দুই বছর অল্প সময়ের জন্য খেলেছেন মেক্সিকোর কুয়েরেটারো ও ব্রাজিলের ফ্লুমিনেন্সে। ২০১৫ সালে ফ্লুমিনেন্স থেকে বিদায়ের পর নতুন চুক্তিও করেননি কোন ক্লাবের সঙ্গে। বুটজোড়াও তুলে রাখার সময় চলে এসেছে বলে মনে করছেন স্বয়ং রোনাল্ডিনহো। নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমি এখন বুড়ো হয়ে গেছি। ৩৬ বছর বয়স চলছে। এখন তো আর ২৬ বছর বয়সীদের মতো খেলতে পারি না। কীভাবে শেষটা টেনে দেয়া যায় ভাবছি। আর এক বছরের মতো খেলার ইচ্ছা আছে। প্রিয় ফুটবল ছাড়ার পর কি করবেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রোনাল্ডিনহো বলেন, আমি সঙ্গীত আর ফুটবলের দারুণ কিছু প্রকল্পে জড়িয়ে আছি। আপনারা তো জানেন, এই দুটিই আমার সব ভালবাসা। করতে ভাল লাগে এমন নতুন যে কোন কিছুই আমি করতে মুখিয়ে ছিলাম। দেখা যাক এ বছরে কী করতে পারি। বর্ণিল ফুটবল ক্যারিয়ারে প্রায় সব সাফল্যই পেয়েছেন রোনি। ২০০২ সালে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে জিতেছেন বিশ্বকাপ। ২০০৬ সালে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সিলোনার হয়ে জিতেছেন ইউরোপ সেরার লড়াই চ্যাম্পিয়ন্স লীগ। ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারও পেয়েছেন টানা দুই বছর। একমাত্র আক্ষেপ ছিল দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতায়। ২০১৩ সালে এ্যাটলেটিকো মিনেইরোর হয়ে জিতেছেন সেই কোপা লিবার্টোডোরেস শিরোপাও। এখন পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকজন ফুটবলার জিততে পেরেছেন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ও কোপা লিবার্টোডোরেস শিরোপা। স্বপ্নীল ক্যারিয়ারে ব্রাজিলের হয়ে ১৯৯৯-২০১৩ সাল পর্যন্ত খেলেছেন। সেলেসাওদের হয়ে শততম ম্যাচ খেলতে না পারার আক্ষেপ আছে রোনাল্ডিনহোর। খেলেছেন ৯৭ ম্যাচ। গোল করেছেন ৩৩। রোনাল্ডিনহো ২০০৩ সালে যোগ দিয়েছিলেন বার্সিলোনায়। ওই সময় নিদারুণ দুঃসময় চলছিল নুক্যাম্পে। চারদিকে বিরাজ করছিল হতাশা আর ঘোর অমানিশা। স্প্যানিশ এ জায়ান্টের দুঃখ ঘোচাতেই যেন ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন রোনি। তার আবির্ভাবেই আমূলে পাল্টে যায় দুর্দশাগ্রস্ত বার্সার চেহারা। স্বপ্নের ফর্ম দেখিয়ে ২০০৫ ও ২০০৬ সালের লা লিগা জেতানোর পাশাপাশি জয় করেন ২০০৬ সালের ইউরোপ সেরা ট্রফি চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা। দুর্দান্ত এই ফুটবল নৈপুণ্যের সময় পরপর দু’বার ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হন। কিন্তু রোনির দুঃসময়টা ভর করে ২০০৬ জার্মান বিশ্বকাপ থেকে। অসাধারণ ফর্ম নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে পুরো দলের মতো নিজেও খেই হারিয়ে ফেলেন। পাশাপাশি ইনজুরি আর বেপরোয়া জীবন ধীরে ধীরে তলানিতে ফেলে দেয় রোনাল্ডিনহোকে। অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের মাশুল তিনি হাড়ে হাড়ে টের পেতে থাকেন। সে সময় রোনাল্ডিনহোর কর্মকা- পল গাসকায়েন আর জর্জ বেস্টের নষ্ট চরিত্রের কথাই সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল। তার পর থেকে আর নিজেকে সেরাটা ফিরে পাননি। বিষয়টি বুঝতে পেরেই হয়ত তল্পিতল্পা গুছিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
×