ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফেডেরারের বাজি জকোভিচ

প্রকাশিত: ১৯:০২, ২৬ আগস্ট ২০১৬

ফেডেরারের বাজি জকোভিচ

অনলাইন ডেস্ক ॥ নাটকীয় হতে পারত, কিন্তু হল না! বছরের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম য়ুক্তরাষ্ট্র ওপেনে ছেলে ও মেয়েদের সিঙ্গলসে শীর্য বাছাই সেই জকোভিচ আর সেরিনা। ছেলে ও মেয়েদের টেনিসে বিশ্বের এক নম্বরদ্বয়। হাফডজন বারের যুক্তরাষ্ট্র ওপেন চ্যাম্পিয়ন সেরিনা এই নিয়ে টানা পাঁচ বার নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড স্ল্যামে শীর্ষ বাছাই হলেন। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর সেরিনার হাতে চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি উঠলেই কৃষ্ণাঙ্গী মার্কিন কিংবদন্তি হয়ে যাবেন টেনিসের ওপেন যুগের সর্বাধিক গ্র্যান্ড স্ল্যামের (২৩) মালকিন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ওপেন শুরুর ঠিক আগে খুব বরাত জোরে সেরিনার শ্রেষ্ঠত্ব বড় একটা ধাক্কা খাওয়া থেকে বেঁচে গিয়েছে। সেটা ঘটলে তিনি একইসঙ্গে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরের আসন আর চার বছর পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে শীর্ষ বাছাইয়ের মর্যাদা হারাতেন। কী সেটা? যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের অন্যতম প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট সিনসিনাটি ওপেন ফাইনালে গত রবিবার জার্মানির কের্বার জিতলেই তিনি ডব্লিউটিএর র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরিনাকে দ্বিতীয় স্থানে নামিয়ে নিজে শীর্ষস্থান দখল করে নিতেন। সে ক্ষেত্রে চলতি সপ্তাহের সোমবার প্রকাশিত সর্বশেষ বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনেও শীর্ষ বাছাই হয়ে যেতেন কের্বার। কিন্তু তিনি সিনসিনাটি ফাইনালে অভাবিত হারায় সেরিনা ‘বেঁচে’ যান। কের্বারকে র‌্যাঙ্কিংয়ে দুই আর যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে দ্বিতীয় বাছাই হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। ছেলেদের বিভাগে বিশ্বের এক আর দুই নম্বরই যথাক্রমে শীর্ষ আর দ্বিতীয় বাছাই। গত বারের যুক্তরাষ্ট্র ওপেন চ্যাম্পিয়ন জকোভিচ আর সদ্য অলিম্পিক্সে নিজের সোনার পদক অটুট রাখা অ্যান্ডি মারে। তবে মেয়েদের প্রথম দশ বাছাইয়ের মধ্যে যেখানে প্রথম তিন আর দুই বর্ষীয়ান ভেনাস ও কুজনেৎসোভা, মাত্র পাঁচ জন গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী, সেখানে ছেলেদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা অনেক বেশি। প্রথম দশ বাছাইয়ের মধ্যে চার জন শুধু প্রাক্তন যুক্তরাষ্ট্র ওপেন চ্যাম্পিয়ন-ই। এ ছাড়াও পাঁচ জনের গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব আছে। ফলে এ বার নিউইয়র্কে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের চ্যাম্পিয়নশিপ লড়াই বেশি দেখার সম্ভাবনা। যদিও চোটে নেই টেনিসের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী ফেডেরার-ই! যদিও দিনের শেষে সেই জকোভিচ আর সেরিনার দিকেই আগামী দু’সপ্তাহ চোখ থাকবে টেনিসমহলের। জকোভিচ ২০১৫-র গোড়া থেকে গত ২০ মাসে হওয়া সাতটা গ্র্যান্ড স্ল্যামের পাঁচটা জিতেছেন। এই সময়ের মধ্যে টেনিসের জোকারের পেশাদার ট্যুরে খেতাবের সংখ্যা ১৮। যার মধ্যে ৭টা চলতি বছরে। ২৯ বছরের সার্বিয়ান মহাতারকা গত জুনে ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়ন হয়ে রড লেভারের ৪৭ বছরের পর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা চারটে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় আর নিজের কেরিয়ার স্ল্যাম পূর্ণ করে বলেছিলেন, আমি সত্যিই মনে করি পৃথিবীতে এমন কিছু নেই যা মানুষের পক্ষে পাওয়া সম্ভব নয়!’’ বোঝাতে চেয়েছিলেন, নিজেকে সর্বকালের সেরা টেনিস প্লেয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু সে মাসেই উইম্বলডনে আচমকা হার আর সদ্য রিও অলিম্পিক্সে পদকহীন থাকার জেরে জকোভিচের শ্রেষ্ঠত্ব এই মুহূর্তে মারের চ্যালেঞ্জের সামনে। যে মারে উইম্বলডন আর অলিম্পিক্স চ্যাম্পিয়ন হয়ে এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনেও হটফেভারিট। যদিও এ দিনই ফেডেরার বলেছেন, ‘‘মারে এ বছর অনবদ্য খেললেও যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে আমার বাজি নোভাক। যতই ও রোলাঁ গারোয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকে মাত্র সাতটা সিঙ্গলস ম্যাচ খেলে কম ম্যাচ প্র্যাকটিসে থাক। তার মধ্যেই ও কিন্তু টরন্টোয় কানাডা ওপেন জিতেছে। তা ছাড়া হার্ডকোর্টে ও বরাবর অন্য সব সারফেসের চেয়ে ভাল খেলে। তার উপর আর্থার অ্যাশ সেন্টার কোর্টের নতুন ছাদ আমার মতে নোভাকের খেলার স্টাইলকে সাহায্য করবে। এ রকমই আচ্ছাদন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে সেন্টার কোর্টে আছে। আর ওখানে ও ছ’বার জিতেছে। নোভাকের বারোটা গ্র্যান্ড স্ল্যামের অর্ধেকই মেলবোর্নে পাওয়া।’’ মেয়েদের বাছাই তালিকা প্রকাশের পর আবার হঠাৎ-ই সেরিনার পাশাপাশি তাঁর দু’বছরের বড় দিদি ভেনাস উইলিয়ামসকে নিয়ে জোর চর্চা চলছে। পাঁচ বছর আগে ফ্লাশিং মেডোতেই দ্বিতীয় রাউন্ড ম্যাচ ওয়াকওভার দিয়ে সজল চোখে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ভেনাস। মিডিয়াকে এই সংবাদ দিয়ে যে, তিনি এনার্জির অভাবজনিত স্নায়ুরোগে ভুগছেন। যা তাঁর কেরিয়ারে দ্রুত যবনিকা টেনে আনতে পারে। কিন্তু ২০১৬-তেও ভেনাস শুধু ক্রীড়সূচিতে আছেন-ই নন, ষষ্ঠ বাছাই-ও। সেরিনার পরে সেরা মার্কিন বাছাই। যাঁর এটা ১৮তম যুক্তরাষ্ট্র ওপেন। অথচ নিজের ৯টা গ্র্যান্ড স্ল্যামের শেষটা এসেছে আট বছর আগে। তবু সাতানব্বইয়ে জীবনের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ওপেনেই ফাইনাল খেলা টিনএজার ভেনাস ২০১৬-তে ছত্রিশের বর্ষীয়ান হিসেবে উইম্বলডন সেমিফাইনাল খেলেছেন গত মাসেই। এবং মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে তিনিও একজন খেতাবের দাবিদার। ‘‘আমি যে টুর্নামেন্ট, যে ম্যাচ-ই খেলি, সব সময় মনে করি গেমটা আমার কব্জায় আছে। এটা আমার টেনিসের একটা প্লাস,’’ বলছেন ভেনাস। ক্রিস এভার্ট মনে করছেন, ভেনাসের পক্ষে এই বয়সে, শারীরিক সমস্যা সামলে দু’সপ্তাহে সাতটা ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া যদিও খুব কঠিন। সঙ্গে অবশ্য এভার্ট এ-ও বলেছেন, ‘‘কিন্তু ওর খেলাটা খুব ইকনমিক্যাল। প্রতিটা পয়েন্ট জিততে ঠিক যতটুকু পরিশ্রম করা দরকার ঠিক ততটুকুই করে। আর সেটাই ওর শরীরকে এখনও দারুণ ভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ওপেনেও সেটার কোনও পরিবর্তন ঘটবে না।’’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×