ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চর্যানৃত্য ॥ শেকড়ের সন্ধানে

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ২৫ আগস্ট ২০১৬

চর্যানৃত্য ॥ শেকড়ের সন্ধানে

বাঙালী ও বাংলাভাষার ইতিহাস, ঐতিহ্য বহুপ্রাচীন। যুগে যুগে এর নবনব অধ্যায়ের আবিষ্কার বাংলাভাষা ও জাতিকে নতুন নতুন শিকড়ের সন্ধান দিয়েছে। একাধিক বার চেষ্টার পর ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে চর্যাপদের একটি খ-িত পুঁথি উদ্ধার করেন। খ্রিস্টীয় ৮ম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত (অবশ্য মতপার্থক্য রয়েছে) এই গীতিপদাবলী মূলত বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন। চর্যাপদের রচয়িতা ছিলেন সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ। বাংলা সাধন সঙ্গীতের সূচনা হয়েছিল এই চর্যাপদ বা গীতি থেকে। বৈষ্ণবপদাবলী, বাউল গান, সুফি মুর্শিদি গান, নাথপন্থি দেহযোগী গান সবই চর্যসঙ্গীতের উত্তরসূরি। পদ সৃষ্টির ভাষা ছিল প্রতœ-বাংলা-আসামি-উড়িয়া-মৈথলি ভাষা। যে কারণে অসমি উড়িয়া ও মৈথলিরাও তাদের আদি নিদর্শন হিসেবে চর্যপদকে উল্লেখ করে। মূলত বাংলায় মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বে ব্রাহ্মণ ও হিন্দু সমাজের অত্যাচারে ভীত হয়ে বৌদ্ধগণ তাদের পুঁথিপত্র নিয়ে নেপাল, ভুটান ও তিব্বতে পালিয়ে যান। ১০৯ বছর পূর্বে চর্যাপদের পুঁথি আবিষ্কারের মাধ্যমে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যে শিকড়ের সন্ধান আমাদের দিয়েছিলেন, সেই চর্যগানের সুর ও নৃতের তামিল দিতে এবার নেপাল থেকে ঢাকায় এসেছেন চর্যানৃত্যগুরু চন্দ্রমান মনিকর। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে শিল্পকলার আদি নিদর্শন থেকে নৃত্যকলা শেখাতে ২০ দিনে একটি কর্মশালায় প্রশিক্ষণ দিচেছন তিনি। নৃত্য বিয়ক এ কর্মশালার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি সংস্কৃত মন্ত্রি আসাদুজ্জামান নূর, এম পি এবং সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। চর্যানৃত্য এবং বাংলাদেশে আসা সম্পর্কে তিনি জানান, আমাদের প্রাচীন ধর্মগুরুরা তাদের জীবন দিয়ে এই মহামূল্যবান পুস্তক রক্ষা করেছেন। আমরা এই পুস্তক সশ্রদ্ধে প্রণাম করি। বঙ্গ অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস এই অমূল্য গীতপুঁথিতে লিপিবদ্ধ আছে। বর্ণিত আছে ভূ-প্রকৃতি ও জীবনধারার সকল প্রবাহ। নৃত্যে আগ্রহী বা নৃত্যকলার ছাত্রছাত্রী সকলেই খুব আগ্রহ নিয়ে এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করছে। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা আবার বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা দিনে দুই সেশনে কর্মশালার প্রশিক্ষণ চলছে। চলবে আগামী মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত। ঢাকা এবং বাইরের অনেক ছেলেমেয়ে খুব আগ্রহ নিয়ে এই কর্মশালায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। নৃত্যগুরু বলেন, আমি এদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বিমোহিত! এখানে আসার পূর্বে আমার গুরুজী আমায় বলেছিলেন, নেপালের ভাষা, বর্ণ, সাহিত্য ও মিথলজি বাংলাদেশ ও বাংলাভাষার খুবই ঘনিষ্ঠ। এক কথায় একই বৃক্ষের আলাদা আলাদা শাখা। বাংলা ভাষা এবং এর বর্ণ লিপির আকৃতিÑএদেশে আসার পূর্বে আমার পরিচিত ছিল। এখন সে পরিচয় দাঁড়িয়েছে পরিণয়ে।
×