ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রিও ॥ ভাঙল মিলনমেলা

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২৫ আগস্ট ২০১৬

রিও ॥ ভাঙল মিলনমেলা

ভাঙল মিলনমেলা। এ মেলা বিশ্ব মিলনমেলা, বিশ্ব আনন্দমেলা। বিশ্ব ক্রীড়া উৎসব ১৭ দিন ধরে সমগ্র বিশ্বের মানুষকে মাতিয়ে রেখেছিল। এ উৎসবকে ঘিরে যেমন ছিল আনন্দ-উচ্ছ্বাস-আবেগ, তেমনি ছিল উৎকণ্ঠা। বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ছিল রিওডি জেনিরোর দিকে। যারা সেখানকার ভেন্যুগুলোতে উপস্থিত থেকে সরাসরি প্রতিযোগিতা প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের আনন্দ নিঃসন্দেহে বেশি। তবে বাকি বিশ্ববাসী টিভির পর্দায় প্রতিযোগিতাগুলো দেখেও কম আনন্দ পাননি। এ প্রতিযোগিতা ক্রীড়াবিদদের অনেককে আনন্দ দিয়েছে, অনেককে কাঁদিয়েছে। কাউকে কাউকে অমর করে রেখেছে, ইতিহাসের পাতায় কেউ কেউ অর্জন করেছেন অমরত্ব, কেউ কেউ চলে গেছেন পাদ প্রদীপের আলোর বাইরে। রিওডি জেনিরোতে এবারের অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিলেন ২০৭ দেশের ১০ হাজারের বেশি ক্রীড়াবিদ। ৩০৬টি পদকের জন্য লড়েছিলেন তারা। সর্বাধিক পদক অর্জনকারী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই দেশ পেয়েছে ৪৬টি সোনাসহ মোট ১২১ পদক। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। তৃতীয় স্থানে রয়েছে চীন। এই অলিম্পিকে যারা বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন জ্যামাইকার উসাইন বোল্ট, স্বাগতিক দেশের ফুটবল ক্যাপটেন নেইমার, মার্কিন সাঁতারু মাইকেল ফেলপস প্রমুখ। রাশিয়ার জিমন্যাস্ট মার্গারিটা মামুনও দৃষ্টি কেড়েছেন বিশ্ববাসীর। বোল্ট পরপর তিন অলিম্পিকে সোনা জিতে সর্বকালের সকলের রেকর্ড ভেঙ্গে ইতিহাস গড়েছেন। তেমনি ইতিহাস গড়েছেন সাঁতারু ফেলপস। নেইমার ফুটবলে নিজের দেশকে চ্যাম্পিয়ন করে স্বদেশের জন্য ফুটবলে প্রথা এনেছেন সোনালি গৌরব। রিদমিক জিমন্যাস্টিকসে মার্গারিটা মামুন স্বদেশের ইয়ানাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে রাশিয়ার জন্য গৌরব এনেছেন অবশ্য। মার্গারিটা মামুন রাশিয়ার হয়ে সোনা জিতে সে দেশের জন্য যে গৌরব বয়ে এনেছেন তার খানিকটা গৌরব বাংলাদেশেরও। তার বাবা আব্দুল্লাহ আল-মামুন রাজশাহীর ছেলে। মার্গারিটা বাংলাদেশেও জুনিয়র পর্যায়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। পৈতৃক সূত্রে এ দেশের সঙ্গে তার নাড়ির সম্পর্ক। তিনি খুব শীঘ্রই বাংলাদেশে আসবেন বলে জানা গেছে। খেলাধুলা মানুষকে পরস্পরের কাছে আনে। একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হতে সাহায্য করে। সেদিক থেকে খেলাধুলা তথা ক্রীড়া উৎসব মানুষে মানুষে, জাতিতে জাতিতে সৌভ্রাতৃত্বের প্রতীক। দেশে দেশে হানাহানি, শক্রতা, যুদ্ধ ও সংঘাতের বিরুদ্ধে ক্রীড়া হচ্ছে শান্তির প্রতীক। অলিম্পিক ক্রীড়া উৎসবও বর্তমান হানাহানি ও সংঘাতময় বিশ্বে বয়ে এনেছে শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের বার্তা। রিওতে পর্দা নেমেছে অলিম্পিকের। এখন চলবে বিশ্লেষণ ও হিসাব নিকাশ। পাওয়া না পাওয়ার চুলচেড়া বিশ্লেষণ চলবে আগামী চার বছর। সেই মতে ক্রীড়াবিদরা তৈরি করবেন নিজেদের। চার বছর পর আবার পর্দা উঠবে টোকিওতে। সে অলিম্পিকের জন্য বিশ্ববাসী থাকবে অপেক্ষায়। রিও অলিম্পিক শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ায় মানুষ স্বস্তি পেয়েছে আরও একদিক থেকে। কোন রকম অঘটন যে ঘটেনি, সন্ত্রাসের কালো ছায়া রিওতে যে পড়েনি এবং সুষ্ঠুভাবে যে এ উৎসব সম্পন্ন হয়েছে তার জন্য আয়োজনকারীরা প্রশংসা পাবেন বিশ্ববাসীর।
×