ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে

সম্ভাবনা সত্ত্বেও বন্ধ হওয়ার উপক্রম সিটিসেল

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৯ আগস্ট ২০১৬

সম্ভাবনা সত্ত্বেও বন্ধ হওয়ার উপক্রম সিটিসেল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল ফোন কোম্পানি সিটিসেলের তরঙ্গ আগামী সপ্তাহেই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সরকার। কোম্পানিটির লাইসেন্স বাতিলের কার্যক্রমও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাংলাদেশ টেলি-যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিটিআরসি বলছে, প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় সিটিসেলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সিটিসেলই বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল ফোন কোম্পানি। সরকারের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে প্রথম কয়েক বছর এই মোবাইল কোম্পানিটি একচেটিয়াভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছে। শুধু তাই নয়, মনোপলি ব্যবসার সময় এ কোম্পানিটি সেটসহ এক একটি মোবাইল সংযোগ বিক্রি করেছে লাখ টাকার ওপর। সেটিই এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এর আগে কয়েক বছর আগে বিক্রি হয়ে গেছে ওয়ারিদ টেলিকম। আর রবির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে এয়ারটেল। সিটিসেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহবুব চৌধুরী বলছেন, আমরা সরকারের সঙ্গে আলাপের চেষ্টা করছি। আমাদের পরিস্থিতি সরকারকে বলার চেষ্টা করছি যাতে কোম্পানিটি বন্ধ করে দেয়ার প্রক্রিয়া থামানো যায়। সরকারী হিসেবে, বাংলাদেশে এ বছর ১৩ কোটি সিম নিবন্ধন হয়েছে। এর মধ্যে আট কোটি সচল সিম রয়েছে। এই খাতের বিশেষজ্ঞ আবু সায়ীদ খান বলছেন, টেলিযোগাযোগ খাত অত্যন্ত বিনিয়োগ নির্ভর একটি খাত। এখানে অনেক বড় অংকের বিনিয়োগ করলেও সঙ্গে সঙ্গে লাভের মুখ দেখা যায় না। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা থাকতে হয়। সেই সঙ্গে বাজারে নতুন প্রযুক্তি আসে সেগুলোকে আমলে আনতে হয়। কিন্তু এই কোম্পানিগুলো সেভাবে নতুন বিনিয়োগে ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। শুধু ভয়েস কল দিয়ে যে প্রযুক্তির শুরু সেই সেলুলার ফোনে এখন মিলছে থার্ড জেনারেশন ইন্টারনেট। নেটওয়ার্ক পৌঁছে গেছে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে। এ প্রসঙ্গে আবু সায়ীদ খান বলছেন, যে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগের মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেনি তারাই ঝরে যাবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে সিটিসেল সম্পর্কে তার ভাষ্য, সিটিসেল টিকতে না পারার অন্যতম কারণ এর ব্যবস্থাপনার গলদ এবং সঠিক সময়ে সিদ্ধান্তহীনতা। সিটিসেল কিন্তু তার অংশীদার হিসেবে পৃথিবীর অন্যতম সফল মোবাইল অপারেটর সিংটেলকে পেয়েছিল। তারা সিটিসেলের ৪৫ শতাংশ অংশীদারও হয়েছিল। কিন্তু সিটিসেল সিংটেলকে যথাযথভাবে বাংলাদেশে আকৃষ্ট করতে পারেনি বলে আমি মনে করি। বিটিআরসির তথ্য মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই প্রথম দেশ যেখানে সেলুলার প্রযুক্তি চালু হয়েছিল। টেলিকম খাতে দেশের সবচাইতে বড় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের করা বাজার গবেষণা বলছে, মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের ৪০ শতাংশই বয়সে তরুণ। এ প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনের কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান মাহমুদ হোসেইন বলছেন, এছাড়া প্রতি বছরই ১৮ বছর বয়সী নতুন অনেক মানুষ গ্রাহক হিসেবে যুক্ত হচ্ছে। এই তরুণ প্রজন্ম ও নতুন যোগ হওয়া গ্রাহকরাই বাংলাদেশে এই খাতে সমৃদ্ধির সম্ভাবনাকে টিকিয়ে রেখেছে। মোবাইল ফোন খাতে প্রবৃদ্ধি ভবিষ্যতে আসবে ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে, আর সেখানেই অফুরন্ত সম্ভাবনা মনে করছেন গ্রামীণ ফোনের কর্মকর্তা। তিনি বলছেন, তরুণরা যারা আসছে তারা কিন্তু শুধু ভয়েস কল করে না। তারা কথার চেয়ে বেশি মেসেজিং করে বা তারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করে। সামনের দিনগুলোতে নতুন যে গ্রাহকরা আসবে তারা ডেটা সার্ভিসগুলোকে আরও ব্যবহার করবে। মাহমুদ হোসেইন বলেন, মোবাইল ফোন খাতে প্রবৃদ্ধি শুধু ভয়েস কলের ওপরই আর নির্ভর করে না। ভবিষ্যতে এটা আসবে ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে। আর সেখানেই অফুরন্ত সম্ভাবনা। গ্রামীণফোনের গবেষণায় আরও দেখা যাচ্ছে, দেশের জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশ এখনও ইন্টারনেট সেবার আওতার বাইরে। তাদের গ্রাহক হিসেবে আকর্ষণ করার মাধ্যমে বাজার বাড়ানোর সম্ভাবনার দিকে নজর দিচ্ছে টেলিকম অপারেটররা। গ্রামীণফোনের কর্মকর্তা জনাব হোসেইন বলেন, আর ভয়েস কলের দিক থেকে এখনও বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে অনেক নারী মোবাইল ফোন সেবার আওতায় বাইরে রয়ে গেছেন। তাদেরই ভবিষ্যত কাস্টমার হিসেবে দেখছে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো। কয়েকটি কোম্পানির দিন ভাল না গেলেও সবমিলিয়ে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো এ খাতে এখনও প্রবৃদ্ধির ভাল সম্ভাবনা দেখছে বলেও জানান দেশের টেলিকম খাতের শীর্ষ এ প্রতিষ্ঠানটির এ কর্মকর্তা।
×