ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এলপি গ্যাস সহজলভ্য হোক

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১৭ আগস্ট ২০১৬

এলপি গ্যাস সহজলভ্য হোক

জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে বাসাবাড়িতে রান্নাবান্নার জন্য নতুন গ্যাস সংযোগ না দেয়ার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তৎকালীন শেল অয়েলের কাছ থেকে পাঁচটি গ্যাস ক্ষেত্র কিনে নেয়ার চুক্তি সই করেছিলেন ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট। সরকার ২০১০ সাল থেকে ওই দিনটিকে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের ৩৪ শতাংশ যুক্ত হচ্ছে। তবে সেসব স্থানে এখনও প্রায় ৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস মজুদ আছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। সে সময়ে গ্যাস সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্ত হওয়ায় এবং বিদ্যুত উৎপাদনসহ শিল্পোৎপাদনে এর তেমন ব্যবহার না থাকায় তৎকালীন সরকার ঘরে ঘরে রান্নাবান্নার কাজে গ্যাস সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়। এর দামও নির্ধারণ করা হয় খুব কম। ফলে খুব দ্রুতই এটি জনপ্রিয় ও গৃহস্থালির উপযোগী হয়ে ওঠে। তবে এই সুবিধা রাজধানীসহ কেবল কয়েকটি শহরে নাগরিকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাস্তবতা ও সময়ের নিরিখে প্রমাণিত হয়েছে যে সিদ্ধান্তটি খুব সুবিবেচনাপ্রসূত ও সুদূরপ্রসারী ছিল না। কেননা, মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজন অসীম। অন্যদিকে প্রাকৃতিক সম্পদ সীমিত ও সীমাবদ্ধ। গত কয়েক বছর ধরে অগভীর সমুদ্র উপকূলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও অনুসন্ধান অব্যাহত থাকলেও ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবেলায় তা পর্যাপ্ত নয়। অন্যদিকে ব্যবহৃত গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মজুদও খুব দ্রুতই ফুরিয়ে আসছে। সে অবস্থায় সরকার বাসাবাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ কমিয়ে অথবা একেবারে বন্ধ করে দিয়ে রফতানিনির্ভর পণ্য ও উৎপাদনমুখী শিল্পের জন্য গ্যাস ব্যবহারে সবিশেষ আগ্রহী। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য এহেন সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী নিঃসন্দেহে। ঘর-গৃহস্থালিসহ রান্নাবান্নার কাজে যে বা যারা দীর্ঘদিন থেকে অভ্যস্ত, তারা সরকারের এই সিদ্ধান্তে অখুশি হতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে যে, দেশের জনসংখ্যার তুলনায় খুব কম লোকই এই সুবিধা ভোগ করছেন স্বল্প খরচে। সর্বোপরি মজুদ সীমিত বিধায় নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও আহরণ উপযুক্ত না হলে চিরকাল এই সুবিধা অব্যাহত রাখা কারও পক্ষেই সম্ভব হবে না। সে অবস্থায় বিকল্প হলো এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। অর্থমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, একাধিক দেশী কোম্পানিকে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার উৎপাদনের জন্য সুযোগ-সুবিধাসহ অনুমোদন দেয়া হলেও তারা এর অপব্যবহার করছে। তাদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে অর্থমন্ত্রী এও বলেছেন, এভাবে চললে অদূর ভবিষ্যতে সিলিন্ডার আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। মাঝখানে মিটার বসিয়ে বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ ও ব্যবহার সীমিত রাখার একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে সরকার বুঝি সরে এসেছে। যা হোক, এলপি গ্যাস সিল্ডিার সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হলে গ্যাস ব্যবহারকারীদের তা মেনে নিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে এর জন্য সংশ্লিষ্ট জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে বিদেশ থেকে এলপি গ্যাস আমদানিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ ডিপো স্থাপন করতে হবে। এর পাশাপাশি স্থলে-জলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানও জোরদার করতে হবে। সত্য বটে, দেশের জ্বালানি উৎস যথেষ্ট ও পর্যাপ্ত নয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বর্তমান বিশ্বে প্রায় সর্বত্রই সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর। বাংলাদেশেও এর অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে বিশেষ করে সৌর ও বায়ুশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে। সুদূরপ্রসারী ও সৃজনশীল প্রযুক্তিসহ পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশকেও সেদিকে এগিয়ে যেতে হবে। ঘর-গৃহস্থালির কাজ যদি বিকল্প জ্বালানির মাধ্যমে সমাধা করা যায়, তাহলে দূষণ প্রতিরোধসহ সাশ্রয় হতে পারে প্রাকৃতিক সম্পদের। এর জন্য সর্বস্তরে ব্যাপক জনসচেতনতাও গড়ে তোলা জরুরী ও অপরিহার্য।
×