ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাণে বাঁচতে তিন ঘণ্টা সাঁতারে ছিলেন উদ্বাস্তু মারদিনি

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১০ আগস্ট ২০১৬

প্রাণে বাঁচতে তিন ঘণ্টা সাঁতারে ছিলেন উদ্বাস্তু মারদিনি

আয়নাল পারেনি, কিন্তু তিনি পেরেছেন। কিছুদিন আগেও তিনি জানতেন না রিও অলিম্পিকের ঝলমলে আসরে অংশ নিতে পারবেন তিনি। এখনও জানেন না অলিম্পিক থেকে সাফল্যের কোন মুকুট ছিনিয়ে নিতে পারবেন কি না। কিন্তু জীবনের কঠিন যুদ্ধে বহু আগেই সেরার স্বীকৃতি যেন তার পাওয়া হয়ে গেছে। তিনি উদ্বাস্তু ক্রীড়াবিদ ইউস্র মারদিনি। প্রায় প্রত্যেক এ্যাথলেটের জীবনে কোন না কোন কাহিনী থাকে। সেটা অলিম্পিকেই পাওয়া যায়। যার অনেকটাই ব্যক্তিগত সংগ্রমের গল্প। দারিদ্র্য বা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আসার কাহিনী। কিন্তু সিরিয়ার এই সাঁতারুর জীবনকাহিনীতে জড়িয়ে আছে বিশ্বজোড়া এক সমস্যা। যুদ্ধবিধ্বস্ত দামেস্কে জীবন নিয়ে টিকে থাকা ক্রমশ অসহ হয়ে উঠছিল মারদিনির কাছে। তাই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন দামেস্ক ছেড়ে যাবার। তুরস্ক দিয়ে যাবার পথে যে বোটে তারা উঠেছিলেন সেখানে বড়জোড় ৬ জন উঠতে পারত। কিন্তু উঠেছিল ২০ জন। ফল যা হওয়ার ছিল তাই হলো। তরী ডোবার উপক্রম, বোটে থাকা জনা চারেক কেবল সাঁতার জানতেন। এরমধ্যে মারদিনি ছিলেন সিরিয়ার পেশাদার সাঁতারু। সঙ্গে তার ছোট বোনও। কিন্তু সাঁতারে মারদিনির মতো পারঙ্গম ছিলেন না। দক্ষ মারদিনি উপায়ান্ত না দেখে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। এক হাঁকে দড়ি দিয়ে বোটের সঙ্গে শক্ত করে বেঁধে রাখেন নিজেকে। তারপর সাঁতার কেটে কেটে এগোতে থাকেন। কনকনে ঠা-া পানিতে প্রায় তিন ঘণ্টা সাঁতার কেটেছেন। কিন্তু নৌকার যাত্রীদের রক্ষা করেছেন বিপর্যয় থেকে। বিশ্বজোড়া উদ্বাস্তু সমস্যার জলজ্যান্ত প্রতীক ইউস্র মারদিনি। নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে যেতে যেতে, বিভিন্ন দেশে মাথা গুজতে গুজতে অবশেষে পৌঁছেন জার্মানিতে। কিন্তু সেদিনের স্মৃতিতে আজও বিব্রত হন না মারদিনি। বরং অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েছেন সেদিনের ঘটনাকে। কারণ তিনি জানেন, সাঁতার না কাটতে পারলে বাঁচতেই পারতেন না তিনি। অলিম্পিক তো দূরের কথা। আর ফেরা হতো না জীবনের আঙিনায়। আর এ অনুভবই তাকে অনুপ্রেরণা যোগচ্ছে রিও অলিম্পিকের আসরে। আয়নালের পরিনতি নয়, সৃষ্টিকর্তা তার জন্য বেছে রেখেছেন অফুরান প্রাণশক্তি আর মনের প্রবল জোর। উল্লেখ্য, এবারই প্রথম রিও অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছে একটি স্বতন্ত্র উদ্বাস্তু দল। কঙ্গো, সুদান ও সিরিয়ার আট ক্রীড়াবিদ নিয়ে গড়া দলের সদস্য। ইউস্রা মারদিনি। ৫ আগস্ট মারাকানায় অলিম্পিকের রঙিন উদ্বোধনীতে জিম্বাবুইয়ের পর সবার শেষে মার্চপাস্টে অংশ নেয় দলটি। এ সময় গোটা মারাকানার গ্যালারি মুখরিত হয়ে উঠেছিল কড়তালিতে। আসন ছেড়ে মানুষ দাঁড়িয়ে সম্মান জানান উদ্বাস্তু ক্রীড়াবিদদের। যা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার মূর্ত প্রতীক হয়ে রইল খেলাধুলার মাধ্যমে।
×