ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দারুণ জয়ে এগিয়ে গেল লঙ্কানরা

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৩১ জুলাই ২০১৬

দারুণ জয়ে এগিয়ে গেল লঙ্কানরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ রোমাঞ্চের জন্ম না হলেও পাল্লেকেলে টেস্টের শেষ দিনে আকর্ষণের কমতি ছিল না। আলোর স্বল্পতায় সকালে খেলা দেরিতে শুরু হওয়া, প্রতিপক্ষের মনে ভয় ধরিয়ে দেয়া স্টিভেন স্মিথ ও মিচেল মার্শের ছোট্ট দুটি ইনিংস, এই জুটি ভাঙ্গার পর স্বাগতিকদের জয় যখন সময়ের ব্যাপার, তখনই পিটার নেভিল ও স্টিভ ও’কেফের ধীর-ব্যাটিংয়ের নতুন রেকর্ড (নবম উইকেট জুটিতে ১৭৮ বলে ৪ রান!)। তবে সব ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত ১০৬ রানের বড় জয়ে তিন টেস্টের ‘ওয়ার্ন-মুরালিধরন ট্রফি’ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬৮ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করা অস্ট্রেলিয়া শনিবার পঞ্চম দিনে অলআউট হয় ১৬১ রানে। ৯ উইকেট নিয়ে (৫+৪) ঐতিহাসিক জয়ের পথটা সুগম করেছেন স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ। তবে পিছিয়ে থেকেও দ্বিতীয় ইনংসে ১৭৬ রানের অনবদ্য ইনিংস উপহার দিয়ে ম্যাচসেরা কুশল মেন্ডিজ। ১৭ বছরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার এটি প্রথম টেস্ট জয়, সর্বোপরি দ্বিতীয়! প্রথম ইনিংসে মাত্র ১১৭ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর মেন্ডিজই শ্রীলঙ্কার ফাইটিং লিডের রূপকার। যার ওপর ভর করে পিছিয়ে থেকে শুরুর পরও দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৫৩ রান সংগ্রহ করে ২৬৭ রানের লিড পায় এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের দল। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া অলআউট হয় ২০৩ রানে। সকালে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও আলোর স্বল্পতার জন্য প্রায় একঘণ্টা পর খেলা শুরু হয়। ৩ উইকেটে ৮৩ রান নিয়ে মাঠে নামে অস্ট্রেলিয়া। ক্রিজে স্টিভেন স্মিথ (২৬*) এবং এ্যাডাম ভোগস (৯*), অপেক্ষায় মিচেল মার্শ-পিটার নেভিলরা। জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৮৫, হাতে প্রায় ৭৫ ওভারÑ যে কোন কিছুই হতে পারত। তার ওপর সেরা ব্যাটসম্যান স্মিথ খেলছিলেন দারুণ। মার্শকে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে ৪৩ রান যোগ করেন অতিথি অধিনায়ক। কিন্তু লাঞ্চের আগে স্মিথ (৫৫) ও মার্শকে (২৫) ফিরিয়ে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন অভিজ্ঞ হেরাথ। শ্রীলঙ্কার জয়টা মনে হচ্ছিল কেবলই সময়ের ব্যাপার। তখনই দৃশ্যপটে ও’কেফে-নেভিল জুটি। টি২০’র আমলে প্রস্তর যুগে ফিরে গেলেন তারা। ইনজুরির জন্য বল করতে পারেননি। কিন্তু ব্যাটিংয়ে অনন্য নজির গড়েন ও’কেফে। ৫৭ ওভারে নামলেন, প্রথম স্কোরিং শট ৬৩তম ওভারের পঞ্চম বলে। লক্ষণ সান্দাকানকে স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মেরে রানের খাতা খোলেন। ওটাই শেষ। এরপর এই জুটি উইকেটে ছিল আরও ২৩ ওভার, ও’কেফে কিংবা নেভিল, এই সময়ে কোন সিঙ্গেলসও নেননি তারা! মেঘাচ্ছন্ন আকাশের নিচে চার-ছক্কা হাঁকাতে যাননি। যদি বৃষ্টি আসে, ম্যাচটা ড্র হয়। কি মনে করে একটি মাত্র আক্রমণাত্মক শট খেলতে গেলেন, সেটি ৮৬তম ওভারের পঞ্চম বলে। ধনঞ্জয় ডি সিলভার নিরীহ ডেলিভারি কাট করতে গিয়ে আউট নেভিল। যার মধ্য দিয়ে শেষ হয় রেকর্ড গড়া এক জুটির। নবম উইকেট জুটিতে ১৭৮ বল (২৯.৪ ওভার ) খেলে ৪ রান! টেস্টের প্রায় ১শ’ ৪০ বছরের ইতিহাসে যে কোন উইকেট জুটিতে ১শ’র বেশি বল খেলে এর চেয়ে কম রান আর নেই!! যেখানে ৯৮ বলে ৪ ও’কেফের, নেভিল ১১৫ বলে ৯। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে হেরাথের বলে বোল্ড হন ও’কেফে। ১শ’ বা তার বেশি বল মোকাবেলায় কম রান তোলার আগের রেকর্ডটি ছিল হাসিম আমলা ও এবি ডি ভিলিয়ার্সের। গত বছর ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে ২৫৩ বলে ২৭ রান করেছিলেন দুই প্রোটিয়া তারকা। রান রেট ০.৬৪। এদিন ও’কেফে-নেভিলের রেট ০.১৩! তবে শেষ রক্ষা করতে পারলেন না। দুই টেল-এন্ডারের অবিশ্বাস্য লড়াই পরের ম্যাচে অসিদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। গলে যেটি শুরু বৃহস্পতিবার। ১৯৮৩ থেকে এ পর্যন্ত ২৭ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লঙ্কানদের এটি মাত্র দ্বিতীয় জয়। অসিদের বিপক্ষে তাদের আগের একমাত্র জয়টি ছিল সেই ১৯৯৯ সালে, ক্যান্ডিতে, সনথ জয়সুরিয়ার নেতৃত্বে। বিপরীতে মাইকেল ক্লার্কের কাছ থেকে নেতৃত্ব পাওয়ার পর প্রথম হারের স্বাদ পেলেন স্টিভেন স্মিথ।
×