ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত

ভাইব্রেন্ট রাজাকার সাইলেন্ট জঙ্গী দমন করুন

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৩০ জুলাই ২০১৬

ভাইব্রেন্ট রাজাকার সাইলেন্ট জঙ্গী দমন করুন

একটা বিষয় কিছুতেই বুঝতে পারি না। এত বড় সর্বনাশের পরও একশ্রেণীর মানুষ অন্ধ থাকে কি করে? এটা কি আমাদের জাতীয় চরিত্র না সুবিধাবাদ? এখন আর রাখঢাকের সময় নেই। ঘরে-বাইরে দুশমন জঙ্গী পরিবেষ্টিত বাংলাদেশে সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতেই হবে। অথচ আমাদের দেশের বিকৃত বুদ্ধিজীবী আর সুশীলরা এখনও মধ্যবিত্তের মগজে বিষ ঢালতে ব্যস্ত। তাদের ধারণা বা কল্পিত মতামত-এর জন্য দায়ী সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশকে নাকি এরাই এ জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে। আমি আওয়ামী লীগের স্তাবক না। তাদের সরকারের অমার্জনীয় ব্যর্থতার নিন্দা আর সমালোচনা করি বলে তাদেরও প্রিয় নই। কিন্তু তার মানে এই না অকারণে শেখ হাসিনার ঘাড়ে দায় চাপিয়ে পার পাওয়া যাবে। আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানিতে শেখ হাসিনার সরকার নেই। নেই পাকিস্তানে বা আফগানিস্তানেও, সে সব দেশে জনগণের জান এখন হাতের মুঠোয়। বৈশ্বিক বাস্তবতার পাশাপাশি ঘরে সাপ পোষার কারণে বাংলাদেশেও আজ জঙ্গীবাদ মারাত্মক হয়ে হানা দিয়েছে। নিজেদের বিবেককে ঘুম পাড়িয়ে এর ওর ঘাড়ে দোষ চাপানোর কারণে অন্যরা মুক্তি পেলেও আমাদের পার পাওয়ার সম্ভাবনা কম। আশার কথাÑ এই চরম ক্রান্তিকালে আমাদের পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর নিবেদিতপ্রাণ মানুষ জানবাজি করে লড়াই করছে। যারা বিধর্মী এমনকি স্বধর্মের প্রগতিশীলদের কাফের মনে করেন তারা আজ নিজেদের বিকৃত বিবেকের কারণে এসব অকুতোভয় মানুষের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছেন। সম্প্রতি এক জঙ্গীবিরোধী অপারেশনে নিহত এক যুবকের পরিচয় নিয়ে মিডিয়া তোলপাড়। এ যুবক পাকিপ্রেমী স্বাধীনতাবিরোধী একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আক্রান্ত ও পরে মৃত সাবেক গবর্নর মোনায়েম খানের নাতি। অবাক হওয়ার কি আছে? তারা তাদের কাজে বরাবর নিষ্ঠ। তাদের চুল পরিমাণও বিচ্যুতি নেই। একবার যে রাজাকার বা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী আজীবন সে তার ছানাপোনারাও তাই করে থাকে। গলদ তো আমাদের ভেতর। এই যে সুশীল নামের আসিফ নজরুল বা প্রথম আলোর ভাড়াটে লেখকরাÑএরা লেবাসে প্রগতিশীল পোশাকে, খাবারে বা আচরণে স্বাধীনতাপন্থী, ভেতরে ভয়াবহ। আবার তারা মুখ খুলেছে। আমাদের পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর জোয়ানদের রক্ত না দেখলে তাদের মনোবাসনা পূর্ণ হয় না। এরাই বলছে, গুলি কেন পিঠে লেগেছিল, কেন জঙ্গীদের পোশাক ছিল কালো। এসব ভুয়া কথা বা পয়েন্টসের কোন মানে নেই জেনেও এরা এ দেশের মূর্খ এবং স্বেচ্ছামূর্খদের মনে সন্দেহ জাগাতে চায়। বঙ্গবন্ধু বা চার নেতাসহ পরবর্তীকালে নিহত নিরীহ নেতা সাধারণ মানুষ কিংবা আর কোন আসামির বেলায় এমন কথা শুনেছিলেন? এমন ছদ্মবেশী সমর্থন জাগানোর ভাষা বা সহানুভূতি জাগানোর মতো কথা? এটাই বলে দেয় এরা আসলে কি চায়? বরাবর বলেছি আজও বলছি, জামায়াতের চেয়েও ভয়ঙ্কর মধ্যপন্থী সুবিধাভোগী বিএনপির রাজনীতি। এই চরম দুঃসময়ে বিএনপির দুই খন্দকার, মোশাররফ ও আইনজীবী মাহবুব খন্দকার মোশতাকের মতো কথা বলছে। একজন বলছে, একাত্তরে কি হয়েছিল তা নাকি ভুলে যেতে হবে। আর একজন সন্দেহ পোষণ করেছে কল্যাণপুরের জঙ্গীরা আসলে জঙ্গী ছিল কিনা। জঙ্গী যদি না হয় এরা বন্দুক-গ্রেনেড-বোমা নিয়ে কি বিএনপি বিএনপি খেলা খেলছিল? না এরা বিএনপির ক্যাডার? এদের জন্য আপনাদের মায়াকান্না কেন? কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো কঠিন চেহারার রিজভি সাহেব প্রশ্ন রেখেছেন তাদের ধরে এনে গুলি করা কেন? বলতে ইচ্ছে হচ্ছে আগামীবারের অপারেশনে যেন এদের সঙ্গে নেয়া হয়। তাদের প্রয়াত মহাসচিব খন্দকার দেলওয়ারের পাতলুন খুলে গেছিল ভরা মজলিসে। কোন রকম জঙ্গী তৎপরতার ইন্ধন ছাড়াই। জনগণ দেখতে চায় এদের বেলায় কি হয়? এভাবে জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের জন্য ইনিয়ে বিনিয়ে কান্নার মানে কি? এরপরও কি বলে দিতে হবে এদের আসল অবস্থান কোথায়? মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানে কি দেশ ও জনগণের জীবননাশের সহায়ক বক্তব্য দিতে পারা? দুনিয়ার সব দেশেই হয়ত সন্ত্রাস বা জঙ্গী আছে। তফাত এই আমাদের দেশের বড় দল নামে পরিচিত একটি দলের নেতা এবং সুশীল নামধারী মানুষেরা এর সমর্থনে কথা বলতে পারে। খেয়াল করবেন তাদের ঘর কিন্তু নিরাপদ। তাদের সন্তানদের তারা এসব কাজে পাঠায় না। ঠিক বামদের মতো। অতি বাম উগ্র বামের ছেলেমেয়েরা ইংল্যান্ড আমেরিকা বা হাল আমলে কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় থাকে সুখে শান্তিতে বাড়িঘর গাড়ি ঘোড়া নিয়ে জীবনযাপন করে। এদের পিতা বা অভিভাবকরা দেশের গর্র্ব বা মধ্যবিত্তদের ছেলেমেয়েদের দিয়ে সমাজতন্ত্রের মিছিল করায়। এরাও তাই। অন্যের ছেলেপুলেদের ধর্মের নামে উস্কে দিয়ে জান দিতে পাঠিয়ে নিজেরা বিবৃতি ঝাড়ে। তবে এরা কেন সমান অপরাধী হবে না? যেসব দেশে গণতন্ত্র আছে, যারা বাকস্বাধীনতা বা মানবাধিকারের নামে পাগল তারাও এসব সহ্য করে না। করলে বাংলাদেশের লোক ধরে ধরে দেশে পাঠিয়ে দিত? আমাদের সরকারের বড় দুর্বলতা তার ভেতরের দুশমন। আওয়ামী লীগের ভেতরও ধর্মের নামে অন্ধ আর সংস্কারের নামে অচলায়তনে বিশ্বাসী মানুষের কমতি নেই। তবে এখন সবচেয়ে বিপজ্জনক এসব সুশীল ও মৃতপ্রায় নেতারা। এরা কিন্তু সমাজের একাংশে বিভেদ ছড়াচ্ছে। যারা বিশ্বাস করে বাংলাদেশের জঙ্গীবাদ প্রতিবেশী দেশ, আমেরিকা, ইসরাইল অথবা পাকিস্তানের উপহার এরা তাদের মনে শক্তি যোগাচ্ছে। এ প্রক্রিয়া বন্ধ না হলে জঙ্গী দমনে সফল হওয়া কঠিন হতে বাধ্য। এসব নেতার কাউকে আমরা জনমনে শান্তি বা নিরাপত্তাদানে এগিয়ে আসতে দেখি? কেউ কি তাদের এলাকায় বা প্রেস কনফারেন্সে এক বারও বলেছে, ভয় নেইÑ রাজনীতি আপনাদের সঙ্গে আছে? বলেনি। কারণ তাদের আসল কাজ সরকারের বিরোধিতা। শেখ আসিনার ইমেজ ভঙ্গ বা পতনের জন্য চক্রান্ত করা। দুর্ভাগ্য, আমাদের এ দেশে একবারই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তারপর আর মুক্তিযোদ্ধা জন্মায় না। বিপরীতে রাজাকারের বংশ বৃদ্ধি ঘটে জ্যামিতিক হারে। জানি না এর পেছনে পাকিস্তান ভাঙ্গার বেদনা না ধর্মের নামে অন্ধ বিশ্বাস। তবে এটুকু বুঝি এরা আমাদের মা মাটি ও মানুষের কল্যাণ বা মঙ্গল চায় না। সে কবে থেকে এরা বলে আসছে, দেশ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। দেশ এমনই বিক্রি হলো এই সরকারের আমলে ছিট মহল ফেরত পাওয়ার কারণে দেশের আয়তন গেল বেড়ে। দেশের এমন সর্বনাশ হলো আজ তার গায়ে উন্নয়নের জোরালো হাওয়া। এই সরকার এমন ধর্মবিরোধী তার কথা বলার জন্য সবার আগে মানববন্ধন করে ওলামা লীগ। আর এরা এত ধার্মিক ঈদের জামাতও আজ আর নিরাপদ নয়। আমি বলি এসব মুখর ভাইব্রেন্ট রাজাকাররাই সাইলেন্ট জঙ্গী। এদেরও দমন করতে হবে।
×