ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাসের শক্তিশালী নারী মুঘল সম্রাজ্ঞী নূরজাহান

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২২ জুলাই ২০১৬

ইতিহাসের শক্তিশালী নারী  মুঘল সম্রাজ্ঞী নূরজাহান

মেহেরুন্নিসা বা নূরজাহান। নূরজাহান বা জগতের আলো, সম্রাট জাহাঙ্গীরের দেয়া নাম। ইতিহাসের পাতায় যার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। জন্মেছিলেন উচ্চ বংশে। ভাগ্যক্রমে আশ্রয় পেয়েছিলেন সম্রাট আকবরের হেরেমে। সেখানেই বেড়ে ওঠেন তিনি। নাচ, গানসহ শিক্ষা লাভ করেন জ্ঞানের অন্যান্য শাখায়। রূপেগুণে স্বয়ংসম্পূর্ণা যাকে বলে। অনেক নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে মেহেরুন্নিসা হয়ে ওঠেন মুঘল সম্রাজ্ঞী ‘নূরজাহান’। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের নাম শোনেনি এমন কোন লোক আছে কিনা সন্দেহ। মহান সম্রাট আকবরের পুত্র সেলিম ৩৮ বছর বয়সে জাহাঙ্গীর উপাধি নাম ধারণ করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর জন্মগতভাবে বহুগুণের অধিকারী ছিলেন। একদিকে যেমন ছিলেন বিরাট প্রতাপশালী সম্রাট, অপরদিকে তেমনি ছিলেন উন্মুক্ত হৃদয়ের প্রজাবৎসল শাসক। তিনি মনেপ্রাণে সাধারণ প্রজাদের সুখ শান্তি ও মঙ্গল কামনা করতেন। শোনা যায় মেহের একবার যুবরাজ সেলিমের নজরে পড়ে জান। সেলিমও অমনি খেপে উঠল মেহেরকে বিয়ে করার জন্য। বাদশাহ আকবর এর কাছে আর্জি পৌঁছে গেল তার বিয়ের। কিন্তু নিজের বংশ মর্যাদার কথা ভেবে সেলিমকে নিষেধ করে আলি কুলির সঙ্গে মেহেরের বিয়ে দেন। মেহেরের বয়স তখন ষোল। আকবরের মৃত্যুর পর যুবরাজ সেলিম বসলেন সিংহাসনে। নাম নিলেন জাহাঙ্গীর। সম্রাট হয়েও জাহাঙ্গীর মেহেরকে ভুলতে পারলেন না। জাহাঙ্গীর ভেবে চিন্তে দেখলেন আলি কুলিকে যদি হত্যা করা যায় তবেই সে মেহেরকে বিয়ে করতে পারবে। তবে আলি কুলিকে হত্যা করা সহজ কাজ ছিল না। শেরের মৃত্যুর পর মেহেরকে আগ্রাতে নিয়ে আসা হয়। তখন মেহেরের বয়স তেত্রিশ। ওই বয়স এও তিনি অপূর্ব রূপসী ছিলেন। মুঘল হেরেমে থেকেও দীর্ঘ চার বছর সম্রাটকে দেখেননি। সাইত্রিশ বছর বয়সে বিয়ে করেন জাহাঙ্গীরকে। জাহাঙ্গীর তার নাম দিলেন নূরজাহান বা জগতের আলো। নূরজাহান শারীরিকভাবে শক্তিশালী ছিলেন। তিনি প্রায়ই সম্রাটের সঙ্গে বাঘ শিকারে জেতেন। শক্তিশালী বাঘ শিকারি হিসেবে তার খ্যাতি ছিল। তার বীরত্বের কবিতাও লিখেছেন অনেক কবি। ইংরেজ দূত টমাস রো লিখে গেছেন মেহের আসলে দেশ শাসন করত। জাহাঙ্গীর ছিল নাম কেওয়াস্তে সম্রাট। সেই সময়কার মুদ্রাতে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে নূরজাহানের ছবিও ছাপা হতো। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে রাজ্য পরিচালনা করতেন। জাহাঙ্গীরের রাজত্বের শেষ দিকে যখন তার ছেলে খুররম ও সেনাপতি মহাব্বত খাঁ বিদ্রোহ করেন তখন বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন নূরজাহান। নূরজাহান ছিলেন জাহাঙ্গীরের চোখের জ্যোতি ও অন্তর মস্তিষ্কের মালিক। সম্রাট নিজে বলতেন, ‘নূরজাহান আমার মালিক কিন্তু আমার আদল ইনসাফের মালিক নয়।’ সম্রাজ্ঞী নূরজাহান ছিলেন অপরূপ সুন্দরী, ভুবন মোহিনী চিত্তহারিণী সৌন্দর্যের অধিকারিনী। নূরজাহানের শেষ জীবন সুখের হয়নি। তার বিরাট উচ্চাকাক্সক্ষা ছিল তার জন্য দায়ী। জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর নূরজাহানও লাহোরেই থেকে যান শেষ পর্যন্ত। অবশেষে বাহাত্তর বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ওই লাহোরেই। নূরজাহান নিজে ছিলেন কবি। তার কবরের গায়ে তার রচিত দুটি লাইন দেখতে পাওয়া যায়। ফরাসীতে লেখা। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলায় অনুবাদ করেন- ‘গরিব গোরে দ্বীপ জেলো না, ফুল দিওনা কেউ ভুলে, শ্যামা পোকার না পোড়ে পাখ, দাগা না পায় বুলবুলে।’ অপরাজিতা ডেস্ক
×