ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চিলে কান-

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ১৭ জুলাই ২০১৬

চিলে কান-

চিলে কান নিয়ে যাওয়া প্রবাদটি মনে পড়ে যায় সম্প্রতি একটি মহলের অপপ্রচার দেখে। কথা হচ্ছে চিলে কান নিয়ে গেছে শুনে কি সচেতন ব্যক্তি প্রথমে চিলের পিছে দৌড়াবেন, নাকি কানে হাত দিয়ে একবার দেখবেন কানটা ঠিক জায়গা মতো আছে কি না। কোন ঘটনা প্রকাশের আগে সত্য ঘটনা জেনে নেয়াই হলো বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। গুলশানে জঙ্গী হামলা সংঘটিত হওয়ার পর থেকে নানা কথা বাতাসে ভাসতে শুরু করেছে। শঙ্কার সহোদর হলো গুজব। শঙ্কা থেকে নানা কথার ডালপালা মেলতে পারে, গুজব ছড়াতে পারে। এই সুযোগটাই নিয়ে থাকে জ্ঞানপাপীরা। তারা থাকে তক্কে তক্কে। কখন সংশয়মাখা ঢিল ছুড়ে বিভ্রান্ত করবে মানুষকে। পরপর দুটি জঙ্গী হামলার পর ‘সব গেল সব গেল’ বলে রব তোলা হলো। প্রথমেই এলো দেশের ভাবমূর্তির কথা। বাংলাদেশের জঙ্গীরা আইএসএ যোগ দিয়ে হামলা চালাচ্ছে- এ ধরনের কথাও ছড়ানোর অপচেষ্টা হলো। তার অর্থ হলো বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি এইবার নিশ্চিতভাবে বিনষ্ট হবে। অথচ দেখা গেল বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ সরকারকে সহানুভূতি প্রকাশ করে বিবৃতি দিলেন। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় জানালেন- জঙ্গী হামলা এখন বৈশ্বিক হওয়ায় গুলশান হামলার প্রেক্ষিতে বিদেশে বাংলাদেশের কোন ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়নি। এরপরই আসে জাপান প্রসঙ্গ। গুলশানে জঙ্গী হামলায় নিহতদের ভেতর জাপানের সাতজন নাগরিক ছিলেন। তারা ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজে এদেশে এসেছিলেন। বাংলাদেশের উন্নয়নবিরোধী একটি মহল এই বিষয়টিকেই অপপ্রচারের ইস্যু করে তোলে। জাপানীরা আর মেট্রোরেল প্রকল্পে কাজ করবে না- এমন গুজব চিল ছোঁ মেরে নিয়ে যায় এবং সরকার যাদের কাছে চক্ষুশূল তাদের কানে কানে রটিয়ে দিতে থাকে। অথচ বাস্তবতা হলো চলতি সপ্তাহেই জাপান থেকে দশজন স্বেচ্ছাসেবক আসছেন। এমনকি ঈদের ছুটির সময় যেসব জাপানী নাগরিক নিজ দেশে গিয়েছিলেন ছুটি পেয়ে, তারাও ফিরছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে যাদের মনোকষ্ট হয়, এদফাও তাদের মনোবাঞ্ছা পূরণ হলো না। আসা যাক দেশের অন্যতম প্রধান রফতানি খাত গার্মেন্টস প্রসঙ্গে। অন্যায্যভাবে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধাপ্রাপ্তি ঝুলে আছে। দেশে জঙ্গী হামলার অজুহাত দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ কোন কোন দেশ এদেশ থেকে তৈরি পোশাক সামগ্রী ক্রয় স্থগিত রাখতে পারেÑ এমন কথাও ডালপালা মেলল। বাস্তবে এমন কিছুই হয়নি। বাংলাদেশের সঙ্গেই থাকছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান। উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট এ্যালায়েন্সের এদেশীয় পরিচালক (কান্ট্রি ডিরেক্টর) এবং ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি এমনটাই জানিয়েছেন। বাংলাদেশে জঙ্গী হামলা হয়েছে। তাই দেশটিতে বিদেশীরা কাজ করতে আসবে না, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা গুটিয়ে নেবে। এই আশঙ্কাটি ছড়াতে যারা পছন্দ করছিলেন তাদের মুখ বন্ধ করার মতো তথ্য দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে আসার পরও তারা পুরোপুরি আশাহত হননি। উল্টো দিকটিও তারা ভেবে রেখেছিলেন এবং আভাসে ইঙ্গিতে এমনটাই প্রকাশ করতে থাকেন যে, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অথচ জোঁকের মুখে নুন পড়ার মতো হয়েছে। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী জানান, সাম্প্রতিক জঙ্গী হামলার কোন প্রভাব জনশক্তি রফতানিতে পড়বে না। এ বছর সাড়ে সাত লাখ বাংলাদেশী কর্মী চাকরি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাবেন বলেও আশা করা যাচ্ছে। সুতরাং এসব থেকে দেশবাসী পুনরায় অনুধাবনে সক্ষম হলো চিলে কান নেয়ার প্রবাদটি শুধু প্রবাদ নয়। তার জলজ্যান্ত উদাহরণ এখনও মেলে।
×