ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টিভি চ্যানেলের ঈদের অনুষ্ঠানে বিজ্ঞাপনে অতিষ্ঠ দর্শক

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ১৪ জুলাই ২০১৬

টিভি চ্যানেলের ঈদের অনুষ্ঠানে বিজ্ঞাপনে অতিষ্ঠ দর্শক

সাজু আহমেদ ॥ মুসলমানদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুই ঈদের আনন্দের সঙ্গে যুক্ত হয় বিভিন্ন চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখার আনন্দ। অনেক দর্শকই ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠান দেখার জন্য অপেক্ষা করেন। কিন্ত বেশিরভাগ সময়ই দর্শকদের হতাশ হতে হয়। এর অন্যতম কারণ টিভি অনুষ্ঠানে মান না থাকা। মানহীন অনুষ্ঠানের কারণে দর্শকরা বরাবরই বিদেশী চ্যানেলের প্রতি আকৃষ্ট হন। এত এত অভিযোগ সত্ত্বেও কয়েকটি চ্যানেল বেশ ভাল কিছু অনুষ্ঠান নির্মাণ করেছেন এবারের ঈদে। তবে এবার বিজ্ঞাপন বিরতির নামে চ্যানেলগুলো যা করেছে তাতে দর্শকদের মাথায় হাত। বিশেষ করে ঈদের ধারাবাহিক নাটক নিয়ে এই অভিযোগটা আরও জোরালো। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিজ্ঞাপন বিরতি এতটাই বিরক্তিকর ছিল যে দর্শকরা তো এখন বলছেন বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে অনুষ্ঠান দেখেছেন তারা। এছাড়া কোন কোন চ্যানেল আবার স্বল্প বিরতির নামে দর্শকদের সঙ্গে প্রতারণাও করেছে। কারণ প্রথমত স্বল্প বিরতি দিলেও এর পরে যে বিরতি শুরু হয় তাতে দর্শকরা বিরক্তিই শুধু নয় গালমন্দের পাশাপাশি কেউ কেউ সরাসরি অভিযোগও করেছেন অনুষ্ঠান নির্মাতাদের কাছে। তবে নির্মাতারা বলেছেন এতে তাদের কিছু করার নেই। চ্যানেলগুলো যেভাবে চান সেভাবেই চলে। কারণ সবকিছু তাদের হাতে। অতিরিক্ত লাভের আশায় তারা দর্শকদের ভাল অনুষ্ঠান দেখা থেকে বঞ্চিত করছেন। এ কারণে দেশের চ্যানেলগুলোর দর্শক দিন দিন কমছে বই বাড়ছে না। এছাড়া অনুষ্ঠান নির্মাণের দুর্বলতা দক্ষ শিল্পী ও নির্মাতার অভাব তো রয়েছে। এবারের ঈদের অনুষ্ঠানের মান, বিজ্ঞাপন বিরতির পাশাপাশি অভিনয়শিল্পীদের বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ অনুষ্ঠানের প্রশংসাও করেছেন। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ইমদাদ হোসেন শপথ নামে একজন লিখেছেন ‘বিজ্ঞাপন বিরতীতে বিরক্ত হয়েছি। তবে ধৈর্য্য হাড়ায়নি, বেশ কয়েকটি নাটক দেখেছি। কিছু কিছু বাদে সবই ভালো লেগেছে’। সুমন রেজা নামে এক দর্শক লিখেছেন ‘বেশ কিছু অনুষ্ঠান দেখেছি সবই ভালো লেগেছে’। আহমেদ সাজু লিখেছেন এবার আমার প্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম ছিল সবার উপরে। সবচেয়ে বেশি তার নাটক প্রচার হয়েছে। খুব ইনজয় করেছি’। নিথর মাহবুব লিখেছেন ‘আগে টিভি নাটকে যারা অভিনয় করত সাধারণ দর্শক তাদের ভালবাসত, কোথাও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দেখলে অটোগ্রাফ নিত। কিন্তু বর্তমান ওই চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে। টিভি নাটকের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে সেদিন বেশি দূরে নয় যখন দর্শক টিভি নাটকের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দেখলে.., সামনা সামনি পেলে পা থেকে জুতা খুলে গালে মারবে। কারণ মানুষ বিনোদন পেতে টিভির সামনে নাটক দেখতে বসে বিরক্তিকর জিনিস দেখতে বাধ্য হচ্ছে, বাংলাদেশের নাটক দেখতে গেলে মানুষের ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ভারতের টিভি চ্যানেলগুলো না থাকলে হয়তো এই দেশে টিভি কেনা-বেচাই বন্ধ হয়ে যেত। বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো এখন দর্শকদের বিনোদন দেয়ার জন্য নাটক চালায় না, তাদের উদ্দেশ্য ৫ মিনিট নাটকের উসিলায় ১০-১৫ মিনিট বিজ্ঞাপন চালানো। তাই নাটকের গল্প, মান, অভিনেতা-অভিনেত্রী নিয়ে চ্যানেলের কোন মাথা ব্যথা নেই। এক নাটকে কত বেশি সময় বিজ্ঞাপন চালানো যায় এটাই তাদের চেষ্টা থাকে। একবার বিজ্ঞাপন বিরতি আসলে মানুষ ভুলেই যায় কি দেখতে শুরু করেছিল’। ওই দর্শক আরও লেখেন ‘এবার ঈদে কয়েকটা নাটকে চোখ বুলিয়েছি। হায়রে নাটক! নাটক নিয়ে আর কিছু বলতেও ইচ্ছে করে না। এখন মনে হয় নাট্যকাররা সমাজের কোন ঘটনা বা মানুষের জীবন পর্যালোচনা করে নাটক লেখেন না, নাটক লেখেন টিভি দেখে। অর্থাৎ টিভিতে যা দেখেন তার কপি করেন। কোন ঈদেই ঈদ ধারাবাহিক নাটক দেখি না, এবারও দেখিনি। কারণ ঈদের টানা ৭দিন একই সময়ে টিভির সামনে বসে ধারাবাহিক নাটক দেখা কোন সুস্থ মানুষের কাজ হতে পারে না। কিছু একঘণ্টার নাটকের অংশ বিশেষ দেখেছি। জানি না আমার দুর্ভাগ্য, না এবার ঈদে সব একঘণ্টার নাটকই বানানো হয়েছে একজন... টাইপের অভিনেতাকে দিয়ে। নাটক দেখতে যেই চ্যানেল সুইচ করেছি, শুধু তাকেই দেখেছি। যার নেকামি অভিনয় দেখলে মেজাজ চরম খারাপ হয়। এই ফালতু ছেলেটাকে নিয়ে যারা নাটক বানায় আমার মনে হয় তারা ইডিয়েট। কিছু নাটকে দেখেছি... অভিনেতারা অভিনয় করেছে। ...বলছি এই কারণে এদের মুখ পরিচিতি তো নেই-ই এমনকি এরা কোন গ্রুপ থিয়েটারেরও সদস্য না।
×