ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

এ সংসদে পাস হোক- ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৫ জুন ২০১৬

এ সংসদে পাস হোক- ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’

পদ্মা সেতুর কাজ এরই মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ সম্পন্ন হয়েছে। পুরো কাজ শেষ হওয়ার আগে একটি প্রস্তাব প্রশ্নাকারে রাখতে চাই- ক্যানো পদ্মা সেতুর নাম ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’ রাখা হবে না? বঙ্গবন্ধুর পর শেখ হাসিনার মতন এমন সাহস তো আর কারও মধ্যে দেখলাম না। বিশ্বমোড়ল আমেরিকা বা গরিবকে গরিব রাখার ব্যাংক বিশ্বব্যাংককে তোয়াক্কা না করে কাজ করার মতো সাহস তো শেখ হাসিনারই। প্রস্তাবটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে রাখলাম। আশা করি বিবেচনা করবেন এবং সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যথাশীঘ্র ঘোষণাটি দেবেন। এটি শেখ হাসিনার প্রাপ্য। মনে করার কোন কারণ নেই যে, বাঙালী জাতি পদ্মা সেতুর নামকরণ ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’ করে তাকে বড় করা হয়েছে? না, বন্ধুরা না। শেখ হাসিনা নিজেই অনেক বড় মাপের মানুষ এবং অনেক অনেক বড় মাপের রাষ্ট্রনেতা। বাংলাদেশকে তিনি আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, তার তুলনা আর কারও সঙ্গেই হতে পারে না। বরং বর্তমান বিশ্বনেতাদের মধ্যে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভøাদিমির পুতিন, ভারতের প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী, জার্মানির এ্যাঞ্জেলা মের্কেলের সঙ্গেই হতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন সত্য; কিন্তু দুই মেয়াদের ৮ বছরে এমন একটি বড় কাজ কি দেখাতে পেরেছেন যা শেখ হাসিনার কর্মযজ্ঞকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। বরং অপকর্মটা বেশি করেছেন। তাদের মোড়লিপনায় পরিচালিত বিশ্বব্যাংক শেখ হাসিনাকে একটি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল, তা টেকেনি। তাকে চ্যালেঞ্জ না বলে বলা উচিত ষড়যন্ত্র। তারা পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি আবিষ্কার করে বাঙালী জাতি ও বাংলাদেশকে ছোট করতে চেয়েছিল। বাপের বেটি রুখে দাঁড়ালেন- না, কোন দুর্নীতি হয়নি, বরং এটি বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্র, একে প্রতিহত করে আমরা বাংলার জনগণ নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। বিশ্বব্যাংককে ছুড়ে ফেলে দিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করলেন এবং এরই মধ্যে আগেই বলেছি এক-তৃতীয়াংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণের যে বিশাল কর্মযজ্ঞ তা না দেখলে বোঝা যাবে না। কেবল সেতুর ওপর নয়, অন্যত্র ও বিভিন স্থানে স্ল্যাভ ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। তারপর কোন এক সময় এতে যখন বিভিন্ন যান চলাচল করবে, পণ্য পরিবহন চলবে, যখন এই প্রথম দক্ষিণ বাংলার সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশের রেলযোগাযোগ শুরু হবে তখন বিশ্ববাসী আরও অবাক হবে। শেখ হাসিনা এত সাহস কোথায় পান? বিদেশী রাষ্ট্রনায়করা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন-What is the magic of your leadership in achieving such a high steck of economic growth index? শেখ হাসিনার উত্তর- It is the people of Bangladesh, I know them, I trust them, I know their demands, I know what they want to do. They also know me, my vission and they have trust on me সব. যারা কিছু পত্রিকায় মতলবি কলাম লিখে বা টিভি টক শোতে বসে লম্বা লম্বা বুলি ছাড়েন, সেইসব সিভিল সোসাইটি, হাফ সিভিল সোসাইটি বা কোয়ার্টার সিভিল সোসাইটির হাত-পা নাচানো টকাররা কি বলতে পারবেন মানুষকে বিশ্বাস করে মানুষের প্রতি আস্থাবান হয়ে আর কোন শাসক বাংলাদেশে এসেছে বঙ্গবন্ধু ছাড়া? বন্দুক উঁচিয়েও কেউ কেউ ক্ষমতায় এসেছেন বা চেহারানির্ভরও কেউ পেছনে বন্দুকধারী মিলিটারি নিয়ে সিংহাসনে বসেছেন। কি করেছেন তারা? করবেন ক্যামন করে? মানুষের ওপর আস্থাবান হয়ে ক্ষমতায় আসার কথা থাকলেও তারা এসেছেন বন্দুক উঁচিয়ে ভয় দেখিয়ে এবং হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে। যে বন্দুক নিয়ে ক্ষমতায় আসেন তিনি জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেন না, মানুষের জন্য কাজও করতে পারেন না। কেবল নিজ নিজ ভাগ্য পরিবর্তন ছাড়া। কে শুনেছে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর কালো টাকা ধরা পড়ে এবং তাদের ফাইন দিতে হয় ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টকে। কে এই প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী? খালেদা জিয়া এবং সাইফুর রহমান। দুর্নীতির দায়ে কার ছেলে ফেরারি আসামি হয়ে লন্ডনে পলাতক জীবনযাপন করছে? সে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক। এ সব কথা বহুবার বলেছি। তবু নতুন প্রজন্মের স্বার্থে বারবার বলা দরকার। এ কাজটি করা উচিত ছিল শিক্ষা আর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় তো প্রতিনিয়ত নীতি পাল্টে চলেছে আর গিনিপিগ হচ্ছে কোমলমতি বাচ্চারা। জাতীয়ভাবে কয়েকটি প্রাথমিক পরীক্ষা নেয়ার পর এবার বলা হচ্ছে আর ক্লাস ফাইভের পরীক্ষা জাতীয়ভাবে হবে না। এখন থেকে প্রাথমিক স্তর হবে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত। যদ্দুর মনে পড়ে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গঠিত ড. মুহম্মদ কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্টে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের পরামর্শ ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেই রিপোর্টটি বঙ্গবন্ধু বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। তার আগেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। তারপর কেবল কমিটি আর কমিটি, এক্সপেরিমেন্ট আর এক্সপেরিমেন্ট, বেশ কয়েক বছর ধরে শর্ট প্রশ্ন, এমসিকিউ আর এখন শুনছি রচনামূলক। আরেকটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। কিছু নাট্যোৎসবের উদ্বোধন ছাড়া তাদের যেন আর কোন কাজ নেই। ঐতিহাসিক প্রফেসর মুনতাসীর মামুন একবার অভিযোগ করেছিলেনÑঅনেক চেষ্টা করেও আজ পর্যন্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক পর্যায়ে স্বাধীনতার ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও সংগ্রাম আত্মত্যাগের ইতিহাস পড়ানোর ব্যবস্থা করতে পারেননি। যে টুকু হচ্ছে দায়সারা। কথাগুলো বললাম এজন্য যে, শেখ হাসিনা তার কাজ করে চলেছেন অত্যন্ত দৃঢ় প্রত্যয়ে, দৃঢ় পদভারে। তার পারিষদ মনে হয় তার পাশাপাশি হাঁটতে পারছেন না। কথাগুলো এজন্য বললাম যে, শেখ হাসিনা যখন বললেন পদ্মা সেতু হবে নিজস্ব অর্থায়নে তখন পারিষদের কাউকে কাউকে চোখ ওপরে তুলে অবাক বিস্ময়ে তাকাতে দেখেছি। বলেন কি নেত্রী? আর আজ, বন্ধু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তো ক’দিন পরপরই সেতু অঞ্চল সফর করছেন আর মানুষকে আশার বাণী শোনাচ্ছেন। আজ ১৫%, কাল ২০%, পরশু ৩০%Ñ তার এসব কথাবার্তা কেবল কথা নয়, বাস্তবেই পদ্মা সেতুর কাজ খুব দ্রুত এগিয়ে চলেছে। মাঝখান দিয়ে এক দক্ষ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন একটা মিথ্যা অপবাদ মাথায় নিয়ে নীরবে সরে গেলেন। যে যাই বলুক, সৈয়দ আবুল হোসেন যে একজন দক্ষ মন্ত্রী তা আমি জানি। ২০০১ সালের নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে নির্বাচন করতে যাই। সেবার দলীয় বিপর্যয়ের সঙ্গে আমিও হেরে যাই। কিন্তু একবার যখন মানুষের কাছে ভোট চেয়েছি ভোট পেয়েছি। এর অর্থ মানুষের কাজ করতে হবে। ফরিদগঞ্জের পাশে একটি বেইলি ব্রিজ ছিল। রিজিওনাল হাইওয়ের ওপর। এমন ঝরঝরে ছিল যে, যে কোন মুহূর্তে জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডির মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। আমি এলাকাবাসীর পক্ষে সৈয়দ আবুল হোসেনের কাছে দরখাস্ত করলাম। তিনি তার মন্ত্রণালয়ের সচিব/ চীফ ইঞ্জিনিয়ারকে মার্ক করে দরখাস্তের কোনায় লিখলেন, I want this project to be done within this financia. ওই ফাইন্যান্সিয়ালে হয়নি, তবে বেইলি ব্রিজ ভেঙ্গে পাকা ব্রিজ নির্মাণের কাজ অতিদ্রুত সম্পন্ন হয় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই ব্রিজ উদ্বোধন করেন। এখানে উল্লেখ করা দরকার, পদ্মা সেতুতে যে কথিত দুর্নীতি বিশ্বব্যাংক আবিষ্কার করেছিল কানাডার আদালতে তার বিচারে বলা হয়েছে দুর্নীতি হয়নি, দুর্নীতির চিন্তা-ভাবনা হয়েছিল। কি হাস্যকর যুক্তি। বুশ-বারাকরা ইরাকে মানববিধ্বংসী কামান আছে বলে আক্রমণ চালিয়ে নারী-শিশু এবং সপরিবারে সাদ্দামসহ লাখ লাখ মানুষ হত্যা করে এখন বলছেন থুক্কু, আমাদের ভুল হয়ে গেছে। মানববিধ্বংসী কামানের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমি মনে করি, বর্তমান পার্লামেন্টেই এ ব্যাপারে অর্থাৎ দেশরতœ শেখ হাসিনার নামে পদ্মা সেতুর নামকরণ করার প্রস্তাব উত্থাপন করা দরকার। বিশ্বাস করি সংসদ সানন্দে প্রস্তাবটি পাস করবে। আগেই বলেছি, শেখ হাসিনা ছাড়া কার এমন সাহস যে, বিশ্ব সাম্র্রাজ্যবাদের মোড়ল আমেরিকা ও বিশ্বব্যাংককে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কখনও এমন কাজ করতে পেরেছে আমার জানা নেই। আমাদের রাষ্ট্রনেত্রী পেরেছেন বলেই তার নামে নামকরণ করা যৌক্তিক। দেশবাসীও খুশি হবেন। যারা খুশি হবেন না তারা কারা তাদের চিনতে তো বাকি নেই কারও। গুটিকয়েক অর্বাচীনের কথায় বা তাদের বিকৃত চেহারার দিকে তাকিয়ে জাতীয় ভাল কাজ তো থেমে থাকতে পারে না। শেখ হাসিনার নামে পদ্মা সেতুর নামকরণ করা মানে হচ্ছে শেখ হাসিনার মতোই জাতিকে সাহসী করে তোলা। বিশেষ করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের মেন্টাল ফ্যাকাল্টি সাহসী করে তোলা। তা না হলে রাষ্ট্র এবং নাগরিকরা এগিয়ে যাবে কি করে? শেখ হাসিনা বাঙালী জাতি ও রাষ্ট্রকে এমন এক উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে কারণে জি-৭ হয়ে যায় জি-৮। সম্প্রতি তার সফরসঙ্গী হিসেবে সৌদি আরব সফর ও ওমরাহ হজ পালন করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আমি দেখেছি কি সম্মান ও রাজকীয় মর্যাদার সঙ্গে বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ এবং ক্রাউন প্রিন্স তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। অর্জনও ছিল যুগান্তকারী। তাই তো শেখ হাসিনাকে সামনে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কেন বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে আমাদের অপমান করতে চেয়েছিল? এখন যখন শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় পদ্মা সেতু হয়ে গেল তখন বিশ্বব্যাংকই বলছে, বাংলাদেশের যে কোন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করতে রাজি। বিশ্বব্যাংকের চীফ ইকোনমিস্ট কৌশিক বসু নিজেই বলেছেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সূচকে চীনের মতো এগোচ্ছে, প্লেনের মতো টেক অফ করেছে। বিশ্বব্যাংক চায় না আমাদের মতো দেশ তাদের মতো উন্নত হোক, কোনরকম বেঁচে থাকলেই হলো। ষাটের দশকে তাই আমরা দেখেছি তাদের বা গ্রাম শান্তকরণ প্রকল্প। সেটি কিন্তু আজও চালু আছে- কখনও গ্রিন রেভ্যুলেশন নামে, কখনও টিআর-কাবিখা নামে, কখনও লিন পিরিয়ডে কাজের বিনিময়ে ভিক্ষার মতো টাকা বিতরণের মাধ্যমে। এভাবে আমেরিকার মোড়লিপনায় গঠিত বিশ্বব্যাংক আমাদের মতো উঠতি দেশগুলোকে গরিব করে রাখতে চায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য থেকে মুক্তির মাধ্যমে নিজের পায়ে দাঁড়াবার জন্য দেশ স্বাধীন করে গেছেন। তাঁর কন্যা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে নিজের পায়ে দাঁড়াবার শক্তি অর্জন করেছেন তার সাহসী, দক্ষ, দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু হোক চায়নি এজন্য যে, আজ আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার বা জিডিপি-৭.০৫%। পদ্মা সেতু দিয়ে যেদিন ট্রেন ও পণ্যবাহী চলাচল শুরু করবে সেদিন অবহেলিত দক্ষিণ বাংলার সুপ্ত অদম্য শক্তি জেগে ওঠার মাধ্যমে জিডিপি শতকরা ৯ ভাগ ছাড়িয়ে যাবে। এটা তারা জানে বলেই নানা ধানাইপানাই করে কাজ বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। শেখ হাসিনা তাদের এই চালাকিকে চ্যালেঞ্জপূর্বক আজ পদ্মা সেতু নির্মাণ করে চলেছেন দ্রুতগতিতে। পদ্মা সেতু আজ বাস্তবতা। তাই তো এর নাম হবে ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’। ঢাকা ॥ ২৩ জুন ২০১৬ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×