ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গীটার গডের যন্ত্রণা

প্রকাশিত: ০৭:২৬, ২৩ জুন ২০১৬

গীটার গডের যন্ত্রণা

একটা যন্ত্রণায় পেয়েছে এরিককে। জন্ম পিঠের ব্যথা হতে। ক্রমেই বেড়েছে বছর ধরে। ঠিক যেন, ‘পায়ে বৈদ্যুতিক শক!’ প্রতিনিয়ত বুড়িয়ে যাওয়া থেকে নিজেকে সংযত রাখার পাশাপাশি, এ যন্ত্রণাটাও কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন এখন এরিক; ভক্তকুলের ‘গীটার গড’। তবে, অবস্থার আর উন্নতি হবে না বলেও ধারণা তাঁর। একাত্তর তো খুব বেশি নয় সংখ্যায়! তবু যদি থেমেই যেতে হয় তাঁকে, কেবল সেটা অতীতের স্বেচ্ছাচারী জীবনের জন্য। মানছেনও তা। বলছেন, ‘বেঁচে আছি, এই তো অনেক। আরো আগেই মৃত্যুঘণ্টা বেজে যাওয়ার কথা ছিল। সত্তরের ঘরে এসেও কীভাবে বেঁচে আছি, জানিই না! মরতে মরতে নরকের মুখ থেকেও ফিরে এসেছি।’ এটা ‘আশা’র কথা। ক্ল্যাপটন কিন্তু চোখ বুজে ‘আশা’টা আঁকড়ে ধরতেই পারেন। হয়ত ধরেই আছেন। কিংবা মনে মনে ভাবতে পারেন, খ্যাতির তুঙ্গে আসা সেই সত্তরের দশক। কেমন ছিল দিনগুলো সেই! ‘ক্রসরোডস’, ‘লায়লা’র মতো গান তখন ‘বিপুল সমারোহ’ যোগে চলছে। ভিড়ে যাচ্ছে বিখ্যাত বিখ্যাত অন্যসব গানের দলে। গানগুলোর জন্মদাতাও তাই বিখ্যাত হচ্ছিল তখন, খুব স্বাভাবিকভাবেই। তারও ক’বছর আগে, ‘ক্রিম’ নামক যে ব্যান্ডটি জন্মালো শহর লন্ডনে; ক্যালেন্ডারে তখন ১৯৬৬। মূল সদস্য তিনজন। গীটারিস্ট-গায়ক এরিক তো ছিলেনই, সঙ্গে বাকিরা। হাঁটা শুরু সেই থেকেই। গতি এতই বেশি ছিল যে, ইউরোপ-আমেরিকার মতো বিস্তর পরিসরে ব্যান্ডটির বিপুল জনিপ্রয়তা পেতে সময় লেগেছিল ২৮ মাস। হ্যাঁ, মাত্র ২৮ মাস। চমকে দিচ্ছিলেন ক্ল্যাপটন, একের পর এক। জর্জ হ্যারিসন বন্ধু তাঁর। দুজন মিলে করেই ফেললেন এ্যালবাম। নাম, ‘গুডবাই’। অতঃপর সেই সময়টা এলো। একসঙ্গেই করলেন ঐতিহাসিক এক কনসার্ট, ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। সেদিনকার গল্প কি মনে পড়ে এরিকের? নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেন। উত্তেজনায় ঘামছেন তিনি। অসুস্থও খুব। বসে আছেন স্টেজের পেছনে। কী আর করা! মনে অশান্তি। কারণ তো আছেই। যুদ্ধ চলছে তখন এখানটায়। মুক্তির জন্য যুদ্ধ। দেশ মাতৃকাকে নির্দিষ্ট মানচিত্র এনে দেয়ার যুদ্ধ। তখন একাত্তর। কনসার্ট হবে সেই মর্মে। কিন্তু, গীটার কি তিনি বাজাতে পারবেন সত্যিই! সংশয় ছিল মনে। উঠলেন তবু স্টেজে। বন্ধু হ্যারিসন ধরলেন, ‘হোয়াইল মাই গিটার জেন্টলি উইপ্স’, বাজালেন এরিক। কী যে বাজালেন তিনি সেদিন, আজও সঙ্গীতপ্রিয়দের মনে লেগে আছে। থাকবেও চিরকাল। ফলে, এই যে অর্জনগুলো ক্ল্যাপটনের, এই যে ‘গীটার দেবতা’ বলে ডাকা, এই যে ‘বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা’, ‘ভালবাসা’; এসব যে জন্য হয়েছে, সেই গীটার যদি না-ই বাজে আর, আঙ্গুল যদি না-ই ছুঁতে পারে ছয় তার, এটা যে কী যন্ত্রণার হবে; সে যন্ত্রণা না পোড়াক এরিককে। ভাল থাকুক তিনি। ভাল থাকুক প্রিয় সব গীটার।
×