ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকের এমডিদের বয়স নিয়ে দ্বৈতনীতি;###;অভিজ্ঞ ব্যাংকাররা চলে গেলে মেধাশূন্য হবে ব্যাংক ;###;বাতিল হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা

সঙ্কটে পড়বে ব্যাংকিং খাত

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ১৯ জুন ২০১৬

সঙ্কটে পড়বে ব্যাংকিং খাত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের এমডিদের বয়সসীমা কমানোর ফলে সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে গোটা ব্যাংকিং খাত। সম্প্রতি বেসরকারী ব্যাংকের এমডির বয়সসীমা ৬৫ বছর বহাল রেখে শুধু সরকারী ব্যাংকের এমডিদের ৬২ বছর করার অঘোষিত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিদ্যমান আইনে ব্যাংক এমডিদের বয়সসীমা ৬৫ বছর বহাল থাকলেও হঠাৎ এমডিদের বয়সসীমা নিয়ে এ ধরনের বৈষম্য নীতির কারণে ব্যাংকিং খাতে চরম বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে মেধাবী, দক্ষ, সিনিয়র এবং যোগ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঙ্কটে পড়বে ব্যাংকিং খাত। সিনিয়র ব্যাংকারদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর বিপরীতে ব্যাংকিং খাত হবে মেধাশূন্য। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ব্যাংকিং খাতের একটি বিশ্বস্ত সূত্র অনুযায়ী, সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর এমডিদের চাকরির অবসরের বয়সসীমা ৬৫ থেকে নামিয়ে ৬২তে করতে যাচ্ছে। বিআরপিডি সার্কুলার অনুযায়ী ব্যাংকের এমডিদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নরদের চাকরির বয়স ৬২ বছর নির্ধারণ করা হয়। এই সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকারী ব্যাংকগুলোর এমডিদের চাকরির বয়সসীমা ৬২ করা হচ্ছে, যা ব্যাংকিং ও প্রবিধি নীতি বিভাগের নির্দেশনার সঙ্গে সাংঙ্গর্ষিক। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডির সার্কুলার অনুযায়ী সরকারী ও বেসরকারী সকল ব্যাংকের এমডিরা ৬৫ বছর পর্যন্ত চাকরি করতে পারবেন। কিন্তু হঠাৎ করে সরকারী ব্যাংকের এমডিদের চাকরির ক্ষেত্রে বয়স ৬২ বছর করায় ব্যাংকিং খাতে দ্বৈতনীতি ছাড়া আর কিছু নেই বলেও দেশের একাধিক অর্থনীতিবিদরা মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সুভঙ্কর সাহা বলেন, ৬৫ বছর পর্যন্ত ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন। যেটি বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইড লাইনে বর্ণিত রয়েছে। তবে এ নির্দেশনা পরিবর্তনের বিষয় আমি কিছুই বলতে পারব না। একটি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, বয়সসীমা ৬৫ বছর হওয়ায় একজন এমডি জানাশোনা শেষে অভিজ্ঞ হয়ে উঠলেই তার সময় শেষ। বয়স কম হওয়ায় তার অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সময় পায় না। সে ক্ষেত্রে ৬৫ বছরের বয়সসীমার বাধ্যবাধকতা শিথিল করা জরুরী। সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্প্রতিক এক অঘোষিত সিদ্ধান্তের দেশের ব্যাংকিং খাতে ফলে দেশের ব্যাংকিং খাতে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ লোকবলের সঙ্কট প্রকট হয়ে উঠবে। জানা গেছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি অনুযায়ী মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছরের ওপরে। সরকারী চাকরির বিধি অনুযায়ী কোন চাকরিজীবী ৬৫ বছরে অবসর গ্রহণ করার পরও তার চাকরি করার অনেক সামর্থ্য ও যোগ্যতা থাকে। কিন্তু পূর্ব নির্ধারিত কিছু বিধি-বিধানের কারণে এখন কোন এমডি ৬৫ বছরের ওপরে চাকরি করতে পারছেন না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এমডিদের চাকরি বয়স ৬৫ বছরের মধ্যে থাকলে তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে চুক্তিভিত্তিক হিসেবে রাখা যেতে পারে। কারণ সিনিয়র ও অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের দেশে যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তবে ৬৫ বছর পরে তাদের আর রাখার কোন সুযোগ নেই। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বয়সের বাধ্যবাধকতা নয়, অভিজ্ঞতা ও সিনিয়রের ভিত্তিতেই দেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে এমডি নিয়োগ দেয়া উচিত। কারণ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো সরকার তথা দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। এসব ব্যাংকে অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ লোক এমডি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলে ব্যাংকিং খাত মুখ থুবড়ে পড়বে। পাশাপাশি সরকারের সামগ্রিক কর্মকা-ে এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই সোনালী, অগ্রণী, জনতা এবং রূপালী ব্যাংকে এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ এমডির বিকল্প নেই।
×