ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভাবনায় বাবা দিবস

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৮ জুন ২০১৬

ভাবনায় বাবা দিবস

সকাল ৭টা! বাবার কণ্ঠের আওয়াজ ভেসে আসল। তিনি কাছ থেকে ডাকছেন, এই ওঠ! সকাল হলো বলে। ডাক দিয়েই বাবা চলে গেলেন নিচে। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠতে যাব, ঠিক সে সময় আমার এক বন্ধুর মেসেজ এলো। মেসেজ খুলে পড়ছি, আজ বাবা দিবস, চল নতুন কিছু করি। মেসেজটি দেখে মনে পড়লো, হায় হায়! আমি তো ভুলেই গেছিলাম, যাক মেসেজের রিপ্লাই দিয়ে দেই। লিখলাম, কি করা যায় রে? এই লিখে আমিও ফ্রেস হতে গেলাম। বাথরুম গিয়ে গুনগুন করে গান গাওয়ার অভ্যাসটা অনেক আগের, তবুও আজ যেন গানে মন আসছে না, কারণ আজ বাবা দিবস, নতুন কিছু করতে হবে। এই নতুন কিছুর ভাবনাটা মনে ঘুরপাক খাচ্ছে সারাক্ষণ। ভাবতে ভাবতে বেরিয়ে আসলাম ফ্রেশ হয়ে। উপরে গিয়ে মেসেজ চেক করছি, দেখার তর সইছে না নতুন কিছুটা কি! তখনও বন্ধুটি মেসেজের উত্তর পাঠায়নি, তর সইছে না, তাই কল দিলাম সঙ্গে সঙ্গে। ওপাশ থেকে আর কেউ না, কল ধরল আমার দাদু!! ‘কি গো বন্ধু, নতুন কিছু করতে হবে না?’ আমার দাদাই ফেসবুকে আমার নতুন বন্ধু। ‘আরে শোন, বাবার জন্য নতুন কিছু করতে হয় নিজের বুদ্ধিতে। যেমন, তোর বাবা কিন্তু প্রতিবছর আমাকে নতুন কিছু সারপ্রাইজ দেয়। তুইও ভাবতে থাক, ভাল বুদ্ধি এসে যাবে।’ ‘ওকে বন্ধু! এবার নতুন কিছুই করব।’ নিজের ভেতরে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললাম। কল কেটে গেল, ভাল-মন্দ জিজ্ঞাসা করতে পেলাম না, কেননা নতুন কিছু করতে হবে। এই ভাবনাটা মাথায় গেঁথে গেল, কি করা যায়! ভাবতে ভাবতে দুপুর গড়িয়ে আসল, তবুও নতুন কিছু মনে আসছে না। একবার মনে হয় গিফট দেব, তো আরেকবার মনে হয় এটা তো পুরনো। এভাবে নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে করে সময় পার হচ্ছে কিন্তু নতুন বুদ্ধি আসছে না কিছুতেই। শেষমেশ একটা ছোটখাটো বুদ্ধি এলো, যা হয়ত সবাই প্লেন রাখে না। যেই ভাবা সেই কাজ। বাবার জন্য তৈরি করলাম একটা গিফট বক্স। এরপর বাবার রুমের দিকে গেলাম, যেতে যেতে সময়ের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখি বাজে ৩:৩৫। মানে সকাল থেকে কিছু পেটে ঢুকেনি। যাই হোক, বাবার ঘরের সামনে গিয়ে বললাম, বাবা আসব? হ্যাঁ সূচক বাক্যে বললেন, আসো। কাছে গিয়েই জড়িয়ে ধরে বললাম, বাবা! এই নেও বাবা দিবসে তোমার উপহার! বাবা খুশিমতো সেটা নিয়ে খুললেন, খুলেই দেখলেন ৩টা বড় বড় কাগজে কি যেন লেখা! পড়ছেন তিনি, দেখলেন এসব তো কবিতা, যার লেখক তার ছেলে, লিখেছে সে এভাবে, ‘বাবা দিবস এসে গেল/ বাবার খোঁজ নেইনি/ ক্ষমা প্রার্থনা করছি বাবা/ তোমার দুই পা ছুঁয়েনি। আমি বাবা বড় হয়ে/ গড়ব প্রাসাদ মস্ত বড়/ সেই প্রাসাদে রাজা তুমি, রানী হবেন আমার মাগো।’ এভাবে পড়তে পড়তেই দুই চোখ বেয়ে পানি পড়ছে বাবার, আর আমাকে কাছে ডেকে বললেন, ‘তুই বড় হ বাবা। মানুষের মতো মানুষ হয়ে ওঠ এটাই আমি চাই।’ আমি ছোট শিশুর মতো বাবার কোলে বসে বললাম, ‘হবই বাবা, হব। তোমাদের আশা আমি পূরণ করবই। এই আমার বাবা দিবসের ভাবনা, চিন্তা কর না বাবা, আমি বড় কিছুই হবই।’ এই বলে বেরিয়ে আসলাম ঘর থেকে, সারাদিনের সকল চিন্তা, পরিশ্রম সার্থক বলে নিজেকে ধন্য মনে হলো। মনে পড়ছে সেই বাণী, বেঁচে থাক আমার বাবা, হাজার বছর। রংপুর জিলা স্কুল, রংপুর ৯ম শ্রেণী বয়স-১৫
×