ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রযোজনায় ইরফান খান

প্রকাশিত: ০৭:২৬, ১৬ জুন ২০১৬

প্রযোজনায় ইরফান খান

সব্যসাচী দাশ শাহাজাদা ইরফান আলী খান, নামটা ওজনে যেমন ভারি নামের মানুষটার পরিচয়ও তেমন ভারি। তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রের বিশ্বজয়ী অভিনয় শিল্প। পাশাপাশি ব্রিটেন ও হলিউড চলচ্চিত্রের অভিনেতা, বিশ্লেষক ও সমালোচক। নিজেকে ইরফান খান নামে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে অভিনয়ের সঙ্গে দিনরাত পার করছেন ৪৯ বছর বয়সী এই সিরিয়াস অভিনয় শিল্পী। ১৯৮৮ সালে ছালাম মুম্বাই চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক। এর আগে অবশ্য ছোট পর্দায় কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। স্বীকৃতিও পেয়েছেন দেশে-বিদেশে। নিজের যোগ্যতা, সামর্থ্য ও দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের কারণে আজ গোটা ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রিতে ইরফান খান নামে একটা আলাদা প্যাভিলিয়ন তৈরি হয়েছে। বলিউড ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রিতে পবিারতন্ত্রের একটা ব্যাপক প্রভাব থাকা সত্ত্বেও যে সব অভিনয় শিল্পী নিজেদের যোগ্যতা ও শ্রম দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন ইরফান খান তাদের মধ্যে অন্যতম। বলিউডে তাঁর দীর্ঘ অভিনয়ের ইতিহাসে অনেক সমৃদ্ধ গল্পের ছবি দর্শকরা দেখে আসছে। তাঁর অভিনীত ছবির ব্যবসায়ী সাফল্য তেমন উল্লেখযোগ্য না হলেও, তার ছবি নিয়ে প্রায় সব শ্রেণীর দর্শকের মধ্যে এক ধররের আলাদা আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে লাইফ অব পাই, দ্য ওয়ারিয়র এবং জুরাসিক পার্কের মতো বিশ্বজয়ী চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ রোলে ইরফান খানের অভিনয় ছিল বেশ সাবলীল। চলচ্চিত্র শিল্পে নিজের নিজস্বতার কারণে আলাদাভাবে তিনি সমাদৃত। সম্প্রতি নীশিকান্ত কামাতের পরিচালনায় এবং ইরফান খানের প্রয়োজনায় মুক্তি পেয়েছে সোশ্যাল থ্রিলার ছবি মাদারি। সম্প্রতি নিজের সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নিয়ে এক সাক্ষাতকারে ফ্র্যাংলি আলোচনা করেন এ ছবির বিভিন্ন দিক নিয়ে। দীর্ঘদিন চলচ্চিত্রে কাজ করার পর এবারই প্রথম কোন চলচ্চিত্রের প্রযোজনা করলেন। এমন প্রশ্নের উত্তরে মি. খান বলেন, অনেকটা বাধ্য হয়েই কাজটি করেছি, আর কাজটি তো আমি কেবল শুরু করেছিলাম পুরোটা তো সম্পন্ন করেছে আমার স্ত্রী সুতপা সিকদারÑ তাই প্রযোজনার কৃতিত্ব ওরই কারণ মাদারি ছবির গল্প যখন আমার ও সুতপার কাছে আসে আমরা দুজনই গল্প পড়ে বেশ উত্তেজিত হয়েছিলাম যে কারণে অতি আগ্রহ নিয়েই আমরা এ ছবির কাজ শুরু করি। পাশাপাশি প্রথমে হতাশও হয়েছিলাম এই ভেবে এমন গল্পের চলচ্চিত্রের জন্য কোন প্রযোজক নাকি পাওয়া যাচ্ছিল না। সামাজিক সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত মাদারি চলচ্চিত্র। গল্প পড়ে নিজের ভেতর এক ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা তৈরি হয় আর তা থেকেই এ চলচ্চিত্রে বেশ আগ্রহ নিয়ে কাজ করা। নিজের অভিনীত চলচ্চিত্রের প্রশ্নে সব সময় পরিষ্কার জবাব দিয়ে থাকেন চৌকস বুদ্ধিদীপ্ত এই অভিনেতা। নিজের সিলেক্টিভ চলচ্চিত্রের প্রশ্নে তিনি বলেন, ক্যামেরার সামনে আমি এমন কোন অদ্ভুত কা- দেখাতে পারব না, যার কারণে আমার ছবি শতকোটি টাকার ব্যবসায়ী সাফল্য পাবে। ইরফান খানের ফেস বিক্রি হয় না অভিনয় বিক্রি হয়। যে সমস্ত স্ক্রিপে নিজেকে অভিনয় দিয়ে প্রমাণ করার সুযোগ পাই সে সব ছবিতেই কাজ করি। তার সমসাময়িক সময়ে বলিউড কলিকদের মধ্যে কেউ কেউ হলিউডে গিয়ে বেশ অল্প সময়ে সুনাম কুড়িয়েছেন এমনকি পেয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ভোজসভায় নিমন্ত্রণ, এসব বিষয় ইরফান খান খুব ধীর স্থির হয়ে দীর্ঘ পথ চলার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। মাদারি ছবিতে তিনি একজন রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবশালী ব্যক্তির ছেলেকে কিডনাপ করেন।রাষ্ট্্েরর সশস্ত্র বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ছেলেকে এবং কিডনাপারকে খুঁজতে অবিরত চেষ্টা চালাতে থাকে ... আগেই বলেছি সত্য ঘটনা অবলম্বনে থ্রিলার ধাঁচের এই চলচ্চিত্র। মাদারির সঙ্গে মুক্তি পেয়েছে অমিতাভ বচ্চন, নেওয়াজ উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিদ্যা বালানের থ্রিলার মুভি ‘তিন’। এ ক্ষেত্রে মাদারির দর্শক গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে তিনি একটু রসিকতা করে বলেন, ওনাদের মতো সুপার স্টাদের ছবির পাশাপাশি আমার মতো গরিব লোকের ছবি হলে গিয়ে দেখলে নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করবে। ইরফান খান বলিউড এবং হলিউডে প্রায় সমান ব্যস্ততা নিয়ে কাজ করেন। কাজের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো তার একেবারেই অপছন্দ। তিনি বিশ্বাস করেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ অভিজ্ঞতা সঞ্চার করে আর অভিজ্ঞ মানুষই সময়ের সঙ্গে দীর্ঘ পথ চলতে সাহায্য করে।
×