ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জয়া কাহিনী ..

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ১৬ জুন ২০১৬

জয়া কাহিনী ..

জীবন দেখতে ভালবাসেন জয়া, জয়া আহসান। ‘বোহেমিয়ান’ হয়ে বাঁচা পছন্দ করেন। তাই-ই হয়ত ঢেউ তুলতে পারছেন একাধারে দুই বাংলায়, প্রায় সমানতালে। লিখেছেন- মাহবুবুর রহমান সজীব ডুবসাঁতারের রেণুর কথা মনে আছে তো? পরিবারের দায়িত্ব পালন করতে যেমন তাকে বাইরে বেরোতে হয়, তেমনি তাকে হতে হয় অন্ধ ভাইয়ের চোখটিও। নিজের প্রাণের দিকে চোখ ফেরালে জোটে সনাতন সমাজের চোখ রাঙানি। তার জীবনে আবারও প্রেম আসে। যে প্রেম তাকে সর্বনাশের পথে ঠেলে দেয়। তবু রেণু হাল ছাড়ে না। অনেক বিপন্নতার মধ্যেও প্রতি মুহূর্তে সংগ্রাম করে চলে। হয়ত কখনও ভেঙে পড়ে, কিন্তু শেষ হয়ে যায় না। ফের পথচলা শুরু করে, সংসারের প্রয়োজনে। তখন ২০১০-এর সূর্য অস্ত যাওয়ার পথে। সেই সময়ে শহরের দেয়ালে ঝুলল পোস্টার। পাড়ায় মহল্লায় মাইকিং। আসছে ‘ডুবসাঁতার’, ঈদ-উল-ফিতরের। পরিচালক নূরুল আলম আতিক। বড়পর্দায় জয়াকে এই প্রথমবারের মতো দেখল দর্শকরা, রেণু হিসেবে। টিকে গেলেন সেই থেকেই। পরিচালক তার দ্বিতীয় ছবিতেও জয়াকেই রাখলেন। চরিত্রটির নাম পদ্ম। ছবির নাম ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’। পুরো কাজ শেষ হয়নি এখনও। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে আরেকটি ছবির কাজ। আতিক-জয়া জুটির তৃতীয় ছবি এটি। শূটিং চলছে সিরাজগঞ্জে। কলকাতা থেকে ফিরেই জয়াকে ছুটতে হলো সেদিকে। নায়িকা জীবন এমনই। আজ এখানে তো কাল ওখানে। বলা চলে, এক প্রকার বোহেমিয়ান। স্বপ্ন নিয়ে যারা শহরে আসে, তাদের নিয়েই গল্পটা। জয়া গ্রামের মেয়ে। নাম ‘পেয়ারা’। পরিচালক বলছেন, ‘পেয়ারার সুবাস’ চলচ্চিত্রে জয়াকেই তার দরকার ছিল। জয়া আহসান ক’দিন আগেই পেলেন সেরা পার্শ্বঅভিনেত্রীর পুরস্কার, কলকাতার ১৬তম টেলিসিনে এ্যাওয়ার্ডে। এই সেরা অভিনয়টা করেছিলেন পরিচালক সৃজিতের ‘রাজকাহিনী’তে। সেই ছবিতে রুদ্রর সঙ্গে একটি অন্তরঙ্গ দৃশ্য তো ‘রাজকাহিনী’কে ‘জয়া কাহিনী’ বানিয়ে দিল অনলাইনে! সে কী সমালোচনা! জয়া নাকি বাংলাদেশের সানি লিওন! আরও চটকদার শিরোনাম হয়েছে অনেক। জয়া সেসব খুব একটা পাত্তা না দিয়েই বলেছেন, ‘অভিনেত্রীদের অনেক ধরনের সমালোচনাই সহ্য করতে হয়। তবুও ভাল যে, আমি পর্দার সমালোচনার মুখে পড়েছি। আর, এর উত্তরটা অভিনয়ের মাধ্যমেই দিয়েছি।’ ‘ঈগলের চোখ’ নামে আরেকটি কলকাতার ছবিতে অভিনয় করছেন জয়া আহসান। ছবিটির বিষয় এ্যাডাল্ট ক্রাইম। শবর সিরিজের দ্বিতীয় নির্মাণ এটি। গল্প নেয়া হয়েছে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। নারীর পাশাপাশি একটা পুরুষ কীভাবে যৌন নিগ্রহের শিকার হনÑ এই নিয়েই গল্প। মূল চরিত্রটি অনির্বাণ ভট্টাচার্যের। বিষাণ তার নাম। ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন নারীর দ্বারা যৌন নিগ্রহের শিকার হতে হতে এক সময় আর কোন নারীর প্রতি আকর্ষণ কাজ করে না তার। এমন অনাগ্রহী স্বামীর সঙ্গী শিবাঙ্গীর চরিত্রটি জয়ার। অনুমেয়, চরিত্রটি চ্যালেঞ্জিং। এ চরিত্রটিও হয়ত জয়াকে দ্বার করাতে পারে সমালোচকের কাঠগড়ায়। কিন্তু, তাতে কী! জয়া মনে করেন, ‘অভিনেতা যদি মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান, তাহলে সেখানেই তার অভিনয়-জীবন থমকে যায়। কিছু আরোপিত ম্যানারিজম থেকে যায় কেবল। অভিনয় উঠে আসে সমাজ থেকে। যে মুহূর্তে গাড়ির টিন্টেড গ্লাস সমাজের সঙ্গে অভিনেতার ব্যবধান তৈরি করে দেয়, অভিনেতার মৃত্যুর শুরু হয় সেখান থেকে। গাড়ির নিরাপদ ঠা-ায় বসে অভিনেতা আর তখন বাইরের তাপমাত্রা টের পান না।’ কলকাতায় বসে বলেছেন তিনি এসব কথা। ছিমছাম একটি মধ্যবিত্ত ফ্ল্যাটে একাই থাকেন সেখানে। বসার ঘরে দেয়াল জোড়া কাঠের ক্যাবিনেট খাঁ খাঁ করে, কিছু রাখা হয়নি বলে। অন্যপ্রান্তে খাওয়ার টেবিল। সেখানে অবশ্য বাহারি জলের বোতল আর টুকিটাকি জিনিসপত্র রাখা থাকে। বোঝাই যায়, তিনি আর পাঁচজন অভিনেত্রীর মতো নন। প্লাস্টিক হাসিতে বিতর্ক এড়িয়ে চলেন না। শূটিংয়ের সময় ভ্যানিটি ভ্যানে রং মেখে বসে থাকতে পছন্দ করেন না। জীবন দেখতে ভালবাসেন। কলকাতায় থাকাকালীন তাই শট না থাকলেও ঢাকুরিয়া ব্রিজে শূটিংয়ের সময় ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকেন। ব্রিজের নিচের বস্তির দিকে তাকিয়ে থাকেন। ঝুপড়িবাসীদের সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করে। বুঝতে ইচ্ছে করে তাদের যাপনকথা, বাচনভঙ্গি, দৈনন্দিন সমস্যা। ঢাকা যেহেতু খুব পরিচিত, এখানকার রাস্তায় নেমে পড়েন মাঝেমধ্যেই। রিক্সা-অটোয় চড়েন সাধারণ পোশাকে। ঘুড়ে বেড়ান শহর। এসব এখন কলকাতার দর্শকরাও জানে। সেখানকার পত্রিকার শিরোনামেও নিয়মিত তিনি। কারণ, জয়া সেখানে ওদের শ্রাবন্তী, মিমি, ঋতুপর্ণা, পার্ণো মিত্রদের মতোই একজন। আর ক’দিন পর, অর্থাৎ আগামী ঈদেই মুক্তি পাবে জয়ার ‘ভালবাসার শহর’ তথা ‘সিটি অব লাভ’। কাজটি ভীষণ প্রিয় তার। জানিয়েছেন এমনটাই। একটি লোকজ গান সংবলিত ছবিটির মোশন পোস্টার সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে অনলাইনে। অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী আছেন সঙ্গে। অরুণ মুখোপাধ্যায়, সোহিনী সরকারও আছেন। পরিচালক ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী। ‘ফড়িং’ বানিয়ে আলোচনার তুঙ্গে ছিলেন তিনি। জয়াকে এর আগেও সুযোগ দিয়েছিলেন ইন্দ্রনীল, ‘একটি বাঙালী ভূতের গপ্পো’তে। ছবিটি দেখানো হয়েছে জি বাংলা সিনেমায়, গত বছর। কলকাতা থেকে ফেরার আগে ‘আমি জয় চ্যাটার্জি’ ছবির কাজ শেষ করে এসেছেন জয়া, আবির চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে। বাংলাদেশে শেষ করেছেন আরেকটি ছবির কাজ। নাম ‘পুত্র’। পরিচালক সাইফুল ইসলাম মান্নু। মুক্তির মিছিলে থাকা ছবিটি খুব শীঘ্রই হয়ত দেখতে পাবে জয়া ভক্তরা..।
×