ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

চক্রান্ত করে মোসাদ কানেকশন ভোলানো যাবে না

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ৪ জুন ২০১৬

চক্রান্ত করে মোসাদ কানেকশন ভোলানো যাবে না

প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে করতে নিজেই নিজের জালে আটকা পড়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। এখন চারদিকে শর্ষে ফুল দেখছেন। বঙ্গবন্ধুর পৌত্র এবং শেখ হাসিনা ও ড. ওয়াজেদ আলী মিয়ার পুত্র তথ্য প্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা খেয়ে এখন নিজের সংসারকেই (রাজনৈতিক) বিতর্কিত করে তুলেছেন। অথচ জয় এবং তার বোন এবং খালা শেখ রেহানার সন্তানরা পারিবারিক সূত্রে প্রাপ্ত আভিজাত্যের বাইরেও নিজের মেধা, মনন ও জ্ঞানের এমন এক উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, তাদের ছোঁয়া অত সহজ নয়। খালেদা-তারেকের পক্ষে তো নয়ই। খালেদাও জয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে মুসলিম বিশ্ব তথা মানবতার শত্রু ইসরাইলের মোসাদ কানেকশন ঢাকতে পারবেন না। জয় তার জায়গায়ই আছেন এবং থাকবেন। জয়ের ঈর্ষণীয় ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করার লক্ষ্যে বিদেশের মাটিতে নিউইয়র্কে এক এফবিআই সদস্য ভাড়া করেও শেষ রক্ষা হয়নি, বরং উল্টোটা হয়েছে; নিউইয়র্কের আদালতেই বিচার হয়ে সেই ভাড়াটিয়াসহ তার দলের লোক সাজা ভোগ করছে। সাম্প্রতিককালে আবার চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে একই পরিণতির সম্মুখীন হয়েছেন। আগেরবার এফবিআই ভাড়া করার চেষ্টা করেছিলেন। এবার জায়নবাদী ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা (ঘাতক) মোসাদকে ভাড়া করতে গিয়ে এখন রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা খেলেন। এবার কার সাজা হয় কে জানে? দু’দিন আগেও আসলাম চৌধুরীর নাম কেউ জানত না। তাকে তুলে এনে একেবারে দলের শীর্ষ পর্যায়ের যুগ্ম-মহাসচিব বানিয়ে দিল্লী পাঠালেন মোসাদের সঙ্গে দর কষাকষি করতে। লক্ষ্য, শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করা। না, এ পর্যায়েও ধরা। আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির হাস্যোজ্জ্বল ছবি প্রেস ফটোগ্রাফারদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে খালেদা জিয়াকে এমন গর্তে নিপতিত করেছে যে, এ থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই কঠিন। আর তাই একটি কাউন্টার দাঁড় করাতে হবে। বলে দিলেন জয়ের সঙ্গে সাফাদির দেখা হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসিতে। জয় সরাসরি এটিকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করার পরও বিএনপির মিথ্যার ঢোল মির্জা ফখরুলের মুখ বন্ধ হচ্ছে না। বস্তুত, বিএনপি যে ধরা খেয়েছে তার দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে মিডিয়াকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এটি তাদের পুরনো স্বভাব। সবচে অবাক করেছে বিবিসি। বিশ্বখ্যাত এই মিডিয়ার সুনাম ছিলÑ তারা সংবাদ প্রচার করে যাছাই-বাছাইয়ের পরই এবং চেক-ক্রসচেক করে। অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম মিডিয়াটি যাছাই-বাছাই না করেই বলে দিল জয়ের সঙ্গে সাফাদির দেখা হয়েছে। এই খবরটি একটি কোয়ার্টার থেকে পরিবেশন করা হয়েছিল এবং মিডিয়ার এথিক্স অনুযায়ী এ জাতীয় কোন খবর পাওয়া গেলে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার সঙ্গে কথা বলার কথা। বিবিসি সে কাজটি করেনি। অথচ ৪৫ বছর আগে আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বিবিসি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে গোপনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, আকাশ বাণী এবং অবশ্যই বিবিসি শুনতাম। আজ সেই বিবিসির এই নৈতিক স্খলন দেখে খারাপ লাগছে। অবশ্য এতে অবাক হবার কিছু নেই। যেদিন থেকে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলো সেদিন থেকে পশ্চিমা বেশ কিছু মিডিয়া বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তারা তথাকথিত কিছু মানবাধিকার সংগঠন এবং মিডিয়া ওয়াচ নামের সংস্থার সঙ্গে সুর মিলিয়ে প্রথমে বলতে থাকে বিচার আন্তর্জাতিক মানের হচ্ছে না। যখন বিচারের রায়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা শুরু হলো তখন বলতে শুরু করে বাংলাদেশ ‘ইসলামী লিডার’দের ফাঁসি দিচ্ছে। এমন কথাও কোন কোন মিডিয়া বলেছে- ‘বিরোধীদলীয় নেতাদের’ ফাঁসি দিচ্ছে। অথচ যে আইনে বিচার করা হচ্ছে তা হলো ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বিচার আইন’। আইনটি করেন স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭৪ সালে এবং সঙ্গে সঙ্গে ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন। বঙ্গবন্ধু সরকার ঐ আইন অনুযায়ী ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচারকার্য শুরু করার ব্যবস্থা করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী জামায়াত, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামসহ কিছু ধর্মভিত্তিক উগ্র রাজনৈতিক দল অস্ত্র হাতে পাকিস্তানী মিলিটারি জান্তার সহযোগী হিসেবে গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, মানুষকে গৃহহারা করার মতো মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধ করে। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙালী শহীদ হন এবং পাঁচ লাখ নারী ধর্ষিত এবং অনেককে ধর্ষণ করে করে হত্যা করা হয়। স্বাধীন হলেও যাতে বাংলাদেশ মেধাশূন্য থাকে সেজন্য বিজয়ের পূর্ব মুহূর্তে তিন শতাধিক বরেণ্য বুদ্ধিজীবীকে বাসা থেকে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। তখন এক কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয় এবং রিফুজি ক্যাম্পে ক্যাম্পে মানবেতর জীবনযাপন করে। অনেকে রোগেশোকে মৃত্যুবরণও করে। এসব অপরাধে বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় প্রায় ৩৯ হাজার গ্রেফতার হয়, ১১ হাজারের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়া হয় এবং তাদের মধ্যে মৃত্যুদ-, যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয় প্রায় ৭ শত যুদ্ধাপরাধীর। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে মিলিটারি জিয়া ক্ষমতায় এসে দালাল আইন বাতিল করে সকল সাজাপ্রাপ্ত এবং বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীকে মুক্ত করে দেয়। বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা সেই ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বিচার আইন অনুযায়ী ঢাকার হাইকোর্টের পাশে ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনাল’ গঠন করে বিচারকার্য শুরু করেন এবং ট্রাইব্যুনাল স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচার করে দালাল-রাজাকার বাহিনী প্রধান গোলাম আযমসহ কয়েককে মৃত্যুদ-, আমৃত্যু কারাবাসের সাজা প্রদান করেন। তাদের মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য দায়ী আলবদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী, তার সহযোগী কাদের মোল্লা, মুজাহিদী, কামারুজ্জামানসহ কয়েকজনকে মৃত্যুদ- দিয়ে কার্যকর করা হয়। ঠিক তখনি পশ্চিমা অনেক দেশ ও মিডিয়া বলতে শুরু করে ইসলামিস্ট লিডারদের ফাঁসি দেয়া হচ্ছে (?) অথচ তারা কেউ ইসলামিস্ট লিডার হিসেবে বিচারের সম্মুখীন হয়নি, হয়েছে যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী, নারী ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধী হিসেবে। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গঠিত নুরেমবার্গ ট্রায়াল বা টোকিও ট্রায়ালে যেখানে আপীলেরও কোন সুযোগ ছিল না সেখানে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে কেবল আপীল বিভাগে আপীলের সুযোগই দেয়া হয়নি, রিভিউ এবং রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন করে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগের বিধান পর্যন্ত করে দেয়া হয়। বিবিসির মতো মিডিয়া এসব জানত না তা নয়, অবশ্যই জানত। তারা কেন এখন বিরোধিতা করছে তাও কেবল তারাই বলতে পারবে। তবে তাদের ভূমিকা এখন উগ্রবাদী জঙ্গীদের পক্ষে চলে যাচ্ছে! বিএনপি-জামায়াত নেত্রী খালেদা জিয়াও একই সুরে কথা বলছেন। সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে একপেশে অভিযোগের ভিত্তিতে একটি জঘন্য রিপোর্ট করার পেছনে কোন মতলব রয়েছে কিনা তাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ, লক্ষ্য করা যাচ্ছে ঐ সব মিডিয়া বাংলাদেশের শান্তিকামী জনগণের চেয়ে শান্তি বিনষ্টকারী উগ্রবাদীদের পক্ষেই বেশি সোচ্চার। অনেকে বেহুদা ‘বাংলাদেশে আইএস আছে’ বলে সত্যি সত্যি ‘আইএস’ আনতে চাচ্ছে; যা বিএনপি-জামায়াত জোটও চাচ্ছে। হ্যাঁ, আইএস বাংলাদেশে নেই, তবে তাদের আদর্শিক অনুসারী হিযবুল মুজাহিদীন, হিজবুত তাহরীর, আনসারুল্লাহ্ প্রভৃতি আছে। তারা স্থানীয় এবং জামায়াতের ছাত্র সংগঠন থেকে ঐ উগ্রবাদীদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। ২০১৩ এবং ২০১৫-এর প্রথম তিন মাস খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন জামায়াত-বিএনপি জোট যেভাবে পেট্রোলবোমায় মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, গাছ কেটেছে, রাস্তা কেটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেও যখন সরকারের পতন ঘটানো গেল না তখন শুরু করল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পুত্রের বিরুদ্ধে নানান কল্পকাহিনী বানিয়ে অপপ্রচার। বিশেষ করে দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে লন্ডনে (পলাতক) পুত্র তারেক রহমানকে যখন কোনভাবেই দেশে আনতে পারছেন না, তার নিজের ও তারেকের মামলাগুলোও সচল রয়েছে, তখন সজীব ওয়াজেদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে যদি কিছুটা ফল পাওয়া যায়! ‘অফেন্স করে ডিফেন্স দেয়ার’ অচল থিওরি বাস্তবায়নে নামে। কিন্তু তা বুমেরাং হয়ে যাচ্ছে। এমনি নিজের সৃষ্ট চক্রান্তের জালে নিজেই আটকা পড়ছেন। ইসরাইলের মোসাদ বাহিনীর কাছে দলীয় প্রতিনিধি পাঠিয়ে সর্বশেষ ধরাটা খেলেন। একেবারে রাম ধরা। আর জয়ের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে লাভ নেই। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তাদের সন্তানদের বিশ্বমানের শিক্ষায় শিক্ষিত বানিেেছন। হাওয়া ভবন বানাতে দেননি। [সংশোধন : গত শনিবার এই কলামে “হাশেম খান, মুনতাসীর মামুন, চাঁদপুরের সন্তান” শিরোনামে অনবধানতাবশত বলেছিলাম “বাংলাদেশের মূল সংবিধানের হস্তাক্ষর হাশেম খানের।” হাশেম খান জানিয়েছেন তার নেতৃত্বে একটি কমিটি হয় এবং তারই তত্ত্বাবধানে লিপিকার বা হাতে লেখেন শিল্পী আবদুর রউফ। তিনি বইয়ের নান্দনিক অলঙ্করণের পরিকল্পনা ও বুক ডিজাইন বা পাতায় পাতায় অলঙ্করণের নেতৃত্ব দেন এবং তার সঙ্গে কাজ করেন শিল্পী জোনাবুল ইসলাম, শিল্পী সমরজিত কর ও আবুল বারক আলভী। তারা বাংলাদেশের ছয় ঋতু, জীবন ও লোকশিল্পের আলোকে প্রতিটি অলঙ্করণ করেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ছিলেন উপদেষ্টা।] ঢাকা ॥ ২ জুন ২০১৬ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি জাতীয় প্রেসক্লাব নধষরংংযধভরয়@মসধরষ.পড়স
×