ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাশেদ আহমেদ শিপলু

এরিক ক্ল্যাপটনের আই স্টিল ডু

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২ জুন ২০১৬

এরিক ক্ল্যাপটনের আই স্টিল ডু

কিংবদন্তির ব্রিটিশ ব্লুজ-রক গীটারবাদক এরিক ক্ল্যাপটন গত ৩০ বছর ধরে ব্যান্ড দল ব্লুজব্রেকার, ক্রিম, ডেরেক এ্যান্ড ডোমিনোসের সঙ্গে যেমন অনুষ্ঠান পরিবেশন করেছেন তেমনি আবার তাৎপর্যপূর্ণ একক ক্যারিয়ার অনুসরণ করেছেন। গত ২০ মে মুক্তি পেয়েছে তাঁর ২৩তম একক স্টুডিও এ্যালবাম ‘আই স্টিল ডু’ এ্যালবামটিতে ক্ল্যাপটন রচিত নতুন গানের সঙ্গে যুক্ত আছে ডাইলান, রবার্ট ননসন ও আরও কয়েকজন সঙ্গে যুক্ত আছে ডাইলান, রবার্ট ননসন ও আরও কয়েকজন স্বনামধন্য শিল্পীর ক্লাসিক গানের প্রচ্ছদ সংস্করণ যা তার একান্ত নিজের স্টাইলে পূর্ত হয়েছে। আরও একটা মস্ত খবর হলো এই রেকর্ড বের করতে গিয়ে তিনি ‘হলে অব ফেম’ রেকর্ড প্রযোজক গ্লিন জনসের সঙ্গে পুনর্মিলিত হন প্রায় ৪০ বছর পর। ‘আই স্টিল ডু’ এলবামের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে ৭১ বছর বয়স্ক এই গীটার কিংবদন্তি ব্লুজ মিউজক সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই জানেন এবং শ্রোতাদেরও তা পরিবেশনের ক্ষমতা রাখেন। প্রযোজক গ্লিন জনস ক্ল্যাপটনের গীটার বাজানোর প্রতিভার ব্যাখ্যা করে বলেন, সেটা এমন কিছু যা তাঁর হৃদয় থেকে উৎসারিত হয়ে সরাসরি আঙ্গুলে চলে আসে। তাঁর মস্তিষ্ক পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। সত্তরোর্ধ হলেও তিনি ছন্দের একটি ধাপও হারিয়ে ফেলেননি যার জন্য লিওরিকারের ‘এলাবামা উওম্যান ব্লুস’ এবং রবার্ট জনস্টোনের ‘স্টোন্স ইন মাই পাসওয়ে’ এখনও স্বচ্ছন্দে ঝঙ্কার তুলেন গীটারে। গ্লিন জনসের সঙ্গে ক্ল্যাপটনের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তবে শুরুটা তেমন মধুর ছিল না। তারা প্রথম একত্রে কাজ করেন ১৯৭৩ সালে ক্ল্যাপটনের রেইনোব কনসার্ট প্রকল্পে। এ সময় ক্ল্যাপটন হেরোইন আসক্ত হয়ে পড়লে জনস হতাশ হয়ে এই প্রকল্প ছেড়ে চলে যান। পরে তাদের পুনর্মিলন ঘটে ১৯৭৭ যখন জনস ক্ল্যাপটনের হিট এ্যালবাম ‘সেøাহ্যান্ড’ রেকর্ড করেন। সেই সময় থেকে ৪০ বছর পর আবার এই জনসনের হাত দিয়ে তাঁর সর্বশেষ এ্যালবাম ‘আই স্টিল ডু’ এর প্রযোজনা। ক্ল্যাপটন শুধু গীটারবাদকই নন, তিনি কণ্ঠশিল্পী ও গীতিকারও। একক শিল্পী হিসেবে একমাত্র তিনিই তিনবার ‘রক এ্যান্ড রোল হল অব ফেম’ এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। পৃথক পৃথকভাবে তিনি ইয়ার্ডবার্ডের সদস্য ছিলেন। ক্রিমেরও সদস্য ছিলেন। ক্ল্যাপটনের সর্বকালের সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী গীটারবাদকদের একজন বসেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে। রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ একশ জন গীটারবাদকের তালিকায় ক্ল্যাপটনের স্থান ছিল দ্বিতীয় আর গিবসনের সর্বকালের সেরা ৫০ জন গীটারবাদকের তালিকায় তিনি ছিলেন চতুর্থ। ২০০৯ সালে টাইম ম্যাগাজিনের দশজন শীর্ষ ইলেকট্রিক গীটারবাদকের মধ্যে ক্ল্যাপটনকে পঞ্চম স্থান দেয়া হয়। ১৯৬০ এর দশকের মাঝামাঝি ক্ল্যাপটন ইয়ার্ডবার্ডস ছেড়ে জন মেয়ল এ্যান্ড দ্য ব্লুজ ব্রকারের সঙ্গে ব্লুজসঙ্গীত বাজাতে যান। মেয়ল ছেড়ে দেয়ার পরপরই ক্ল্যাপটন ড্রামবাদক জিংগার বেকার এবং বেসবাদক জ্যাক ব্রুসকে নিয়ে পাওয়ার টামো ক্রিম গঠন করেন। আরও পরে তিনি বেকার, স্টিভ উইনউড এবং বিক গ্রেচকে নিয়ে গঠন করেন ব্লুজ রক ব্যান্ড ব্লাইন্ড ফেইথ। ৭০ দশকের অধিকাংশ সময়জুড়ে ক্ল্যাপটনের সঙ্গীতে জে জি কেল ও বব মার্লির অর্ধ প্রফুল্ল, অর্ধ প্রমত্ত সুরের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটো রেকডিং হলো ‘লায়লা’ এটি ডেরেক এ্যান্ড দি ডোমিনোর সঙ্গে রেকর্ড করা হয়েছিল। অন্যটি হলো রবার্ট জনসনের ‘ক্রসরোড’ যা রেকর্ড করা হয়েছিল ‘ক্রিমের’ সঙ্গে। ১৯৯১ সালে পুত্র কনোরের মৃত্যুর পর ক্ল্যাপটনের শোক ‘টিয়াস ইন হেভেন’ সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে মূর্ত হয়ে উঠেছিল। তাঁর ‘আনপ্লাগড’ নামক এ্যালবামে এই গানটি বিশেষ স্থান পেয়েছিল। সঙ্গীতের ভুবনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ক্ল্যাপটন ১৮ বার গ্রামি এওয়ার্ড লাভ করেছেন।
×