ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মধুমাসে বিষের আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২ জুন ২০১৬

মধুমাসে বিষের আশঙ্কা

মোঃ রফিকুল ইসলাম আভিধানিক অর্থে চৈত্র মাস মধুমাস হলেও জৈষ্ঠ মাসই বিবিধ সুমিষ্ট ও রসালো ফলের সম্ভার ও সরবরাহের কারণে মধুমাস হিসেবে পরিচিত। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, পেঁপে, তরমুজ, জামরুল, আনারস, লেবু, লটকন ইত্যাদি ফলের ভরামৌসুম এ জৈষ্ঠ মাস। বাংলাদেশে ফলের সমৃদ্ধি থেকেই- ‘এই সুন্দর ফুল, সুন্দর ফল, মিঠা নদীর পানি- খোদা তোমার মেহেরবানী’ বন্দনাগীতিতেও ফল প্রসঙ্গটি সার্থকভাবে এসেছে। আম-জাম-কাঁঠালের বিশেষায়িত কিছু জাত ব্যতীত দেশ জুড়ে যত গাছ ততো ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের এসব ফল। এ সত্যিই এক অবাক করা বৈচিত্র্য। এ ফল-সম্ভার শুধুমাত্র আমাদের রসনাতৃপ্তি ও স্বাস্থ্য-পুষ্টির উপায়ই নয়, তা আমাদেরকে দিয়েছে মধুময় আত্মীয়তা ও সম্প্রীতির এক অনন্য কৃষ্টি-সংস্কৃতি। এ মধুমাসেই জামাইবাড়ী ও ঘনিষ্ট আত্মীয়বাড়ীতে প্রচুর আম-কাঁঠাল পাঠানোর রীতি আবহমান কাল থেকে চলে আসছে। এ মধুমাসের সুমিষ্ট ফলাহারকে কেন্দ্র করে বাবা-মা বিবাহিত মেয়েদেরকে নাইওর আনে, আবার জামাইকে নিমন্ত্রণ করে জামাই-ষষ্টী পালন করে। এ সময়ে শিশুদের মামা-বাড়ী বেড়ানো যেন শৈশবের সেরা উৎসব। আমাদের শৈশবেরও সেরা এক নস্টালজিয়া মধুমাসে মামাবাড়ী বেড়ানো। কবি সার্থকভাবেই রচনা করেছেন, “...ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ, পাকা জামের মধুর রসে রঙীন করি মুখ”। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রীষ্মকালীন ছুটিকেও অলিখিতভাবে অনেকেই আম-কাঁঠালের ছুটি হিসেবেই আখ্যায়িত করে থাকেন। আমাদের শৈশবকেও আনন্দিত ও রঙীন করেছে এ মধুমাস। গাছ বেয়ে এবং ঢিলিয়ে-কুড়িয়ে আম-জাম সংগ্রহ করার সুখ-স্মৃতি কেউ কি ভুলতে পারে? কেউ কি ভুলতে পারে আম-আঁটি ভেঁপুর কথা ? কিন্তু সুমিষ্ট ফল-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের মধুমাসকেন্দ্রিক সব ঐতিহ্য ও আনন্দ আজ দিন দিন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ মানুষই কোন না কোন ফল বাজার থেকে কিনে খায়। বাণিজ্যিক চাষাবাদ ও পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে ফলের সরবরাহও বেড়েছে সর্বত্র। কিন্তু ফল কিনে-খেয়ে স্বস্তি ও শান্তি নেই। কারণ, ফলের মুকুল থেকে বাজার পর্যন্ত মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক ও ফরমালিন। কেউ বুঝেশুনে অতিরিক্ত মুনাফার আশায়, আবার কেউ না বুঝে ওষুধ হিসেবে। ভোক্তাগণও অজ্ঞতায়, সরল বিশ্বাসে বা অনোন্যপায় হয়ে খাচ্ছেন-খাওয়াচ্ছেন এসমস্ত বিষাক্ত ফল-মূল। ফলস্বরূপ স্বাস্থ্য ও পুষ্টির পরিবর্তে কপালে জুটছে ক্যান্সার, জন্ডিস, কিডনী ও ফুসফুস সংক্রমণ, ডায়াবেটিস, লিভার সিরোসিস, পুরুষত্বহীনতা, বন্ধ্যাত্ব, বিকলাঙ্গতা, গ্যাস্ট্রিক-আলসারের মতো জটিল ব্যাধি। অথচ আমাদের আছে নিরাপদ খাদ্য আইন, বিএসটিআই, প্রশাসন, পুলিশ ও বিভিন্ন প্রতিরোধকারী সংগঠন ; তবু বন্ধ হচ্ছে না বিষ মেশানোর মতো জীবন-বিধ্বংসী অপরাধ। আসুন, সবাই মিলে স্বাস্থ্য-পুষ্টির এ সর্বনাশ থেকে জাতিকে রক্ষা করি! দুর্গাপুর, নেত্রকোনা থেকে
×