ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মো. শাহজাহান

আমাদের বাজেট প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২৯ মে ২০১৬

আমাদের বাজেট প্রত্যাশা

আসছে বাজেট। বাজেট নিয়ে মানুষের জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। বাজেটে কোন জিনিসের দাম বাড়বে বা কমবে তা নিয়েই আগ্রহ সাধারণ মানুষের।প্রাক-বাজেট আলোচনার মধ্য দিয়েই শুরু এর আগমনী বার্তা।সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে সফল খাত হচ্ছে ‘সেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা’। এ খাতটি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কর্তৃক সর্বোচ্চ সফল খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং টেকসই দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করছে। তাই প্রত্যাশা আগামী বাজেট হিসাবে সেবা খাত এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীগুলো চলমান ও শক্তিশালী করা হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর সুফলভোগীদের যাতে এই কার্যক্রমের সুযোগগুলো মধ্যস্বত্ব¡ভোগীদের কালো ছায়া থেকে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্ধার করা যায় তার সর্বোত্তম ব্যবস্থা নিতে হবে।বাজেটে প্রতিবছরই বরাদ্দ বাড়ছে। এটা খুশির বিষয়। তবে মানব কল্যাণেই যাতে বেশি ব্যয় হয় সেদিকেই বেশি নজর দেয়া উচিত।সরকার কৃষির ওপর শুরু থেকেই অনেক গুরুত্ব দিয়ে আসছে। কৃষির উন্নয়নে বাজেটে ধারাবাহিকভাবে নানা প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। ফলে দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু দুর্ভাগ্য বলতে হবে যাদের ওপর ভর করে আমাদের এই সাফল্য, সেই কৃষকরাই ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত, ঋণের জালে জর্জরিত। ঋণের দায়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। উদ্যম হারিয়ে ফেলছে। এদের জন্য এবারের বাজেটে কৃষিঋণ মওকুফের ব্যবস্থা করা উচিত।সরকার এবারের বাজেটে কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ফসল কিনে নেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ একটি যুগোপযুগী পদক্ষেপ। কিন্তুু জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ নেই। এর ফলে শিক্ষার্থীসহ সামগ্রিকভাবে শিক্ষা খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়নের জন্য বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা দরকার।নাটক, টেলিফিল্ম, সিনেমা, মিউজিক ভিডিও, বিজ্ঞাপন চিত্র, প্রামাণ্য চিত্র, আলোচনা অনুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান, বিশেষ অনুষ্ঠানসহ সব ধরনের অনুষ্ঠানে বাজেট কমে গেছে ।বেতার ও টেলিভিশনের শিল্পী, সুরকার, গীতিকার, অভিনেতা, সঙ্গীত পরিচালক, পা-ুলিপি রচয়িতা, নির্মাতা, নৃত্য শিল্পী, যন্ত্র শিল্পী, নাট্যকার, নাট্য নির্দেশক, পরিচালক, আলোচকদের জন্য যে সম্মানী বাজেট বরাদ্দ থাকে তা প্রকাশ করার মতো নয়। অনেক ক্ষেত্রে তা যাতায়াতের খরচের মধ্যেও পড়ে না। অর্থ মন্ত্রণালয় এ খাতে যা বরাদ্দ দেন তা অত্যন্ত নগণ্য ও সীমিত। সরকার বাজেটে এদিকটায় বেশি নজর দেয়া উচিত।দেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে হওয়ার পথে। এজন্য বাজেটে আরও বেশি সুযোগ সুবিধা চান এ খাতের বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তারা।সব মন্ত্রণালয়ের সব আইসিটি কর্মকা কে ডিজিটাল বাংলাদেশ নামে আলাদা করে চিহ্নিত করে আলাদাভাবে বাজেট বরাদ্দ করা উচিত।গ্রামে গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ থাকা দরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাসরুম ডিজিটাল করার জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ থাকবে।দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী হলেও অর্থনৈতিক কর্মকা-ে তাদের অবদান তুলনামূলক কম। তাই অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিশেষ সহায়তা জরুরী। ব্যাংক, বীমা, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সেলফোন অপারেটর, মার্চেন্ট ব্যাংক ও সিগারেট কোম্পানি ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩৫ শতাংশ করপোরেট কর দেয়ার বিধান রয়েছে। এটিকে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনা প্রয়োজন।প্রতিবছরই বাজেট আসে। মার্চ-এপ্রিল থেকেই টের পাওয়া যায় যে বাজেট আসছে। সব দাবি সব প্রত্যাশা সরকার হয়ত পূরণ করতে পারে না। সরকার সবার প্রত্যাশাগুলো বিবেচনায় নিয়ে সাধ্যের মধ্যে যতটুকু প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব তা করে দেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা।
×