ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও ভিডিও পোস্ট করে মডেল সাবিরার আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৫ মে ২০১৬

ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও ভিডিও পোস্ট করে মডেল সাবিরার আত্মহত্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর রূপনগরে নিজ ফ্ল্যাটে আত্মহত্যা করেছেন মডেল সাবিরা হোসাইন (২১)। আত্মহত্যার আগে সাবিরা তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস ও ভিডিও পোস্ট করেন। তাতে ধারণা করা হচ্ছে প্রেমঘটিত কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনার পর পুলিশ মডেল সাবিরার প্রেমিক নির্ঝর সিনহা রওনককে গ্রেফতার করেছে। এদিকে আরও দুই নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার পুলিশ ও মেডিক্যাল সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে মিরপুরের রূপনগর হাউজিংয়ের ১২ নম্বর রোডের ৫ নম্বর ভবনের নিজ ফ্ল্যাটে মডেল সাবিরা হোসাইনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। আত্মহত্যার আগে সাবিরা ফেসবুকে পোস্ট করা সুইসাইড নোটে তার মৃত্যুর জন্য নির্ঝর সিনহা রওনক নামের এক যুবককে দায়ী করে লিখেছেন, আমার মৃত্যুর জন্য সে (নির্ঝর) দায়ী। যদি আমি মারা যাই। তাহলে এর দায় তার। রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ শহীদ আলম জানান, নিহত সাবিরা বিভিন্ন বিজ্ঞাপন চিত্রের মডেল হিসেবে কাজ করতেন। তার বাবার নাম মনির হোসেন। গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লার হাজীগঞ্জে। তিনি রূপনগরের ওই ফ্ল্যাটে একাই ভাড়া থাকতেন। ওসি জানান, নিজ ফ্ল্্যাটের বেডরুমের ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো সাবিরার মৃতদেহ ঝুলে ছিল। মৃতদেহের পাশ থেকে তার ফেসবুকে একটি সুইসাইড নোট ও সাড়ে ৯ মিনিটের একটি ভিডিও বার্তা জব্দ করা হয়েছে। পরে সাবিরার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত সাবিরার মা কাজী দিলশাদ বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচিত এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আইন মামলা করেছে। পরে সাবিরার প্রেমিক নির্ঝর সিনহা রওনককে আটক করা হয়। প্রকাশিত ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে একটি ছুরি হাতে নিয়ে নিজের পেট ও গলা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন সাবিরা। তাকে মানসিকভাবে অনেক অস্থির বলে মনে হচ্ছিল। শুরুতে বলতে শোনা যায়, আমি কিচ্ছু করতে পারব না। তারপর হাতে একটি ছুরি নিয়ে বার বার পেটে ও গলায় চাপ দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছু করতে পারেন না। বার বার বলতে শোনা যায়, কাটেও না। আমি ব্যর্থ। ওকে নেক্সট অ্যাটেম্পট নেব। আত্মহত্যার আগে নির্ঝর সিনহা রওনক নামের একজনের উদ্দেশে সাবিরা লেখেন, আমাকে ব্যবহার করবে, সেক্স করবে। আর আমি সরে যাব, এটা তো হতে পারে না। বিয়ের কথা বললে তোমার পরিবার অসুস্থ হয়ে যায়। আর সেক্সের কথা বললে সব ঠিক হয়ে যায়। ভাল আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করছি। নির্ঝরকে ট্যাগ করে সবশেষে তিনি লেখেন, আমার মৃত্যুর জন্য সে দায়ী। যদি আমি মারা যাই, তাহলে এর দায় তার। পুলিশের ধারণা, নির্ঝর সিনহা রওনক নামে ওই যুবকের সঙ্গে প্রেমের জের ধরেই আত্মহননের পথ বেছে নেন মডেল সাবিরা। নির্ঝর সিনহা পেশায় একজন ফটোগ্রাফার। রিফ্লেকশন নামে তার একটি ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। তাদের দুজনের মধ্যে ‘ওপেন রিলেশনশিপ’ থাকলেও বিয়ের ব্যাপারে অসম্মতি ছিল নির্ঝরের পরিবারের। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে সাড়ে ৯ মিনিটের ভিডিও বার্তায় ঘোষণা দিয়ে আত্মহত্যা করেন সাবিরা। অন্যদিকে এদিন ভোরে একই থানাধীন রূপনগর বেড়িবাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ড সংলগ্ন রাস্তার পাশ থেকে অজ্ঞাত (২২) এক তরুণীর লাশ উদ্ধার হয়েছে। রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ শহীদ আলম জানান, ভোরের দিকে রূপনগর বেড়িবাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ড সংলগ্ন রাস্তার পাশ থেকে ওই লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে কোন যানবাহনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। অপরদিকে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা থেকে পড়ে সখিনা বেগম (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় তার সঙ্গে আট বছরের ছেলে ইউসুফ পড়ে গিয়ে সামান্য আহত হয়। নিহত সখিনা সন্তানদের নিয়ে কেরানীগঞ্জের বাঘাসুর এলাকায় থাকতেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে মোহাম্মদপুর তিন রাস্তায় অটোরিক্সাটি মোড় নিতে গিয়ে উল্টে যায়। এ সময় সখিনা বেগম গুরুতর আহত হন। এতে ওই মহিলার ছলে ইউসুফ সামান্য আহত হয়। পরে এক পথচারী তাদের উদ্ধার করে প্রথমে শিকদার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে থেকে তাদের উদ্ধার করে দুপুর ১টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আনা হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক সখিনাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে আহত শিশু ইউসুফ মায়ের নিথর দেহের পাশের কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানায়, তাদের বাসা কেরানীগঞ্জের বাঘাসুর এলাকায়। সকালে মায়ের সঙ্গে মোহাম্মদপুরে বড় বোন আফসানার বাসায় যাচ্ছিলেন। বোনের বাড়ির অদূরে রিক্সা থেকে মা ও আমি রাস্তা পড়ে যাই। এরপর লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে আনে। এদিকে দুর্ঘটনার সংবাদ শুনে নিহতের আত্মীয় বাবুল মিয়া ঢামেক হাসপাতালে ছুটে আসেন। তিনি জানান, শিশু ইউসুফ গর্ভাস্থায় থাকাকালে সখিনার স্বামী বাবুল মিয়া মারা যান। সখিনার তিন মেয়ে ও এক ছেলের জননী। ঢাকা মেডিক্যাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোজাম্মেল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, ময়নাতদন্তের জন্য সখিনার লাশ ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়েছে।
×