ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পঁচিশে বৈশাখে শিল্পীদের ভাবনা

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৮ মে ২০১৬

পঁচিশে বৈশাখে  শিল্পীদের ভাবনা

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা : বাঙালী যতদিন থাকবে রবীন্দ্রনাথ ততদিন নতুন নতুন রূপে সবার হৃদয়ে থাকবে। প্রতিবার রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে আমাদের ভেতরের আমিত্ত্বকে প্রকাশ করার সুযোগ পাই। আমরা হানা-হানি চাই না। আমরা শান্তির পৃথিবী চাই। রবীন্দ্রনাথ আমাদের আলোর দিশারী। নতুন প্রজন্ম রবীন্দ্রনাথের লেখনী বা গানের মাধ্যমে নতুন পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখবে, এটাই প্রত্যাশা। তপন মাহমুদ : শুধুমাত্র জন্মদিন ও মৃত্যুদিনকে ঘিরে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করতে হবে এমন নয়। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথকে প্রতি মুহূর্তে প্রয়োজন। প্রতিক্ষণে রবীন্দ্রনাথ আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে। প্রতিবছর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন আসে। তবে আজ দেড়শ বছর পেরিয়েও রবীন্দ্রনাথ আমাদের কাছে বিশেষ করে বাঙালীদের কাছে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। তবে এই দিনকে কেন্দ্র করে যেহেতু অনেক কিছুই আবর্তিত হয়ে থাকে তাই এদিনেই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সকল সচেতন বাঙালী সমাজ। বাংলাভাষাকে সমৃদ্ধ করে বিশ্বে পরিচিতি ঘটানোর মতো যে কাজকে তিনি জয় করেছেন, যতদিন বাঙালী থাকবে ততদিন স্মরণ করবে এই অসাধারণ ব্যক্তিত্বকে। আমাদের হৃদয়ের অস্তিত্বে রবীন্দ্রনাথ সবসময় মিশে আছেন, এ উপলব্ধি কেউ বুঝতে পারে কেউ পারে না। কোন কিছু পাওয়ার প্রত্যাশায় নয়, সবাইকে নিয়ে সমষ্টিগতভাবে এই অস্থির সময়ে রবীন্দ্রনাথের বাণী পৌঁছে দিতে পারি সেটাই হবে মঙ্গল। মিতা হক : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী পেরিয়ে ১৫৫তম শুভ জন্মবার্ষিকীতে পদার্পণ বাঙালীর ইতিহাসে এমনই একটি অধ্যায় যার মূল্য অপরীসিম। প্রতিবছর শিল্পচর্চার নবচেতনার সূচনা হয় এ জন্মদিনটিকে ঘিরে। কবিগুরু তো সব সময় চিরনূতন। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য-সঙ্গীতের মাধ্যমে সকল দীনতা হীনতার অবসান ঘটিয়ে সুন্দর স্নিগ্ধ শান্তিময় এক পৃথিবীর কামনা করেছেন যা সকলের জন্য মঙ্গলময় এবং সুখকর। আমরা বাঙালীরা ধন্য এবং গর্বিত এ কারণে যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো একজন মহামানব বাঙালীর ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন। বাঙালীকে বিশ্বের কাছে স্বমহিমায় পরিচিত করানোর দায়িত্ব তিনিই প্রথম নিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্মের মধ্যে গানই সর্বশ্রেষ্ঠ। এ কথা স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিভিন্ন লেখনীতে তুলে ধরেছেন। তিনি ভারতীয় সঙ্গীতের বিশাল ঐতিহ্যেরই ধারাবাহিকতায় বাঙালীর চিরায়ত সঙ্গীত রচনা করে গেছেন। সমসাময়িক সঙ্কটময় জীবনের বিপর্যয় কাটিয়ে মানুষের কলাণের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা তাঁর গান। পাপিয়া সারোয়ার : সব সময়ই রবীন্দ্রনাথ প্রাসঙ্গিক। তিনি আলাদা কারও নয়। সবার হৃদয়ে আছেন। তিনি আমাদের পথচলার সাথী। শুধু জন্ম-মৃত্যু দিনকে ঘিরে রবীন্দ্রনাথের আবর্তন নয়। সব সঙ্কট, বাঁধা এবং উত্তরণের পথ আমরা তাঁর কাছ থেকে পাই। আমরা প্রতি মুহূর্তে রবীন্দ্রনাথ থেকে অনুপ্রাণিত হচ্ছি। মানুষের কল্যাণে রবীন্দ্রনাথ আমাদের জীবনসঙ্গী। সব অবস্থায়ই রবীন্দ্রনাথের প্রয়োজন রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের ‘দিকে দিকে নাগিনীরা ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস, শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস’, বর্তমান সময়ে এটা বেশি প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’ গানটির মূল তাৎপর্য হলো হে প্রভু তুমি আমাকে শান্ত করে দাও। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্ম দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথকে আরও সুগম করে তোলে। তাঁর গান আমাদের শান্তি দিতে পারে। শুধু গান নয়, তার কবিতা ও বিভিন্ন লেখা সব সময়ই আমাদের পথ চলার সাথী। বুলবুল ইসলাম : রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গের সময় যে গান লিখেছিলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে, ৬৯ সালের গণভ্যুত্থানে এবং এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন সঙ্কটে আমরা গেয়ে থাকি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের সুখ-দুঃখের অনুপ্রেরণা। আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধে তাঁর গানে যেমন উদ্বুদ্ধ হয়েছি, তেমনি আনন্দেও তাঁর গানে নিজেদের সিক্ত করেছি। উনিশ শ তের সালে নোবেল বিজয়ের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ এবং সারা বিশ্বকে জানান দিয়েছিলেন বাঙালীও পারে তার নিজস্ব ঐতিহ্যের মাধ্যমে বিশ্ব জয় করতে। আর তাইতো তাঁর জন্মের ১৫০ বছর পরেও বাঙালীরা তাঁকে ছাড়া অচল, বাঙালী জাতির জীবনে এমন কোন মুহূর্ত নেই যেখানে তিনি নেই। আমিও কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই, যুগের সঙ্গে অনেক কিছুই বদলাবে কিন্তু কবির গান কখনোই বদলাবে না। রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীতে আমার একটাই একান্ত কামনা, সমস্ত পৃথিবীর মানুষের মধ্যে শান্তি বিরাজ করুক। দূর হয়ে যাক-হানাহানি, নৃসংসতা। দেশ ও পৃথিবী এগিয়ে যাক প্রগতির পথে। অদিতি মহসিন : আমি যেহেতু রবীন্দ্রনাথের গান বেশি করে থাকি সেই ক্ষেত্রে রবীন্দ্রসঙ্গীতেরই শিল্পী। দীর্ঘ দেড়শ বছর ধরে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। কিন্তু এবারে এই জন্মবার্ষিকীর তাৎপর্য ছিল কিছুটা ভিন্ন ধরনের। বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে এক বছর ধরে রবীন্দ্র সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী পালন করল, এটা ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে থাকল। এ ধরনের রবীন্দ্র আয়োজন আগে কখনও হয়নি। এ উপলক্ষে আমি দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন জায়গান রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেছি। রবীন্দ্রনাথের প্রতি মানুষের যে আকর্ষণ আমি লক্ষ্য করেছি সেটা অতুলনীয়। প্রত্যেক অনুষ্ঠানে মানুষের উপস্থিতি এত বেশি ও প্রাণসচ্ছল এটা কল্পনারও অতীত। এতে বোঝা যায় রবীন্দ্রনাথের প্রতি সবার আগ্রহ কেমন। রবীন্দ্রনাথ আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। বাঙালী জাতি যতদিন থাকবে রবীন্দ্রনাথ ততদিন তাদেরই মধ্যে বেঁচে থাকবে। আতাউর রহমান : সময় যত যাচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ততই নতুন নতুন করে আবিষ্কৃৃত হচ্ছেন। প্রতি মুহূর্তে রবীন্দ্রনাথ প্রাসঙ্গিক। সমস্ত সংস্কৃতি, সভ্যতা, দর্শন, সভ্যতা সঙ্কট সব কিছুতেই আমরা রবীন্দ্রনাথকে পাচ্ছি। রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলে গেছেন আমার গানই শ্রেষ্ঠ। সব মিলিয়ে রবীন্দ্রনাথ আমাদের প্রতি নিঃশ্বাসের সঙ্গে আছেন। নূনা আফরোজ : রবীন্দ্রনাথ সর্বদাই সমসাময়িক। দেশপ্রেম, ব্যক্তিপ্রেম, প্রকৃতি, মনোজগত, সঙ্কট, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটসহ যা কিছু তিনি লিখেছেন তার গুরুত্ব এত বেশি যে সব কিছুই শুধুমাত্র দেড়শ’ বছরে নয়, পাঁচশ’ বছরেও সার্বজনীন থাকবে।
×