ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফুটবলের দেশে ক্রিকেট বিপ্লব!

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৬ মে ২০১৬

ফুটবলের দেশে ক্রিকেট বিপ্লব!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ফুটবলের দেশ জার্মানি। ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, জার্ড মুলার, লোথার ম্যাথাউস কিংবা ফিলিপ লাম-মুলাররা চারবার বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছেন জার্মানিকে। ফুটবল বিশ্বে রাজত্ব করা সেই দেশেই এখন ক্রিকেটের ব্যাপক বিকাশ ঘটতে শুরু করেছে। আর এটা করতে যাচ্ছে খেলা-পাগল শরণার্থীরা। তাদের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল ভলিবল আর ফুটবল খেলতে। কিন্তু শরণার্থীদের দাবি একটাইÑ ‘আমরা শুধুই ক্রিকেট খেলতে চাই।’ গত বছর রাজনৈতিক আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে জার্মানিতে আবেদন করে ৪,৭৬,৬৪৯ জন শরণার্থী। যেখানে ৪০ হাজার ৩৭৪ জন ছিলেন উপমহাদেশের ক্রিকেট পাগল পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের। আফগানিস্তান থেকে যাওয়া শরণার্থীর সংখ্যা ৩১,৯০২ এবং পাকিস্তান থেকে ৮,৪৭২ জন শরণার্থী। আর এই ক্রিকেট-পাগল শরণার্থীরাই জার্মান ক্রিকেট ফেডারেশনে (ডিসিবি) গিয়ে দাবি জানাচ্ছেনÑ ‘আমরা কোথায় খেলব?’ তবে শরণার্থীদের এমন ক্রিকেট-প্রেমের প্রভাব পড়েছে দেশটির বিভিন্ন সমাজকর্মীদের মধ্যেও। শুধু তাই নয়, জীবনে কোনদিন ক্রিকেট খেলেনি এমন অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন ক্রিকেটের প্রতি। এ বিষয়ে ডিসিবির প্রধান নির্বাহী ব্রায়ান মান্টেল বলেন, ‘প্রতিদিনই আমরা কমপক্ষে পাঁচটি করে আবেদন পাচ্ছি, যারা নতুন ক্রিকেট ক্লাব প্রতিষ্ঠার জন্য দাবি জানাচ্ছেন।’ ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো জার্মান ক্রিকেটকে অনুমোদন দেয় ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। কিন্তু দেশটিতে এখনও ক্রিকেটের অবস্থা হাঁটিহাঁটি পা-পা। চার বছর আগে ডিসির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ব্রায়ান মান্টেল। তার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে জার্মানির ক্রিকেট। ২০১২ সালে জার্মানিতে ক্লাবের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭০টি। আর দেশটিতে নিবন্ধনকৃত ক্রিকেটারের সংখ্যা ছিল ১৫০০। আর জার্মানিতে ক্রিকেটারের সংখ্যা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজারে। আর ক্লাবের সংখ্যা ২৫০টি। শুধু তাই নয়, গত সপ্তাহেই জার্মানির ক্রিকেট ফেডারেশন ১০০টি নতুন ক্লাবের অনুমোদন দিয়েছে। তবে এ মুহূর্তে ডিসিবির চ্যালেঞ্জ নতুন করে গঠিত শরণার্থীদের উপযুক্ত জায়গায় মাঠ তৈরি করে দেয়া। যদিও বা প্রাথমিকভাবে কোকোনাট ম্যাটস দিয়ে তার সমাধান করার উপায় বের করেছে জার্মানি। যেখানে আইসিসিও তাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। চলতি বছরেই ১৫ হাজার ইউরো অতিরিক্ত অর্থ সহায়তা করেছে জার্মানিকে। এই মুহূর্তে জার্মান ক্রিকেটকে দারুণভাবে এগিয়ে নিচ্ছে দেশটির অনুর্ধ ১৯ ক্রিকেট দল। যেখানে প্রায় অর্ধেক খেলোয়াড়ই আফগান শরণার্থী। তারা ইতোমধ্যেই জার্মানির আবাসিক সুযোগ-সুবিধা পেতে যাচ্ছে। আর আবাসন সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটারদের এ সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন ব্রায়ান মান্টেল। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের জাতীয় অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেট দলের অর্ধেকই আফগান শরণার্থী, যারা আবাসিক সুযোগ সুবিধা পেতে যাচ্ছে। আর ক্রিকেটারদের এ সংখ্যাটা ক্রমেই আরও বাড়বে। এখন আমরা আয়ারল্যান্ড এবং আফগানিস্তান ক্রিকেটকে অনুসরণ করব। যারা ইতোমধ্যেই টেস্ট ক্রিকেটে খেলার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। আমি ক্রিকেটের ভবিষ্যত নিয়ে খুবই আশাবাদী। যদিও বা আমাদের অনেক কিছুরই অভাব রয়েছে; তারপরও ক্রিকেটের অগ্রগতি নিয়ে আমি আশাবাদী।’
×