ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুনশ্চ ফুটবল

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৫ মে ২০১৬

পুনশ্চ ফুটবল

আপন মহিমায় মহিমান্বিত হয়ে ফিরে আসছে গৌরবের ললাট টীকা নিয়ে বাঙালীর সেরা খেলা হিসেবে খ্যাত ফুটবল। পায়ে পায়ে জড়িয়ে থাকা ফুটবল, গ্রাম বাংলারও প্রাণপ্রিয় খেলা হিসেবে সর্বোচ্চ সমাদর ছিল যার। মাঠ উপচেপড়া দর্শকের মধ্যে খেলা নিয়ে উত্তেজনার কমতি ছিল না এই সেদিনও। যেখানেই মাঠ, সেখানেই ফুটবল আর গোলপোস্ট। এগারোজন করে বাইশ জনের দুটি দলের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলায় দর্শকরা মোহিত হতো। টান টান উত্তেজনার ভেতর গোলের জন্য উল্লাস বা হর্ষধ্বনি ছিল স্বাভাবিক। তবে এই আনন্দের ভেতরও খেলায় হারজিত নিয়ে হাঙ্গামা কম হয়নি। মারদাঙ্গায় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে এদেশে ওদেশে বিদেশে। বিশ শতকে বাঙালী ফুটবলের জন্য অন্তঃপ্রাণ ছিল। সেই ফুটবল আকস্মিকভাবে কোথায় যেন খাবি খেয়ে দৃশ্যের অন্তরালে ধাবিত হয়ে পড়ে। আর তার স্থানে ক্রিকেট এসে দখল করে নিয়েছে বাঙালীর দিন রাত। উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা, আনন্দ আর বিনোদনের এমন প্রাণময় খেলায় বাঙালী আজ মাতোয়ারা শুধু নয়, বিশ্ব ক্রিকেট আদলে আজকে দাপুটে অবস্থানে। অথচ দীর্ঘ সময় ধরে খেলে আসা ফুটবলে বাঙালী বিশ্বসভায় ঠাঁই নিতে পারেনি। দেশীয় ক্রীড়াঙ্গনে ফুটবলও যেন হারিয়ে যাওয়া আসরে পরিণত হয়েছিল। ফুটবলে ইউরোপ যত এগিয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ যেন তত পিছিয়েছে। ফুটবলের রমরমা আসর কোথায় যেন বিলীন হয়ে গেছে। সেই ফুটবল আবার ফিরে এসেছে পায়ে পায়ে। তার অবস্থান আবার ফিরে পাবার জন্য প্রাণান্তকর সে। আর শুধু ছেলেরা নয়, মেয়েরাও এগিয়ে এসেছে ফুটবল মাঠে। দেশে খেলার মাঠের সংখ্যা হ্রাস পেলেও ফুটবল খেলার চর্চা আবার প্রাণ পেয়েছে। তাই দেখা যায়, বাংলাদেশের মেয়েরা আন্তর্জাতিক আসনেও সুনামের সঙ্গে ফুটবল খেলায় নৈপুণ্য ও পারদর্শিতা প্রদর্শন করছে। এমনকি অনুর্ধ-১৪ বালিকারাও আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে। তাজিকিস্তানের দুশানবেতে অনুষ্ঠিত ‘এএফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপের (দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চল) অপরাজিত শিরোপা জিতেছে। ভারতকে ৪-০ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো জয়ী হয়ে শিরোপা অক্ষুণœ রেখেছে। শাবাশ বাংলার বালিকারা। অভিনন্দন সব দুর্জয় খেলোয়াড়দের। তারা আমাদের গৌরব, অহঙ্কার। ভারতের শক্তিশালী দলকে আসরে টানা দু’বার হারিয়ে যে প্রশংসা অর্জন করেছে বাংলার বালিকারা তা অব্যাহত থাকবেই। এবারের আসরে যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা ধরে রাখতেই হবে এবং তা সম্ভবও। বাংলাদেশের বালিকারা আত্মবিশ্বাসের পারদটাকে নিঃসন্দেহে অনেক উঁচুতে তুলে দিয়েছে। আগামী দিনে তা ধরে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি নিষ্ঠাবান হওয়া জরুরী। তবে সার্বিক অর্থে দেশের ফুটবল অঙ্গনে প্রাণের জোয়ার আসেনি সেভাবে। ফুটবল ক্লাবগুলো স্পন্সরের অভাবে তাদের অতীতের গৌরবকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট বেগ পাচ্ছে। মৃতপ্রায় ফুটবল অঙ্গনে প্রাণ সঞ্চারে এগিয়ে এসেছেন একদা খ্যাতিমান ফুটবলার সালাউদ্দিন। জেলা ফুটবল, ক্লাব ফুটবল ও জাতীয় দল এই তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে। দেশের ফুটবলে উন্নয়নের জন্য তার কর্মকুশলতা প্রশংসার দাবি রাখে। বাফুফের সভাপতি পদে তৃতীয় দফার নির্বাচনে তিনি আবারও বিজয়ী হয়েছেন। তারই প্রচেষ্টায় মেয়েদের অনুর্ধ-১৪-এর মতো অনুর্ধ ১৬-তেও ছেলেরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আট বছর আগে যখন তিনি দায়িত্ব নেন, তখন খেলা হতো না। এখন নিয়মিত খেলা হয়। ফুটবল মাঠে আবার ফিরে এসেছে চাঞ্চল্য। নির্বাচনে সালাউদ্দিনের বিজয় সত্যিকারার্থে বাঙালীর ফুটবলের গৌরব ফিরিয়ে আনার পথে অনন্য বিজয়। তার হাত ধরে বাংলার ফুটবল বিশ্বমানে পৌঁছাবে আগামী চার বছরের মধ্যে এমন প্রত্যাশা সবার মতো আমাদেরও।
×