ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

গর্বিত নারী ফুটবলারদের সম্মান জানাল বাফুফে

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৪ মে ২০১৬

গর্বিত নারী ফুটবলারদের সম্মান জানাল বাফুফে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘নোটন নোটন পায়রাগুলি ঝোটন বেঁধেছে ...’ গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যাদের দেখলেই কেন যেন বার বার মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় পড়া এই ছড়ার লাইনটি। ছোটনের ছোট ছোট মেয়েরা একসঙ্গে ঝাঁক বেঁধে এবারও শিকার করেছে দ্বিতীয়বারের মতো। শিকারের নাম? ‘এএফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ’ (দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চল)-এর শিরোপা (এবং সেটা অপরাজিত)। ক্ষীণ সংশয় ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল শিরোপা অক্ষুণœ রাখার প্রত্যয়। দ্বিতীয়টাই হয়েছে। বেঙ্গল টাইগ্রেস দল আবারও গলায় পরেছে বিজয়ের মালা। সুদূর তাজিকিস্তানের মাটিতে জয়ের চিহ্ন এঁকেছে লাল-সবুজের বাহিনী। গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যারা প্রমাণ করলো, তারা যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছে এই শিরোপা। রবিবার তাজিকিস্তানের দুশানবের এ্যাভিয়েটর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ভারতকে ৪-০ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো এই শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। সোমবার রাতে বিমানযোগে তাজিকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফেরে ছোটন বাহিনী। বিমানবন্দরে তাদের বাফুফের কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। করান মিষ্টিমুখও। দলের সাফল্যগাঁথা অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মঙ্গলবার বিকেলে বাফুফে ভবনের কনফারেন্স রুমে তাদের আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেয় বাফুফে। সংবর্ধনার পৃষ্ঠপোষক ছিল বাংলাদেশ সুপার লীগের উদ্যোক্তা সাইফ পাওয়ারটেক। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অ-১৪ জাতীয় বালিকা দলের কোচ, সহকারী কোচ, ম্যানেজার, ফিজিও, কর্মকর্তা এবং সব খেলোয়াড়দের ফুল, সুদৃশ্য ক্রেস্ট এবং নগদ ১৫ হাজার টাকার আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাফুফের নবনির্বাচিত সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ, সাইফ পাওয়ারটেকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তরফদার মোঃ রুহুল আমিন, বাফুফের সদস্য মাহফুজা আক্তার কিরণ, শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর, আমিরুল ইসলাম বাবু, জাকির হোসেন, অমিত খান শুভ্র এবং ফজলুর রহমান বাবুল প্রমুখ। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয় মহিলা ফুটবলের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত সিরাজুল ইসলাম বাচ্চুকে। এছ্ড়াা দলের অধিনায়ক মারজিয়া এবং টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা তহুরা খাতুনকে উৎসাহিত করতে তাদের হাতে একটি নতুন ফুটবল তুলে দেন শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর এবং মহিউদ্দিন আহমেদ মহি এবং অমিত খান শুভ্র। তরফদার রুহুল আমিন বলেন, ‘আমরা মেয়েদের ফুটবলের এই সাফল্যে অনেক খুশি। তাদের ফুটবলের উন্নয়নের জন্য আমরা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে আগ্রহী।’ মহিলা ফুটবল উইংয়ের ডেপুটি চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, ‘অনেক প্রত্যাশা ছিল আমরা ব্যাক টু ব্যাক শিরোপা জিতবো। না জিততে পারলে আমাদের মনোবল ভেঙ্গে যেতো। আমাদের ভবিষ্যত লক্ষ্য হচ্ছে ফিফা অনুর্ধ-১৭ এবং ২০ ফিফা মহিলা বিশ^কাপের মূলপর্বের খেলার যোগ্যতা অর্জন করা।’ দলের অধিনায়ক মারজিয়ার ভাষ্য, ‘বিকেএসপিতে আমরা খুব ভালভাবে ট্রেনিং করেছিলাম। টার্গেট ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। স্যারের (কোচ ছোটন) নির্দেশ মতো চলেছি, খেলেছি, শৃঙ্খলা মেনে চলেছি সবাই। ওখানে আমাদের খেলা দেখে সবাই পছন্দ করেছে। ভারতকে হারিয়ে সবার প্রশংসা পেয়েছি। আমরা আরও সামনে এগিয়ে যেতে চাই। এজন্য সবার সাহায্য-সহযোগিতা চাই।’ বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন বাংলাদেশ দলের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার অন্তরের অন্তঃস্থলের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি তোমাদের প্রতি। তোমাদের এই অসাধারণ সাফল্যে আমি গর্বিত। অভিনন্দন তোমাদের। আশাকরি তোমরা আগামীতে আরও অনেক সাফল্য পাবে। দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। আজকের এই অনুষ্ঠানের সবটুকু আলো, প্রশংসা তোমাদের জন্যই।’ এই আসরে এর আগে গ্রুপ পর্বে (‘বি’ গ্রুপ) ভারতকে ৩-১ এবং নেপালকে ৯-০ গোলে বিধ্বস্ত করে সেমিতে ওঠে বাংলাদেশ। এরপর তাজিকিস্তানকে তাদেরই মাটিতে ৯-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে নাম লেখায় বাংলাদেশের মেয়েরা। এবারের আসরে গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ‘বেঙ্গল টাইগ্রেস’ দল ভারতকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করে। কেননা তারা এর আগে কোন লেভেলের প্রতিযোগিতামূলক খেলাতেই এই দেশটিকে হারাতে পারেনি। সেই একই দলকে হারালো ফাইনালে। ভারতের মতো শক্তিশালী দেশকে একই আসরে টানা দু’বার হারানোর জন্য অবশ্যই প্রশংসা পাবে বাংলাদেশ দল। এই আসরের আগের ভার্সনেও বাংলাদেশ সেন্ট্রাল জোনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। গ্রুপ পর্বে ভুটানকে হারিয়েছিল ১৬-০ গোলে। হারিয়েছিল শক্তিশালী ইরানকেও (১-০)। ভারতের সঙ্গে করেছিল ড্র (১-১)। এপ্রিলে নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্প নির্ধারিত ফাইনালটি হতে দেয়নি। ডিসেম্বরে নেপালেই পুনর্নির্ধারিত ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে (১-০) চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। বিভিন্ন কারণে ২০১৫ সালের ওই শিরোপা জয় বাংলাদেশ বালিকা ফুটবল দলের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এবং স্মরণীয় হয়ে আছে। কেননা মেয়েদের ফুটবলের যে কোন পর্যায়ের টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের এটাই প্রথম শিরোপা। এর আগে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৪ মহিলা দল শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত এই আসরে অংশ নিয়ে তৃতীয় হয়েছিল (ফেয়ার প্লে ট্রফিও লাভ করেছিল)।
×