ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

এ্যালবামের পুনরুজ্জীবন

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৩ মে ২০১৬

এ্যালবামের পুনরুজ্জীবন

পপ তারকা ক্যানি ওয়েস্ট গত ১১ ফেব্রুয়ারি ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে এক পার্টির আয়োজন করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল অংশত তার ‘ঈজি’ ক্লোদিং লাইনের নতুন মৌসুমী পোশাকের পক্ষে প্রচার চালানো এবং একই সঙ্গে তার নতুন এ্যালবাম ‘দি লাইফ অব পাবলো’ উন্মোচন করা। এই এ্যালবামটি তিনি তার ভক্ত অনুরাগীদের সামনে সেই ২০১৪ সাল থেকে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। মঞ্চের কেন্দ্রস্থলে মডেলরা তখনও দাঁড়িয়েছিল তার প্রচারিত নতুন পোশাকে। এ সময় ওয়েস্ট ল্যাপটপ থেকে এ্যালবামের নতুন গান বাজিয়ে শোনান। আর সেটা এমন ভঙ্গিমায় যেন তিনি নিজে নিউইয়র্কের বৃহত্তম হাউস পার্টিতে পপসঙ্গীত পরিবেশন করছেন। দীর্ঘদিন ধরেই ওয়েস্ট তার নতুন এ্যালবামের গানগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করে আসছিলেন। আগের টাইটেল ছিল ‘সো হেল্প মি গড’। সেটা বদলে রাখেন ‘সুইশ’, পরে ‘ওয়েভস’। ট্র্যাক লিস্টও তিনি পরিবর্তন করছিলেন যা শুরু হয়েছিল ১০টি গান দিয়ে। সামাজিক মিডিয়ায় সেটা শেয়ারও করেছিলেন। সেদিন ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে হাজার হাজার এবং টিভি পর্দায় লাইভ অনুষ্ঠান দেখা ২ কোটিরও বেশি ভক্ত অনুরাগীর সামনে এ্যালবামের সঙ্গীতগুলো প্রথমবারের মতো পরিবেশনের সময় তাদের মনে হয়েছিল ‘দি লাইফ অব পাবলোতে যা আছে শেষ পর্যন্ত সেগুলোই তারা শুনছে’। কিন্তু ক্যানি ওয়েস্টের আইডিয়া ছিল অন্যরকম। একদিন পর তিনি টুইট করেন যে এ্যালবামে তিনি আরও কয়েকটি সঙ্গীত যোগ করছেন। দুদিন পর তিনি ‘স্যাটারডে নাইট লাইভ’-এ অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। তৃতীয় দিনে ‘পাবলো’ আবার উঠে আসে স্ট্রিমিং সার্ভিস ‘টাইডাল’ ঘোষণা করে আগামী দশ দিনে পাবলো ২৫ কোটি বার পরিবেশন করা হবে। কিন্তু তাই বলে ক্যানি ওয়েস্টের চমক দেখানো শেষ হয়ে যায়নি। সেদিন বিকেলেই তিনি টুইট করেন ‘ইমা ফিক্স ডলভস’। পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ ধরে তিনি মিক্স বদলান, লিরিক বদলান এমনকি অতিথি তালিকাও বদলান। তার এই কা-কারখানাকে অনেকেই হয়ত যাচ্ছেতাই বলে উড়িয়ে দেবে। কিন্তু ওয়েস্ট একে তার উদ্ভাবনী ক্ষমতার পরিচয় বলে দাবি করেন। ১ এপ্রিল তার কোম্পানি ঘোষণা করে যে ‘দি লাইফ অব পাবলো’ আগামী মাসগুলোতে ‘জীবন্ত’ এ্যালবামের রূপ ধারণ করবে। এতে এখন ট্র্যাক থাকছে ১৯টি। এটি এখন ‘স্পটিফাই’ ও এ্যাপল মিউজিকের’ সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। তার ফলে এ্যালবামটি এখন স্ট্রিমিং থেকে বিলবোর্ড ২০০তে প্রথম এ্যালবাম হিসেবে পৌঁছেছে। এ্যালবামটির ‘সেলস’ ইউনিটির ৭০ শতাংশই প্রকৃতপক্ষে ছিল স্ট্রিম। এ্যালবাম জিনিসটা এতই পুরাতন যে স্মৃতির গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার মতো। ১৯৪৮ সালে কলম্বিয়া রেকর্ডস ১২ ইঞ্চির সাড়ে ৩৩ আরপিএসের ভাইনলের রেকর্ড প্রথম সাফল্যের সঙ্গে বাজারে ছাড়ে। এই রেকর্ডের প্রতিদিকে অডিও’র পরিমাণ ৫ গুণ বেড়ে প্রায় ২২ মিনিটে দাঁড়ায়। তার আগে ‘এ্যালবাম’ বলতে বুঝানো হতো এক বান্ডিল ১০ ইঞ্চি সাইজের ৭৮ আরপিএমের ডিস্ক সেগুলো কাগজের প্যাকেটে একত্রে প্যাক করা থাকত। পরবর্তী কয়েক দশকে এই শিল্প সিঙ্গেলস থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে এ্যালবামের ওপর নিবন্ধ করে। তার জন্য শিল্পীদের কঠোর ধারা অনুসরণ করতে হয়Ñ এ্যালবাম রেকর্ড করতে হয়, সিঙ্গেল রেকর্ড নিয়ে প্রচারে নামতে হয়, এ্যালবাম মুক্তি পাওয়ার পর সফরে বেরোতে হয় এবং একই কাজ বার বার করতে হয়। কিন্তু ফাইল শেয়ারিং এবং ডিজিটাল মিউজিকের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে যাওয়ায় এ্যালবামের মৃত্যুঘণ্টা বেজে ওঠে। এই বিপ্লবের কারণে এ্যালবাম বিক্রি ও লাইসেন্সিং থেকে আয় ৫৭ শতাংশ কমে যায় ১৯৯৯ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে। গত কয়েক বছরে গুটিকয়েক স্বনামধন্য শিল্পী এ্যালবামকে আবার স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। এদের মধ্যে ক্যানি ওয়েস্ট যেমন আছেন, তেমনি আছেন ল্যামার, রিহান্না, রেয়স, সাইরাস এবং তাদের মতো আরও কয়েকজন। সুইডিশ পপস্টার রবিন তিনটি মিনি এ্যালবাম বের করেছেন। তার সেরা সেরা গানের সংকলনের একটি এ্যালবাম হলো ‘বডি টক্্’। এরপর বেয়ন্স ১৪টি গান এবং তার সঙ্গে সাঞ্জস্যপূর্ণ মিউজিক ভিডিও একত্রে যুক্ত করে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে আইটিউবে ছেড়ে দেন। তার এ্যালবামের অনুসরণে র‌্যাপ সঙ্গীত শিল্পী ড্রেক ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছেড়েছেন তার এ্যালবাম ‘ইফইউআর রিডিং দিস্্ ইটস্্ টু লেট’। এ বছরই ওটি মিলিয়ন কপি বিক্রি হওয়া প্রথম এ্যালবামে পরিণত হয়। গত জানুয়ারির শেষদিকে মুক্তি পায় রিহান্নার এ্যালবাম এন্টি। ক্রমবর্ধমান প্রত্যাশার মধ্যে তার তিনটি সিঙ্গেল বাজারে বেশ মার খেয়েছিল এবং প্রভূত লোকসানের কারণ ঘটিয়েছিল। অংশত সেই ক্ষতি পুষিয়ে শেয়ার জন্যই তিনি এই এ্যালবামটি বের করেন। র‌্যাপ সঙ্গীতশিল্পী কেনড্রিক ল্যামারও একই কৌশল অবলম্বন করে এমন সব গানের এ্যালবাম বের করেন, যেগুলো বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক নাও হতে পারে। গত মাসে মুক্তি পায় তার আনটাইটেলড আনমাস্টার্ড যা তার গ্র্যামি পুরস্কার বিজয়ী এ্যালবাম ‘টু পিম্প এ বাটারফ্লাই’কেও ছাড়িয়ে যায়। সূত্র : ইকোনোমিস্ট
×