ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাহমুদা সুবর্ণা

সময় এখন কারবারের

প্রকাশিত: ০৩:২৭, ২৭ এপ্রিল ২০১৬

সময় এখন কারবারের

সুসময়ে এ্যাঞ্জেলিক কারবার। চলতি মৌসুমেই ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদ পেয়েছেন তিনি। তাও আবার দুর্দান্ত ফর্মে থাকা আমেরিকান টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে। পারফর্মেন্সের সেই ধারাবাহিকতা এখনও ধরে রেখেছেন জার্মান তারকা। রবিবার স্টুটগার্ট ওপেনেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে মৌসুমের দ্বিতীয় শিরোপা নিজের শোকেসে তুলে নিয়েছেন বাঁ-হাতি এই টেনিস তারকা। ইতোমধ্যেই দ্বিতীয় শিরোপা জিতে উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসছেন কারবার। মৌসুমের দ্বিতীয় মেজর টুর্নামেন্ট ফ্রেঞ্চ ওপেনেও নিজেকে মেলে ধরতে চান বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের তিন নম্বরে থাকা এই জার্মান তারকা। গত কয়েক মৌসুম ধরেই পাদপ্রদীপের আলোয় অবস্থান করছেন এ্যাঞ্জেলিক কারবার। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারছিলেন না তিনি। তবে চলতি মৌসুমের শুরুতেই সেরেনা ঝড় থামিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম ফাইনালেই ইতিহাস গড়লেন ২৮ বছর বয়সী কারবার। কিংবদন্তি স্টেফি গ্রাফের পর মেয়েদের এককে প্রথম গ্র্যান্ডসøামজয়ী জার্মান তারকা হওয়ার রেকর্ডও গড়েন তিনি। প্রথম মেজর ট্রফি হাতে নিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি কারবার। ম্যাচ শেষে জার্মান তারকা অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘এর জন্যই আমি সারাটা জীবন পরিশ্রম করেছি। এখন আমি বলতে পারি, আমি একজন গ্র্যান্ডসøাম চ্যাম্পিয়ন। সবাই আমাকে রোবট ভাবলেও আমি তা নই। প্রতিটি ম্যাচ জেতা তো আর কোনভাবেই সম্ভব নয়। আমি শুধু চেষ্টা করতে পারি।’ সেই চেষ্টার ফল হিসেবেই মৌসুমের দ্বিতীয় শিরোপা নিজের শোকেসে তুলতে পেরেছেন কারবার। চোট আর ফর্মহীনতার কারণে মাঝের সময়টাতে নিস্প্রভ থেকে স্টুটগার্ট ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আবারও প্রতিপক্ষদের সতর্ক বার্তা দিয়ে দিলেন কারবার। টুর্নামেন্টের ফাইনালে অবাছাই খেলোয়াড় লরা সিগেমুন্ডকে পরাজিত করে টানা দ্বিতীয়বারের মতো স্টুটগার্ট ওপেনের শিরোপা জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের চ্যাম্পিয়ন কারবার। এদিন মাত্র ৮১ মিনিটের ফাইনালে কারবার ৬-৪ এবং ৬-০ সেটে সহজেই সিগেমুন্ডকে পরাজিত করে চলতি বছরের দ্বিতীয় শিরোপা লাভ করেন। ফাইনাল শেষে উচ্ছ্বসিত কারবার। এ বিষয়ে নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘শিরোপা ধরে রাখার আনন্দই আলাদা। সত্যিকার অর্থেই পুরো সপ্তাহটা দারুণ কেটেছে আমার।’ তবে শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে সিগুমেন্ডও দারুণ শুরু করেছিলেন। যে কারণে সতর্ক থেকেই লড়াইয়ে নামেন কারবার। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সিগেমুন্ড তার শুরুটা সত্যিই বেশ ভাল করেছিল। তাই আমি আমার নিজের খেলাটার দিকে বেশি মনোযোগী হই। প্রথম কিছু গেম খেলার পর আমি নিজেও ছন্দ খোঁজে পাই। শিরোপা জয়ের জন্য আর এটাই আমার মূল রহস্য। আজ আমি কোর্টে খুব সাবলীলভাবেই নড়াচড়া করতে পেরেছি। যা আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’ এবারের ফাইনালটা ছিল অল জার্মানির লড়াই। জানুয়ারিতে মেলবোর্ন কৃতিত্বের পরে সিগেমুন্ডের বিপক্ষে কারবার ছিলেন একেবারেই অপ্রতিরোধ্য। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের তিন নম্বরে থাকা কারবার টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় রাউন্ডে পরাজিত করেন ফেড কাপের সতীর্থ আনিকা বেককে। কোয়ার্টার ফাইনালে স্প্যানিশ টেনিস তারকা কার্লা সুয়ারেজ-নাভারোকে হারিয়ে সেমিফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করেন। আর শেষ চারে দুইবারের উইম্বল্ডন চ্যাম্পিয়ন পেত্রা কেভিতোভাকে হারান তিনি। পুরো টুর্নামেন্টের মতো ফাইনালেও যেন একই চিত্রনাট্য। প্রথম সেট লড়াই হলেও দ্বিতীয় সেটে কোন পাত্তাই পেলেন না সিগেমুন্ড। মৌসুমের শুরুতেই দুটি শিরোপা নিজের শোকেসে তুলে নিলেন কারবার। নিঃসন্দেহেই ক্যারিয়ারের সেরা সময় তার। কারবার নিজেও স্বীকার করেছেন তা, ‘আমি মনে করি আমার জন্য এটাই সবচেয়ে ভাল মৌসুম। প্রকৃতপক্ষে প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট জয় এবং তারপর ঘরের মাঠের সমর্থকদের সামনেই স্টুটগার্ট জেতা। এখন পর্যন্ত এটাই আমার মৌসুমের সেরা সূচনা। গ্র্যান্ডস্লাম জেতা এবং এখানকার টুর্নামেন্ট জেতাটা আমার কাছে বিশেষ এক অর্জন। কেননা এখানে আমার সকল সমর্থকরাই আছেন। যাদের সবগুলো মুখই আমার চেনা। এবং তাদের সামনে শিরোপা জেতাটা সত্যিই এক বিস্ময়কর ব্যাপার। যে কারণেই এই টুর্নামেন্ট জেতাটা আমার মৌসুমের সেরা এক অর্জন।’ স্টুটগার্ট ওপেনে এবার শুরু থেকেই অসাধারণ পারফর্মেন্স উপহার দিয়েছেন সিগেমুন্ড। ফাইনালের পথে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দশে থাকা তিন তারকাকে হারিয়েছেন তিনি। রোমানিয়ার সিমোনা হ্যালেপ, ইতালির রবার্টা ভিঞ্চি এবং পোল্যান্ডের এ্যাগনিয়েস্কা রাদাওয়ানস্কাকে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করেন তিনি। এবারই কোন ডব্লিউটিএর ফাইনালে খেলার গৌরব অর্জন করেন সিগেমুন্ড। কিন্তু এ্যাঞ্জেলিক কারবারের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় তার। তবে এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায় যে এটাই তার ক্যারিয়ার সেরা পারফর্মেন্স। ফাইনালে কারবারের কাছে হারলেও টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে তার। ৩০ ধাপ এগিয়ে বর্তমানে র‌্যাঙ্কিংয়ের ৪২ নম্বরে উঠে এসেছেন তিনি। এতে দারুণ রোমাঞ্চিত সিগেমুন্ড। ম্যাচ শেষে ২৮ বছর বয়সী এই জার্মান তারকা বলেন, ‘গত কয়েক দিনে যে রকম আবেগের মুহূর্তের মুখোমুখি হয়েছি টেনিস কোর্টের আগে কখনোই এমনটি হয়নি।’ তবে টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের তিন নম্বরেই থাকছেন কারবার। আগামী মাসেই শুরু হবে মৌসুমের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট ফ্রেঞ্চ ওপেন। মূলত ফরাসী ওপেনেরই প্রস্তুতিমঞ্চ হিসেবে বিবেচিত স্টুটগার্ট ওপেন। এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বছরের দ্বিতীয় মেজর ইভেন্টে নিশ্চিত ফেবারিটের তকমাটা গায়ে মেখেই কোর্টে নামবেন এ্যাঞ্জেলিক কারবার। আর ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টেও নিজেকে মেলে ধরবেন লরা সিগেমুন্ড। এদিকে স্টুটগার্ট ওপেনের দ্বৈতে শিরোপা জিতেছেন ক্যারোলিন গার্সিয়া এবং ক্রিস্টিনা মাদেনোভিচ। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের দ্বৈতের শীর্ষ তারকা সানিয়া মির্জা এবং মার্টিনা হিঙ্গিসকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের স্বাদ পান তারা। স্টুটগার্টের ফাইনালে ইন্দো-সুইস জুটিকে হারিয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত গার্সিয়া-মাদেনোভিচ, ‘তাদের বিপক্ষে খেলাটা খুবই চ্যালেঞ্জিং আর জেতাটা তো খুবই রোমাঞ্চকর।’
×