ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

জয় অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা ॥ শফিক রেহমান আটক প্রসঙ্গ

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

জয় অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা ॥ শফিক রেহমান আটক প্রসঙ্গ

মাঝে মাঝে নিজেকে প্রশ্ন করি, ‘বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকারদের কি বাংলাদেশে শঙ্কামুক্ত জীবনযাপনের অধিকার নেই? তাঁদের কি নির্ভয়ে বাঁচার অধিকার নেই? কেন বারবার তাঁদের হত্যার চেষ্টা করা হয়?’ এর কি প্রতিকার নেই? বরং হত্যাচেষ্টায় জড়িত সন্দেহে কাউকে তদন্তের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করলে কেনইবা কিছু সুশীল সমাজকর্তা বলে উঠেন যে, ‘মিথ্যে অভিযোগে অমুককে গ্রেফতার করা হয়েছে’ কিংবা ‘গ্রেফতারের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে’। বিএনপি ভারমুক্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তো প্রতিদিনই একটা বাণী ছাড়ছেন। হাঁছা-মিছার ককটেল বানিয়ে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলায় এই ভদ্রলোকের জুড়ি মেলা ভার। অবশ্য তার নেত্রী খালেদা জিয়াও কম যান না। কয়েকদিন আগে তো বলেই দিলেন ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে (?)’ আরেক নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বললেন, ‘বুদ্ধিজীবীরা নাকি বেকুবের মতো প্রাণ দিয়েছেন (?)’ শফিক রেহমান খালেদা জিয়ারই উপদেষ্টা। তাঁকে সুনির্দিষ্ট মামলায় আটক করা হয়েছে- সাংবাদিক হিসেবে নয়। অথচ কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ তার গ্রেফতার। তবে হ্যাঁ, শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রহমান তার স্বামীর জন্য কাঁদবেন, রাজপথে মিছিল করবেন, মানববন্ধন করবেন-এটাই স্বাভাবিক। স্বামীর জন্য কে না কাঁদে? তবে অন্যদের কান্নার বেশিরভাগই মায়াকান্না বা উদ্দেশ্যমূলক। বুধবার রাতে একটি প্রাইভেট টিভি চ্যানেলে টক শো দেখছিলাম। সঞ্চালক ছিলেন রাহুল রাহা এবং আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মেজবাহ কামাল, প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল এবং অপরজন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা। তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল সজীব ওয়াজেদ জয় অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা মামলা এবং শফিক রেহমানের আটক ও রিমান্ডে নেয়া। প্রফেসর মেজবাহ কামাল এবং ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা বারবার বলছিলেন শফিক রেহমান একজন সিনিয়র সাংবাদিক এবং বয়ঃবৃদ্ধ ব্যক্তি। তারা মনে করেন শফিক রেহমান যে নির্দোষ তা তাকেই প্রমাণ করতে হবে। ব্যতিক্রম হলো আসিফ নজরুল। তিনি বারবার একটা ব্যাপার এস্টাবলিস্ট করতে চাইছিলেন যে, শফিক রেহমান একজন সিনিয়র সাংবাদিক। তাছাড়া আমেরিকায় যে মামলাটি হয়েছে তাতে ‘অপহরণ বা হত্যাচেষ্টা’ প্রমাণিত হয়নি। বরং আমেরিকার আদালতে যা বলা হয়েছে তা হলো ‘জয়কে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ করার ষড়যন্ত্রের দায়ে কয়েকজনের সাজা হয়েছে। জয়ের পক্ষের আইনজীবী বা প্রসিকিউশন ‘অপহরণ এবং হত্যাচেষ্টা’ এই অভিযোগটি উত্থাপন করলে বিচারক তা বাতিল করে দেন। আসিফ ‘দি ওয়্যার’ নামে একটি পত্রিকার (সম্ভবত অনলাইন) উদ্ধৃতি দিয়ে বোঝাতে চাইছিলেন মামলায় ‘জয় অপহরণ এবং হত্যাচেষ্টার’ কোন বিষয় ছিল না। তাহলে যে প্রশ্নটি চলে আসে তবে চযুংরপধষষু যধৎস শব্দের বাংলা কি? প্রফেসর ড. মেজবাহ কামাল যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক তিনি বললেন, দি ওয়্যার নামের যে পত্রিকাটির উদ্ধৃতি প্রফেসর আসিফ নজরুল দিলেন তার নামও তিনি কখনও শোনেননি। অবশ্য আজকাল ঙহষরহব পত্রিকার কোন শেষ নেই। মোটামুটি পর্যায়ের একটা সেলফোন বা একখানা ল্যাপটপ থাকলে ঘরে বসেই একটা ঙহষরহব পত্রিকা চালু করা যায়। তাছাড়া স্বাধীনতাবিরোধী এবং একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবির-মুসলিম লীগ ও তাদের গডফাদার বিএনপির তো টাকার অভাব আছে এমনটি কেউ মনে করেন না। শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশে নাকি এখন ঙহষরহব পত্রিকার সংখ্যা হাজারের মতো। অবশ্য ইংরেজী ডেইলি স্টার পত্রিকাও আসিফ নজরুলের হাতের ঞযব রিৎব পত্রিকার বক্তব্য ফ্রন্ট পেজে তুলে এনেছে। তাও আবার ঞযব রিৎব-কে দেখানো হয়েছে ধহ ওহফরধহ ঢ়ঁনষরপধঃরড়হ. ঞযব ৎবঢ়ড়ৎঃ (ড়ভ রিৎব) ংধরফ ঃযব টঝ পড়ঁৎঃ ৎবপড়ৎফং পড়হঃৎধফরপঃবফ ঃযব ইধহমষধফবংয মড়াবৎহসবহঃ’ং পষধরস ঃযধঃ ঃযব পড়হারপঃরড়হ ধ ুবধৎ ধমড় ড়ভ ঃযৎবব সবহ রহ ঘবি ণড়ৎশ ভড়ৎ রষষবমধষষু ড়নঃধরহরহম পড়হভরফবহঃরধষ ঋইও ৎবপড়ৎফং রহাড়ষাবফ ধ ঢ়ষড়ঃ ঃড় শরষষ ঔড়ু. ... ঞযব টঝ পড়ঁৎঃ লঁফমব যিড় ঃৎরবফ ঃযব পধংব ংঢ়বপরভরপধষষু ফরংসরংংবফ ঢ়ৎড়ংবপঁঃরড়হ পষধরস ঃযধঃ ঃযব সধহ ঢ়ষধহহবফ ঃড় ‘চযুংরপধষষু যধৎস’ ঔড়ু যিড় ষরাবং রহ টঝ. নিউইয়র্ক কোর্টে সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে আমেরিকান ছাড়াও নিউইয়র্কে বসবাসরত জনৈক বিএনপি নেতা মাহমুদুল্লাহ পুত্র রিজভী আহমেদ সীজারও রয়েছে। সে এফবিআই এজেন্টকে অর্থ-ঘুষ দিতে গিয়ে ধরা খেয়েছে। আমার সাংবাদিকতার বয়স ৪৬ বছর বলা যায়। ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে দৈনিক ইত্তেফাক-এ চধৎঃ ঃরসব লড়ন হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করি। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার, স্টাফ রিপোর্টার, সিনিয়র রিপোর্টার এবং স্পেশাল করেসপন্ডেট হিসেবে (মুক্তিযুদ্ধে যাবার কারণে ৯ মাস বাদ দিয়ে) পুরো ৪৬ বছর সাংবাদিকতা করছি। এখনও দৈনিক জনকণ্ঠসহ দেশী-বিদেশী কাগজে-অনলাইন-এ লিখছি। একটা ব্যাপার আমি বুঝতে অক্ষম যে, সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাজা হবে কেন? তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী বা নাগরিকের তথ্য জানার অধিকার মানবাধিকার বলে জানি। আমি নিজেও দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে অনেক গোপন তথ্য ফাঁস করে রিপোর্ট করেছি। কই, কখনও তো এ জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি। তবে কি ‘দাল মে কুচ কালা হায়?’ ‘হায়’ যে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। নইলে সাদেক হোসেন খোকার মতো নেতা কেন আমেরিকায় পড়ে আছেন, জানি না। শুনেছি তিনি অসুস্থ। দোয়া করি, তিনি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরুন। তাছাড়া জামায়াতী ব্যারিস্টার রাজ্জাক তার দুই ছেলে ও সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে লন্ডনে কি করছেন, তারও কিছু কিছু বাতাস ঢাকায় মাঝে মধ্যে বয়ে যায়, কিংবা সাজাপ্রাপ্ত আলবদর চৌধুরী মইনুদ্দিন, তারেক রহমান কেন এখনও লন্ডনে রয়েছেন? এত অর্থইবা কোত্থেকে আসে, যে লন্ডনের মতো ব্যয় বহুল একটি শহরে রাজকীয় জীবনযাপন করতে অসুবিধা হয় না। আলাদীনের চেরাগ তো এ যুগে নেই, অনেক আগেই নিভে গেছে। এখনকার বিদ্যুত-চেরাগ অর্থের জোগান দেয় না। দেখে শুনে মনে হয় দেশে থাকতে তারেক বাবু নামে যে দুর্নীতির মামলা হয়েছে এবং এখনও চলছে, সবই সত্য। অসত্য কিছু নেই। জয়কে আমরা জানি। তবু নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে তার কিছুটা পরিচয় দেয়া দরকার বলে মনে করি। জয় মানে সজীব ওয়াজেদ জয়, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পৌত্র এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরতœ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অণুবিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ আলী মিয়া দম্পতির দুই সন্তানের অন্যতম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পরামর্শক এবং বিশেষজ্ঞ। জয় যেমন আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীধারী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তথ্য প্রযুক্তিবিদ তেমনি তাঁদের অপর সন্তান সায়েমা ওয়াজেদ পুতুলও আমেরিকার বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষিতা এবং অটিস্টিক বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এবং এ সম্পর্কিত জাতিসংঘের এ্যাডভাইজার। তাঁদের হত্যাচেষ্টা আমাদের শঙ্কিত করে। বর্তমান অগ্রসরমান এবং বিশ্বে তাক লাগানো বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কণ্টকমুক্ত রাখতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কোন বিকল্প নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিদেশে অবস্থান করায় বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর অপর কন্যা শেখ রেহানার সন্তানরাও একইভাবে মেধাবী এবং যোগ্য। রেহানাকন্যা টিউলিপ সিদ্দিক তো ব্রিটিশ পার্লামেন্ট হাউস অব কমন্সের সদস্য এবং শ্যাডো গবর্নমেন্টের লেবার দলীয় মিনিস্টার। তবে কি ঈর্ষা কাজ করছে কারও কারও? কেননা, দেশে ‘ম্যাডাম’ নামের এক নেত্রীর দুই সন্তানই লেখাপড়া আদু ভাই। একজন অবশ্য মরহুম। তার সম্পর্কে কিছু বলব না। অপরজনের পরিচয় একটিই যথেষ্ট। তিনি তারেক রহমান এবং হাওয়া ভবনের প্রতিষ্ঠাতা। আর কিছু বলার দরকার আছে বলে মনে করি না। তাকে দিয়ে লুটপাট হতে পারে, অঢেল অর্থের মালিকানা আয়ত্তে আনা যেতে পারে, রাষ্ট্রপরিচালনা সম্ভব নয়। কাজেই একটা ঈর্ষা তো তাদের মধ্যে কাজ করবেই। একজন খালেদাও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তিন তিন বার, কিন্তু মনে রাখার মতো একটি সাফল্যও দেখাতে পারবেন না। বস্তুত তারও ছেলের মতোই সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। লেখাপড়ায় না থাকলে যা হবার তা হয়েছে। পক্ষান্তরে শেখ হাসিনা পিতার মতোই স্বপ্ন দেখতে জানেন, স্বপ্ন বাস্তবায়নের সাহস, যোগ্যতা, ক্ষমতা রাখেন। তাঁর সন্তানদের মধ্যেও নানা ও মা-বাবার যোগ্য উত্তরাধিকার প্রমাণিত। এখানেই যত ঈর্ষা। পেছনে রয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার-আলবদর-আলশামস, জামায়াত-শিবির, মুসলিম লীগ, যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী। খালেদা তারেক হলো তাদের ঢাল। তারা মৃতপ্রায়, এই ‘ঢাল’ ভেঙ্গে গেলে নিশ্চিহ্ন হতে বেশি দিন লাগবে না। সর্বশেষ দেশের চিহ্নিত সুশীল বাবুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, একজন বঙ্গবন্ধুকে জন্ম নিতে যেমন হাজার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে, একজন শেখ হাসিনারও শেখ হাসিনা হতে অর্ধশতাব্দী লেগেছে। তেমনি তাঁদের সন্তানদেরও। এরাই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার হাল ধরতে পারবে শক্ত হাতে। আর সব ফসকা গেরো। এ সত্যটি যে সুশীল বাবু বুঝতে পারছেন না, তার প্রতি করুণাই হয়। ঢাকা : ২২ এপ্রিল ২০১৬ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব
×