ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

রোকসানা বেগম

এবার শিরোপা জিতবে কোন দল? ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগ

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ২০ এপ্রিল ২০১৬

এবার শিরোপা জিতবে কোন দল? ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগ

শিরোপার জন্যই খেলতে নামব। আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন এমনটিই বলেছেন। তার বলার ভেতর আছে বিশ্বাসও। আর মাত্র তিনদিন পর শুরু হতে যাওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের জন্য যে এবার ‘প্লেয়ার্স বাই চয়েস’ সবচেয়ে শক্তিশালী দলটিই বানিয়েছেন। এই দল নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা করতেই পারেন সুজন। অন্য কোন দল তো সেই আশা প্রকাশ করতেই পারছেন না। কিন্তু কাগজে-কলমে যতই সেরা দল হোক আবাহনী, শেষপর্যন্ত কী শিরোপা ঘরে তুলতে পারবে দলটি? না কি অন্য কোন দল বাজিমাত করে ফেলবে? সেই প্রশ্ন থাকছেই। ক্রিকেট কোচিং স্কুল (সিসিএস) যে চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে না, তা সবারই জানা। শুধু সাদামাটা দলই গড়েনি দলটি, শিরোপা স্বপ্ন তাদের নেই-ই। কোন রকমে প্রিমিয়ার লীগ থেকে প্রথম বিভাগে যেন আবার নেমে না যান, সেটা করতে পারলেই বাঁচে দলটি। সেই সম্ভাবনাও বোধ হয় নেই। দলটিতে যে কোন বড় মাপের ক্রিকেটারই নেই। আবাহনীতে যেখানে লিটন কুমার দাস, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাসকিন আহমেদ, সাকলায়েন সজীব, আবুল হাসান রাজু, জুবায়ের হোসেন লিখন, তাপস বৈশ্য আছেন। জাতীয় দলের ক্রিকেটারে ছড়াছড়ি। সঙ্গে দেশের সেরা দুই ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানও আছেন। সেখানে সিসিএসে তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে সাইফ হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, পিনাক ঘোষ, সালেহ আহমেদ শাওনরাই ভরসা। এর মধ্যে শুধু অভিজ্ঞদের মধ্যে আছেন রাজিন সালেহ। তাতে বলাই যায়, এবার লীগে সবচেয়ে শক্তিশালী দল আবাহনী, দুর্বল দল সিসিএস। আরেকটি দল আছে দুর্বল। সেটি হচ্ছে কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমি। এই দলটিতেও নেই কোন সাড়া জাগানোর মতো ক্রিকেটার। মাহমুদুল হাসান লিমন, ইরফান শুক্কুর, বিশ্বনাথ হালদার ও মেহেদী হাসান মিরাজরা আছেন। তবে শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে জিততে এই ক্রিকেটাররা যথেষ্ট নন। ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, কলাবাগান ক্রীড়া চক্র ও গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স দলগুলোও যে আহামরি, তা নয়। একেবারে দুর্বলও নয়, আবার শক্তিশালীও নয়। মাঝারি মানের দল। ভিক্টোরিয়াতে নাদিফ চৌধুরী, সোহরাওয়ার্দী শুভ, ধীমান ঘোষ, কামরুল ইসলাম রাব্বি, ডলার মাহমুদ ও মুমিনুল হক আছেন। ব্রাদার্স ইউনিয়নে শাহরিয়ার নাফিস, মোহাম্মদ শহীদ, তুষার ইমরান, নাফিস ইকবাল ও ইমরুল কায়েস আছেন। কলাবাগানে মাশরাফি বিন মর্তুজা থাকলেও বাকিরা দলকে কত দূর নিতে পারবেন। আব্দুর রাজ্জাক, মেহরাব জুনিয়র, রবিউল ইসলাম শিপলু আছেন। মাশরাফিই বা দলকে কত দূর টেনে নেবেন। সব সময় কী আর বিপিএলের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মতো সাদামাটা দল নিয়ে শিরোপা হাতের মুঠোয় করে নেয়া যায়? গাজীতে বড় নাম বলতে অলক কাপালী, ইলিয়াস সানি, শামসুর রহমান শুভ ও এনামুল হক বিজয় আছেন। কেউই এখন আর সেইভাবে আলো ছড়াতে পারছেন না। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, দলগুলোতে নামী ক্রিকেটার থাকলেও শিরোপা জেতার মতো রসদ নেই। যা আছে আবাহনীতে। আবাহনীকে ঠেকিয়ে দেয়ার মতো দলও যে নেই, তা নয়; আছে। এবং সেই দলটি হতে পারে লীগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন প্রাইম ব্যাংক, প্রাইম দোলেশ্বর, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ, শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব। দলগুলোতে তারকা মানের ক্রিকেটার আছেন। আবার শক্তিশালীও। প্রাইম ব্যাংকে যেমন কাজী নুরুল হাসান সোহান, শুভাগত হোম চৌধুরী, রুবেল হোসেন, সাব্বির রহমান রুম্মন আছেন। একেকজন ক্রিকেটার দলকে জেতানোর ক্ষমতা রাখেন। প্রাইম দোলেশ্বরে রনি তালুকদার, সানজামুল ইসলাম, ফরহাদ রেজা, রকিবুল হাসান, আল-আমিন হোসেন, সাগির হোসেন পাভেল, জিয়াউর রহমান, নাসির হোসেন আছেন। প্রাইম ব্যাংকের চেয়েও শক্তিশালী দল প্রাইম দোলেশ্বর। আবার মোহামেডানে নাঈম ইসলাম, এনামুল হক জুনিয়র, নাজমুল হোসেন মিলন, শুভাশিষ রায় চৌধুরী, মুশফিকুর রহীম, মুস্তাফিজুর রহমান রয়েছেন। যদিও মুশফিকের ফর্ম নেই। আর মুস্তাফিজ কোনভাবেই সুপার লীগের আগে খেলতে পারবেন না। এরপরও যদি মুশফিক ফর্মে ফিরে যান। তাহলে অনেক শক্তিশালী দল হয়ে উঠবে মোহামেডান। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জে যেমন জহিরুল ইসলাম অমি, তাইজুল ইসলাম, আসিফ আহমেদ রাতুল, আবু হায়দার রনি, জুনায়েদ সিদ্দীক, সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ মিঠুন আছেন। দলটি শিরোপার জন্যও ফাইট দিতে পারবে। যদি সৌম্য ও মিঠুন নিজেদের সেরাটা দিতে পারেন। শেখ জামালে তো সোহাগ গাজী, আরাফাত সানি, মার্শাল আইয়ুব, মুক্তার আলী, শফিউল ইসলাম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ রয়েছেন। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ দলে সবচেয়ে ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ। তার ওপরই ভরসা করে এগিয়ে যেতেও চায় শেখ জামাল। গত আসরে প্রাইম ব্যাংকে অধিনায়ক ছিলেন মাহমুদুল্লাহ এবং চ্যাম্পিয়নও করান। তবে এবার সেই শিরোপা জেতার কথাটি সরাসরি বলতে পারছেন না। দল শক্তিশালী ঠিক আছে। তবে আবাহনীর চেয়ে যে কোনভাবেই শক্তিশালী নয়। লীগে খেলবে ১২ দল। সেই দলগুলোর মধ্যে আবাহনী যে সাকিব ও তামিমকে একসঙ্গে দলে ভিড়িয়েছে, সেখানেই শক্তিমত্তায় এগিয়ে গেছে। যদিও সুপার লীগের আগে কোনভাবেই খেলতে পারবেন না সাকিব। আইপিএল খেলছেন। সাকিবকে ছাড়াই সুপার লীগে অনায়াসে উঠে যাওয়ার মতো দল গড়েছে আবাহনী। সুপার লীগে সাকিব যোগ দিলে তো কথাই নেই। শক্তিমত্তা যে আবাহনীর কী পরিমাণ বাড়বে, তা কল্পনাই করা যায় না। তবে শুধু দেশী ক্রিকেটার দিয়ে নয়, শক্তির বিচার শেষপর্যন্ত বিদেশী ক্রিকেটার দিয়েও হবে। এ স্থানটিতে কোন দল এখন কেমন করে, সেটির দিকেও নজর থাকছে। একজন বিদেশী ক্রিকেটার ভালমানের হয়ে গেলে। সেই বিদেশী ক্রিকেটারটি যদি ম্যাচগুলোতে ভাল খেলে দেন। তাহলে দেশী ক্রিকেটারের সঙ্গে বিদেশী ক্রিকেটারের নৈপুণ্যে আবাহনীও অন্য দলগুলোর কাছে মাত খেয়ে যেতে পারে। তবে আপাতত সেরা দল আবাহনীই। এবং এ দলটির দিকেই সবার নজর রয়েছে। প্রশ্নও আছে, শেষপর্যন্ত কী আবাহনী শিরোপা জিতবে? না কি অন্য দল শিরোপা জিতে নেবে?
×