ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নৌপথে পণ্য আনা-নেয়া হবে

চালু হচ্ছে পায়রা সমুদ্রবন্দর

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১৯ এপ্রিল ২০১৬

চালু হচ্ছে পায়রা সমুদ্রবন্দর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের সমুদ্রবন্দর কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নে রাবনাবাদ চ্যানেলের তীরে নির্মিত হচ্ছে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর ‘পায়রা’। বিদ্যমান দুটি সমুদ্রবন্দরের পাশাপাশি তৃতীয় এই সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে বিশেষ একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে নেয়া হয়েছে দীর্ঘমেয়াদী ও চতুর্মুখী পরিকল্পনা। ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মহাপরিকল্পনা নিয়ে ২০১৩ সালের ৫ নভেবম্বর সংসদে পাস হয় পায়রা বন্দর অধ্যাদেশ-২০১৩। একই বছরের ১৯ নবেম্বর বন্দরের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পায়রা বন্দরই হবে জাতীয় অগ্রগতির চালিকাশক্তি- এমন অর্থনৈতিক মহাপরিকল্পনা তৈরি করতে দেয়া হয় ব্রিটেনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা এইচআর ওয়েলিংফোর্ডকে। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি হয় সংস্থাটির। সমীক্ষার মাধ্যমে পরিবেশ ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাইপূর্বক মূল বন্দরের কাজ, নদীশাসন, চ্যানেল ডিজাইন, জাহাজের নাব্যতা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ড্রেজিংয়ের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। তিন পর্বে এই নির্মাণ পরিকল্পনায় প্রথম পর্বের ১৯ ধাপের প্রথম পর্যায় ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে পায়রা বন্দরের জন্য। নির্মাণ করা হচ্ছে ১৬ একর জায়গায় সীমিত অবকাঠামো, জেটি ও অত্যাধুনিক কনটেনার ক্যারিয়ার, শুল্ক স্টেশন, নিরাপত্তা ভবন এবং বন্দর পন্টুনে সরাসরি ট্রাক বা কনটেনার লরি প্রবেশের জন্য অভ্যন্তরীণ রাস্তা। নিয়োগ দেয়া হয়েছে শিপিং এজেন্ট, সিএ্যান্ডএফ, ফ্র্রেইট ফরোয়ার্ডও। কনটেনার ডিপোর জন্য ভূমি উন্নয়ন করা হয়েছে। চলছে অফিস ভবন ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় পর্যটন শিল্প বিকাশে বিশেষ অঞ্চল নির্মাণের সমীক্ষা কার্যক্রম চলছে। উপকূলীয় অঞ্চলে গড়ে তোলা হবে সবুজ বেষ্টনী। বন্য প্রাণীর জন্য থাকবে অভয়ারণ্য। থাকবে কয়লা টার্মিনাল। গড়ে তোলা হবে জাহাজ নির্মাণ শিল্প এবং বিশেষ রফতানি অঞ্চল। বন্দর সুবিধা কাজে লাগিয়ে এখানে তৈরি হবে তেল শোধনাগার, সার কারখানা। আকাশপথে যোগাযোগের জন্য বিমানবন্দর গড়ে তোলাসহ থাকবে নৌবাহিনীর ঘাঁটি বিএনএস শের-এ-বাংলা। পর্যায়ক্রমে এটি গভীর সমুদ্রবন্দরের রূপ নিয়ে চার লেনের মহাসড়ক ও ডাবল গেজ রেললাইনে যুক্ত হয়ে পরিপূর্ণভাবে চালু হবে ২০২৩ সালে। বন্দরের পাশেই গড়ে উঠবে এলএনজি টার্মিনাল। এ জন্য জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্নের কাজ চলছে। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে পায়রার কাছেই কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুত কেন্দ্রের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। ২০১৮ সালের মধ্যেই উৎপাদনে যাওয়ার আশা করছে সরকার। আপাতত সড়ক ও রেলপথ ছাড়াই নৌপথে পণ্য আনা- নেয়ার মধ্য দিয়েই চলতি মাসে চালু হচ্ছে বন্দরটি। শুরুতে মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে নৌপথে পণ্য পরিবহন হবে। এ জন্য লালুয়ার চারিপাড়া পয়েন্টে পন্টুন (জেটি) স্থাপন করা হয়েছে। পায়রা বন্দরে নির্মাণ করা হবে মোট ১৬টি জেটি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানেই শুরু হয়েছে পায়রাকে সাজানোর কর্মযজ্ঞ। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নৌপথে ঢাকা থেকে উভয় বন্দরের দূরত্ব প্রায় সমান ২৫০ কিলোমিটার। বড় জাহাজ ভেড়ানোর জন্য কমপক্ষে ৯ মিটার গভীরতা দরকার হয়, সেখানে রামনাবাদ চ্যানেলে জোয়ারের সময়ও ১৪ মিটার পানি থাকে। তবে এই মুহূর্তে মালামাল খালাসের কার্যক্রম চালু হলেও ২০১৮ সাল নাগাদ পূর্ণাঙ্গ বন্দরের কার্যক্রম শুরু এবং ২০২৩ সালের মধ্যে পায়রা বন্দরটি সম্পূর্ণরূপে চালু করা হবে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বন্দরটিকে ফাস্ট ট্র্যাকে রাখা হয়েছে বলে জানান নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তৃতীয় সমুদ্রবন্দর হিসেবে পায়রার কার্যক্রম চালুর সুবাদে সামগ্রিকভাবে বদলে যাবে এ অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক চালচিত্র। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এলাকার হাজার হাজার মানুষের। চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে পারে না এমন বড় জাহাজ জোয়ার-ভাটার অপেক্ষা না করে সারা বছরই ভিড়তে পারবে পায়রা বন্দরে। বহির্নোঙর থেকে সারা দেশে সহজেই পৌঁছানো যাবে আমদানি পণ্য। একইভাবে রফতানি পণ্যও পাঠানো যাবে যেকোন দেশে। নেপাল ও ভুটান খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারবে এই বন্দর।
×