ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘শঙ্খচিল বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে’

প্রকাশিত: ০৭:১০, ১৪ এপ্রিল ২০১৬

‘শঙ্খচিল বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে’

আবার আপনার হাতে সিগারেট! পর পর কাজের চাপই এটা ফিরিয়ে আনল? পাঁচ বছর হল সিগারেট ছেড়েছি। কমলদার (কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়) ছবিটা করতে গিয়ে আবার ধরতে হল। এতদিন পর যখন প্রথম খেলাম, মাথা ঘুরে গিয়েছিল। ছবিটিতে আমি একেবারে চেইন স্মোকার। এখন ‘মহানায়ক’-এর শূটিং করছি। এখানেও চেইন স্মোকার। আবার একদিন দুম করে ছেড়ে দেব। এ বছর অনেকগুলো ছবি আপনার। বাংলায় ‘শঙ্খচিল’, ‘প্রাক্তন’, ‘জুলফিকার’। হিন্দি ছবি ‘থ্রি দেব’, আবার ছোট পর্দার ‘মহানায়ক’। কোনটার ওপর বাজি ধরেছেন? কারও যদি চারটি ছেলে থাকে, সে কি কাউকে কম বা বেশি ভালবাসতে পারে? আমার কাছে কোনটাই আলাদা নয়, যদিও সবকটার ধরণ আলাদা। গৌতম ঘোষের ছবি মানেই অন্য ধরণের কাজ। ‘শঙ্খচিল’ একটু নিশ দর্শকদের জন্য। ‘প্রাক্তন’ সেই অর্থে বাণিজ্যিক ছবি। বাণিজ্যিক মানেই নাচ-গান আর দক্ষিণ ভারত নয় কিন্তু। বড় স্কেল, বড়ভাবে রিলিজ, দর্শকের আগ্রহÑ সবকিছু মিলিয়ে বলছি। ‘জুলফিকার’-এ আবার এ্যাকশন আছে। কমলদার ছবিটা এগুলোর চেয়ে একেবারে আলাদা। গত বিশ বছরে বাংলায় এত বোল্ড ছবি হয়নি। দেখলে মনে হবে বিদেশি ছবি। বিষয়টা এত বোল্ড! বক্স অফিসের কথা বললে ‘প্রাক্তন’, ‘জুলফিকার’ অনেকটাই এগিয়ে থাকবে। হিন্দি ছবিটা আমি ধরছি না। ওটা করে আমার ক্যারিয়ারে দারুণ কিছু সুবিধে হবে না। ওটা প্রোমোট করার জন্য আদৌ সময় বার করতে পারব কি না, জানি না। এত বছর পরেও ক্যারিয়ারের ওঠা-নামা নিয়ে ভাবেন? ছবি বাণিজ্যিক সাফল্য না পেলে নিশ্চয়ই খারাপ লাগে। আমি কিন্তু ‘ক্লার্ক’ বা ‘হাউসফুল’-এর মতো ছবিও করেছি। যেগুলো চলেনি। তবে ২৫ বছর পরেও মানুষ ওগুলো দেখবেন। ঋতুদা (ঋতুপর্ণ ঘোষ) বা গৌতমদা’র ছবিগুলো ব্যবসায়িক লাভের কথা ভেবে করিনি। ছবি না চললে যে শ্যাটার্ড হয়ে যাই, তা-ও নয়। লোকে এখন ভাবে, প্রসেনজিৎ এই ছবিটা করছে মানে এখানে আলাদা কিছু পাব। অভিনয়ের কতটা সুযোগ আছে, সেটা ছবির বাছাইয়ের সময় মাথায় থাকে। আমি কিন্তু আর ‘সেফ জোনে’ নেই। কেন বলছেন এটা? আগে একটা ছবি ফ্লপ করলে আরও ১০টা ছবি থাকত। জানতাম, বাকি ছবিগুলো দিয়ে ওই ফ্লপটার ঘাটতি পুষিয়ে দিতে পারব। এখন আমি নিজেই বছরে তিনটি ছবি করি। কখনও আরও কম। যেগুলো করছি, সেগুলোও ডিফিকাল্ট ছবি। চ্যালেঞ্জটা আরও বেশি। আপনার শেষ হিট ‘মিশর রহস্য’। ‘জাতিস্মর’ জাতীয় পুরস্কার পেলেও বক্স অফিসে সফল নয়। তারপর ‘লড়াই’, ‘ফোর্স’ও সফল হয়নি...। জানি না, কেন ‘জাতিস্মর’ চলল না! সবাই এখনও বলে, আমার অন্যতম সেরা অভিনয়। সেটাই বা কম কী! ওই জন্যই তো বলছি, আমি এখন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন সময়ে রয়েছি। কারণ, নিজেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছি। যে কোনও সময়ে ‘সেফ’ ছবি করতেই পারি। কিন্তু করব না। ওই ২০০ হলে রিলিজ করা ছবিগুলো আর করব না। মানে, ‘বিক্রম সিংহ’-এর মতো ছবিতে আমি আর নেই। আমার টার্গেট এখন আলাদা। ‘শঙ্খচিল’ কি শুধুই গৌতম ঘোষের ছবি বলে করতে রাজি হলেন? গৌতমদা একটা কারণ তো বটেই। ‘মনের মানুষ’-এর সাফল্যের পর গৌতমদা চাইলেই আরেকটা ছবি করতে পারতেন। কিন্তু, এই সাফল্য নিয়ে গৌতমদা’র হেলদোল নেই। ‘শঙ্খচিল’ করতে পাঁচ বছর লাগিয়ে দিলেন। তিনি এক জায়গায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই গল্পটা পান। বিষয়টা বলার সঙ্গে সঙ্গে পুরো ভিশনটা আমার মাথার মধ্যে চলে আসে। ছবি চলবে কি না জানি না। কিন্তু, ‘শঙ্খচিল’ বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে। এই ছবিতে অভিনয় করাটা আমার কাছে খুব সহজ ছিল না। ‘শঙ্খচিল’ দেশভাগের গল্প। এখনকার প্রজন্ম কি আদৌ রিলেট করতে পারবে এই ঘটনার সঙ্গে? এটা লাখ লাখ বাঙালির গল্প। এই প্রজন্মের কেউ যদি না-ও পারে, তাদের বাবা-মায়েরা পারবেন। আর, গল্পটা কিন্তু শুধু দেশভাগ নিয়ে নয়। ভারত-বাংলাদেশ ক্রাইসিস নিয়ে নয়। সারা পৃথিবীই তো বর্ডার ক্রাইসিসে ভুগছে। আন্তর্জাতিক সমস্যা এটা। ছবির আবেগ সব প্রজন্মকে স্পর্শ করবে। সুত্র : এবেলা
×