ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নজরুল হোসেন

ওজন নিয়ে নেই ভয়

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ৪ এপ্রিল ২০১৬

ওজন নিয়ে  নেই ভয়

দৈনন্দিন জীবনে চাকরি বা পেশাগত ব্যস্ততার কারণে আমরা শরীরের যথাযথ যতœ নিতে পারি না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। আর এ কারণে আমাদের অনেকেরই শারীরিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। ওজন নিয়ে চিন্তিত নন এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। কেউ তার ওজন কমাতে চায় আবার কেউ চায় বাড়াতে। যিনি শুকনো বা সিøম তিনি যেমন মোটা হতে চান আবার যিনি মোটা তিনি চান শুকনা বা সিøম হতে। মূলত প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা আপনাকে ওজন বা ফিগার নিয়ে অহেতুক সব টেনশন, হতাশা ও ভোগান্তি দিয়ে থাকে। বিদেশী কালচারে প্রভাবিত হয়ে আপনি নির্দিষ্ট ওজন, আকার, পেশী তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। অথবা ডায়েটিংয়ের নামে শরীরকে কৃশকায় করে ফেলেন, অপুষ্টিতে ভোগেন এবং অধিকাংশই ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণার জন্য অনেকেই বলিউড নায়ক-নায়িকাদের মতো ফিগার করতে চেষ্টা করেন। আর এক্ষেত্রে ফিগার মানে হলো ছেলেদের হাত-পায়ের অস্বাভাবিক মাসল আর মেয়েদের ৩র্৬র্ -২র্৪র্ -২র্৬র্ । মেয়েদের অধিকাংশই মনে করে সুন্দর ফিগার ধরে রাখতে হলে প্রতিবেলায় চড়ুই পাখির মতো পরিমাণে খেতে হবে। এ ইচ্ছার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রাণান্ত চেষ্টা করা আর কঠোর ডায়েট কন্ট্রোল এবং দিনের পর দিন না খেয়ে থাকে। অনেকে আবার দিনের পর দিন না খেয়ে কিংবা তথাকথিত ফিটনেস সেন্টারে কসরত করে করে মারাত্মক সব শারীরিক জটিল রোগ সৃষ্টি করছেন। অধিকাংশেরই একটি তথ্য অজানা যে, ওজন কমা বা বাড়ার ব্যাপারে একেকজনের শরীরে একেকভাবে সাড়া দেয়। বিজ্ঞাপন নির্ভর ডায়েট আজকাল ডায়েটের ওপর হাজারও বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছে। এতে বিভ্রান্তি যেমন বাড়ছে, তেমনি অনেকে তথাকথিত ডায়েটিং করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের সাবান, বেল্ট পরে ওজন কমানোর চেষ্টা করে থাকেন। কেউ আবার ওজন কমানোর জন্য বিশেষ জুতা ব্যবহার করেন। আসলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলোর কার্যকারিতা শূন্য। ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য যা যা করতে পারেন : প্রথমত, আপনার খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সঠিক খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হতে হবে। কারণ ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একেক ব্যক্তির দেহ একেক রকমভাবে সাড়া দেয়। তাই খাবারের বেলায়ও আপনাকে সচেতন থাকতে হবেÑআপনার খাদ্যাভ্যাসের কোন বিষয়টি আপনার স্থূলতার কারণ। প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা শুধরে নিয়ে সঠিক ধারণা পোষণ করতে চেষ্টা করুন। অর্থাৎ তথ্যের পুনর্বিন্যাস করতে হবে। গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসানোর মতো প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণার ওপর নিজের খাদ্যাভ্যাস ছেড়ে দেবেন না। কি খাবেন আপনার রুচি মতো পুষ্টিকর সবই খাবেন। তবে পরিমিত খেতে হবে। রুচিসম্মত এবং পুষ্টিকর খাবার বেশি খাওয়া যাবে না। কখন খাবেন আপনার শরীরের ওজন কমবে না বাড়বেÑ অধিকাংশ সময়ে তা নির্ভর করে আপনি খাবারটি কখন গ্রহণ করছেন তার ওপর। ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য কখন খাবেন এটা নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, একই পরিমাণ খাবার সকালে খেলে ওজন কমবে আর রাতে খেলে বাড়বে। এক্ষেত্রে সকালে ভরপেট নাস্তা বা খাবার গ্রহণ করুন। প্রথমদিকে এই অভ্যাস কঠিন হলেও পরে তা আপনার শরীরের সঙ্গে কন্ডিশনিং হয়ে যাবে। আর দুপুরে ভাল করে তৃপ্তির সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করুন। এবং রাতে অনেকটা হালকা খাবার গ্রহণ করতে পারলেই দেখবেন আপনার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই আপনার আয়ত্তে চলে আসবে। কতটা খাবেন খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করবেন আপনার পাকস্থলির আয়তন অনুসারে। পাকস্থলির এক-তৃতীয়াংশ খাবার, এক-তৃতীয়াংশ পানি এবং এক-তৃতীয়াংশ ফাঁকা রাখার চেষ্টা করুন। পছন্দসই খাবার পেলেই হুমড়ি খেয়ে পড়বেন না। আপনার খাবার এখন গ্রহণ করা উচিৎ কিনা তা নিজেকে নিজে জিজ্ঞেস করুন, তারপর খাবার গ্রহণ করুন। এমনকি কখনও কারও পীড়াপীড়িতেও খাবার গ্রহণ করবেন না। মনে রাখবেন আপনার সচেতনতাই আপনার ওজন নিয়ন্ত্রক। চকলেট ও মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলবেন। ব্যায়াম আজকাল কাউকে ব্যায়ামের কথা বললেই আপনাকে বলবে সময় কই। অফিসের ব্যস্ততা, পারিবারিক কাজকর্ম আর তথাকথিত টিভি সিরিয়ালের মাধ্যমে বিনোদন উপভোগ করতে গিয়ে ব্যায়ামের নাম মুখে আনা ভার। আবার এর উল্টোটাও ঘটছে। অনেকে ব্যায়ামের নামে তার শরীরকে জানোয়ারের সদৃশ করার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। আসলে সুস্থ থাকার জন্য শারীরিক কসরত আপনার প্রয়োজন, তবে অবশ্যই এটা যেন আপনার শরীরের স্বাভাবিক গঠনকে পরিবর্তন করে না ফেলে সেই ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত ওজন হলে ক্যালরির পরিমাণ কমাতে হবে। প্রতিদিন সব ক্যালরি কম খেতে পারলে আপনি দশ পাউন্ড ওজন কমাতে পারবেন। প্রতিদিনের দুপুরের খাবারে সালাদ বেশি করে খান। কর্মস্থলে একনাগাড়ে বেশিক্ষণ একই ভঙ্গিমায় না থেকে আপনার হাত পা নাড়াচাড়া করুন। ছোটখাটো পরিশ্রমসাধ্য কাজগুলো নিজেই করতে চেষ্টা করুন। ছবি : আরিফ আহমেদ। মডেল : মুনিয়া
×