ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশে কৃষিপণ্যের চাহিদা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ১৮ মার্চ ২০১৬

বিদেশে কৃষিপণ্যের চাহিদা বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পৃথিবীজুড়ে বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও বাংলাদেশের কৃষিপণ্য যাচ্ছে ইউরোপে। গত পাঁচ বছরে তিন গুণ রফতানি বেড়েছে পাঁচ কৃষিপণ্যের। পাট ও পাটজাত পণ্য, আলু, সবজি, শুকনা ও মসলাজাতীয় খাবার- এই পাঁচ পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রফতানি হচ্ছে পাট ও পাটজাত পণ্য। তবে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের রফতানি বেড়েছে ৫০ হাজার ৫৩৪ মেট্রিক টন। বর্তমানে দেশের প্রায় ১ হাজার প্রতিষ্ঠান ১৪০টি দেশে ৯০ ধরনের কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রফতানি করছে। এর মধ্যে ১০০টির বেশি প্রতিষ্ঠান সরাসরি খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও রফতানি দুটোই করছে। প্রতিবছর শুধু রফতানি বাবদই আয় হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। পাশাপাশি এই খাতের সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। রফতানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের চাহিদা বিশ্বব্যাপী। এই কারণে রফতানির পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে। তবে রফতানির এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি জোর দিতে হবে অন্যান্য সমস্যা সমাধানের দিকে। সাধারণ কৃষকের কথা মাথায় রেখে ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমাতে হবে। ভর্তুকির পাশাপাশি দিতে হবে প্রণোদনা। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পরীক্ষাগার স্থাপন, গ্যাস-বিদ্যুত ও অবকাঠামোগত সমস্যা দূরীকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রফতানিকৃত কৃষিপণ্যের প্রথম স্থানে রয়েছে পাট ও পাটজাত পণ্য। ২০১০-১১ অর্থবছরে রফতানি হয়েছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৮ মেট্রিক টন পাট ও পাটজাত পণ্য। পাঁচ বছরে ৩ লাখ ৪১ হাজার ৭৩৭ মেট্রিক টন বেড়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৮৫ মেট্রিক টনে, যা প্রায় তিন গুণেরও বেশি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আলু। ২০১০-১১ অর্থবছরে রফতানি হয়েছিল ৩৯ হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন। প্রায় আড়াই গুণ বেড়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এর রফতানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৪ হাজার ৬১৪ মেট্রিক টনে। আলোচ্য সময়ে রফতানি বেড়েছে ৫৫ হাজার ৭৪ মেট্রিক টন। সূত্র আরও জানায়, রফতানি ৪০ হাজার ৭১৪ মেট্রিক টন বেড়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে শুকনা জাতীয় খাবার (বিস্কুট, চানাচুর, মুড়ি ইত্যাদি)। ২০১০-১১ অর্থবছরে এটি রফতানি হয়েছিল ১৬ হাজার ৭০৬ মেট্রিক টন। প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেড়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এর রফতানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৭ হাজার ৪২০ মেট্রিক টনে। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে শাকসবজি। এই পণ্যটির রফতানিও বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন গুণ। ২০১০-১১ অর্থবছরে পণ্যটির রফতানি হয়েছিল ১১ হাজার ৫৫ মেট্রিক টন। ২৬ হাজার ৩১৯ মেট্রিক টন বেড়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এর রফতানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার ৩৭৪ মেট্রিক টনে। প্রায় পাঁচ গুণ রফতানি বেড়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে মসলাজাতীয় পণ্য। ২০১০-১১ অর্থবছরে পণ্যটির রফতানির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন। ৯ হাজার ৮২০ মেট্রিক টন বেড়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এর রফতানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টনে। এরপরই রয়েছে ফল রফতানির অবস্থান। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার রিপোর্টেও বাংলাদেশের কৃষিপণ্য উৎপাদনের প্রতিবেদন ইতিবাচক। সংস্থাটির ২০১৫ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাদ্যনিরাপত্তায় বাংলাদেশের সফলতা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্বে সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয়, ধান উৎপাদনে চতুর্থ, মাছ উৎপাদনে পঞ্চম, আম উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম এবং আলু উৎপাদনে সপ্তম স্থানে রয়েছে। তবে রফতানিকৃত কৃষিপণ্যের মধ্যে রফতানি বেশি বেড়েছে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের (শুকনো ও মসলাজাতীয় খাবার)। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত পাঁচ বছরে এসব পণ্যের রফতানি বেড়েছে ৫০ হাজার ৫৩৪ মেট্রিক টন। ২০১০-১১ অর্থবছরে পণ্যগুলোর রফতানি ছিল ১৯ হাজার ৪৬৬ মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রফতানি বেড়ে হয়েছে ৭০ হাজার মেট্রিক টন। একই ধারা রয়েছে সবজিতেও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রফতানির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে। কারণ এসব পণ্যের জন্য কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। ফলে প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। অন্যদিকে প্রতিযোগী দেশগুলোর পণ্যের মান ও মোড়ক খুবই আকর্ষণীয়। এ ছাড়া তাদের পণ্যের দামও তুলনামূলক কম। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এ্যাগ্রো প্রসেসর্স এ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আহমেদ ফরহাদ বলেন, দ্রুত প্রসার ঘটছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের বাজারের। তবে এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে, তা দূর করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
×