ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২১ কোটি ৭০ লাখ ডলারের ঋণ চুক্তি ২৪ মার্চ

ঘোড়াশাল বিদ্যুত কেন্দ্র উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১৬ মার্চ ২০১৬

ঘোড়াশাল বিদ্যুত কেন্দ্র উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ ঘোড়াশাল বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ছে। চতুর্থ ইউনিটের বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে ২১ কোটি ৭০ লাখ ডলার দিচ্ছে বিশ^ব্যাংক। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে আরও ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত। আগামী ২৪ মার্চ এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের চুক্তি হতে পারে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, রি-পাওয়ারিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত বিদ্যুত উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে সরকার। কারণ রি-পাওয়ারিংয়ের মাধ্যমে গ্যাসের ব্যবহার কমানো সম্ভব। পুরাতন বিদ্যুত কেন্দ্রের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি এবং দূষণ কমানোও সম্ভব হয়। এ জন্য ঘোড়াশালে দুটি ইউনিটের কাজ শুরু হচ্ছে। তৃতীয় ইউনিট বাস্তবায়নে অর্থ দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। আর চতুর্থ ইউনিট বাস্তবায়নের জন্য বিশ^ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তি হচ্ছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট রি-পওয়ারিং প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ^ব্যাংক ১ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা দেবে। অবশিষ্ট অর্থ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হবে। ২০১৯ সালের মধ্যে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। বিশ^ব্যাংক সহজ শর্তে এ ঋণ দিচ্ছে। সংস্থাটির ঋণের বিপরীতে বার্ষিক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। এ ঋণের অর্থ ছয় বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৮ বছরে মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। ইআরডি বিশ^ব্যাংক উইংয়ের প্রধান কাজী শফিকুল আযম এর আগে জনকণ্ঠকে বলেন, ঋণের শর্তসহ যাবতীয় বিষয়ে আলোচনা শেষ হয়েছে। এখন পরিকল্পনা কমিশন অনুমোদন দিলে ঋণচুক্তি হবে। সিদ্ধিরগঞ্জের ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে অর্থায়নের পর ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিটের রি-পাওয়ারিংয়ে বড় অঙ্কের অর্থ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। তিনি বলেন, সংস্থাটি গত কয়েক বছর ধরে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বেশি বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু বর্তমানে অবকাঠামো উন্নয়নেও অবদান রাখছে। যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইতিবাচক। সূত্র জানায়, ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট ১৯৮৯ সালে স্থাপিত হয়। আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাওয়ায় ২১০ মেগাওয়াটের ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে ১৮০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। এ বিদ্যুত কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে ৪০৩ মেগাওয়াট করা হবে। একই সঙ্গে রি-পাওয়ারিং করলে গ্যাস ব্যবহারের দক্ষতা ৫৪ শতাংশ বাড়বে। বিদ্যুত বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, রি-পাওয়ারিংয়ের ব্যয় নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম। একই সঙ্গে রি-পাওয়ারিংয়ের সময় বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন হতে থাকে। ফলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুত সরবরাহ অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়। যা নতুন কম্বাইন্ড সাইকেল প্ল্যাট স্থাপন করার সময় সম্ভব নয়। বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিস ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে বিদ্যুতের সিস্টেম লস কমে গেছে, তাই বিদ্যুত খাতে সহায়তা বাড়াচ্ছে বিশ্বব্যাক। এর আগে সিস্টেম লসের কারণে বাংলাদেশের প্রয়োজন থাকলেও এই খাতে বিনিয়োগে তেমন আগ্রহ দেখায়নি সংস্থাটি। তবে এখন সিস্টেম লস সহনীয় পর্যায়ে আসায় আবারও ফিরে আসছে বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইফফাত শরীফ এর আগে বলেছিলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা পাঁচ বছর মেয়াদী যে কান্ট্রি পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম তৈরি করছি সেখানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বিদ্যুত খাতকে। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য নিরসনে বিদ্যুত খাত বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এ বিবেচনায় বিশ্বব্যাংক বিদ্যুত উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র তৈরিতে আপাতত বিশ্বব্যাংক যাবে না। বিশ্বব্যাংকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, এখন বিদ্যুত খাতে সিস্টেম লস সাড়ে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ। যা অত্যন্ত সহনীয় এবং ভারতে যে পরিমাণ সিস্টেম লস হয় তারচেয়েও কম। এর চেয়ে নিচে সিস্টেম লস নিতে চাইলে বিদ্যুত বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। সেখানে ব্যাপক বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। তবে এখন যেটি রয়েছে সেটি স্বাভাবিক সিস্টেম লস হিসেবেই ধরা হচ্ছে। সূত্র জানায়, শুরু থেকেই বিদ্যুত খাতে কোন বিনিয়োগ করেনি বিশ্বব্যাংক। এর প্রধান কারণ ছিল সিস্টেম লস। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে প্রথম সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্র তৈরিতে ৩৫ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে। তারপর তেমন কোন প্রকল্পে অর্থায়ন না থাকলেও ২০১৪ সালে এসে বিদ্যুত বিতরণ ও সঞ্চালন সংক্রান্ত একটি প্রকল্পে মোট ৮২ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগে চুক্তি করে। কিন্তু বর্তমানে বিদ্যুতের সিস্টেম লস কমে আসায় এই খাতে সহায়তা সম্প্রসারণ করছে বিশ্বব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে ঘোড়াশাল বিদ্যুত কেন্দ্র চতুর্থ ইউনিট রি-পাওয়ারিংয়ে সহায়তা দিচ্ছে সংস্থাটি।
×