ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১৩ মার্চ ২০১৬

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সম্ভাবনা

মোঃ শাহজাহান অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি হয়েছে সেটি মোটামুটি সন্তোষজনক যদি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির হার আমাদের চেয়ে অনেক বেশি যেমন ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস প্রভৃতি। সম্প্রতি ভারতও আমাদের প্রবৃদ্ধির হার টপকেছে। সুতরাং আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রশংসনীয় হলেও আত্মতুষ্টির পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এটিকে আরও ত্বরান্বিত করাই বড় একটা চ্যালেঞ্জ। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেসব অর্জন হয়েছে তা সত্যিই দৃষ্টান্তমূলক। উল্লেখ্য যে, প্রতি পাঁচ বছরে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে। বর্তমানে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ওপর। অন্যদিকে এ সময়ে জনসংখ্যার হার কমেছে। যেটি এক সময় ৩ শতাংশের বেশি ছিল, বর্তমানে তা ১.৪ শতাংশ। এর ফলে আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের মাথাপিছু আয় প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। জাতীয় উৎপাদনের আনুপাতিক হার হিসাবে বিনিয়োগের অবদান বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে স্বাধীনতার পর রাষ্ট্র দর্শনে সমাজতন্ত্রের চাপ ছিল; যেখানে ব্যক্তি খাতের অবদানকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। কিন্তু আশির দশকের মাঝ থেকে পরবর্তী সময় ব্যক্তি উদ্যোগে বিনিয়োগে নজর দেয়া হয়েছে। ফলে ১৯৮৫ সালে সার্বিক বিনিয়োগের ৩৭ শতাংশের নিচে যেখানে ব্যক্তি খাতের অবদান ছিল যেটি বর্তমানে ৮০ শতাংশের ওপরে। বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমেছে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় উৎপাদনের আনুপাতিক হার হিসাবে বর্তমানে আশির দশকের মধ্যবর্তী সময়ের তুলনায় তিন গুণ কমেছে। জিডিপির আনুপাতিক হার হিসাবে সেটি ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। রফতানি খাতে আমাদের প্রশংসনীয় অগ্রগতি হয়েছে এবং জাতীয় উৎপাদনের আনুপাতিক হারে রফতানি আয় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী নাগরিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স/অর্থও আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। কৃষি খাতে বাংলাদেশের উৎপাদনশীলতা অনেক বেড়েছে। একরপ্রতি চালের উৎপাদন আশির দশকে মধ্যবর্তী সময়ের তুলনায় বর্তমানে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি; যার ফলে আমরা খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি। দেশের মোট জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমেছে। বর্তমানে এটি ২৫ শতাংশ প্রায়, যা আশির দশকের মাঝামাঝিতে ৭৫-৮০ শতাংশ ছিল। জাতীয় উৎপাদনে যে প্রবৃদ্ধির হার সেটি আরও ত্বরান্বিত করতে হবে। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আমাদের ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার পরিকল্পনা ছিল, যেটি করতে পারিনি। এবং এর আগের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যে টার্গেটগুলো ছিল সেগুলোও পূরণ করা যায়নি। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও মোটামুটি একই ধরনের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। এবং ২০২০ সালের মধ্যে আমরা ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। সুতরাং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান হলো বিনিয়োগের হার বাড়ানো। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতে বলা হয়েছে যে, এই ৮ শতাংশ জাতীয় উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে ৩৪.৪ শতাংশ বিনিয়োগে নিয়োজিত করতে হবে। যদি আমার ব্যক্তিগত হিসাবে এটি আরও বেশি। এর বেশিরভাগ অবশ্যই বেসরকারী খাত থেকে আসতে হবে সেটি আমি আগেই উল্লেখ করেছি। এ জন্যও কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা গত কয়েক বছরে প্রকট আকার ধারণ করেছে। এটি দেশী-বিদেশী সব ধরনের বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে যে ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা দূর করা এখন আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় ভূমিকা পালন করে এবং এটি যে কোন দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হলো জনশক্তি। কিন্তু এই জনশক্তি এর সুফল পেতে হলে বিশেষ করে যুব শক্তিকে বাজার চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে দেশগুলোর ক্ষতি হতে পারে সেগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ হিসেবে চিহ্নিত। সুতরাং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় যে জন্য সহনীয় রাখার জন্য সরকারকে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। বাংলাদেশের উৎপাদনক্ষম শিল্পে অবকাঠামোগত পরিবর্তন দরকার। শিল্প খাতের অবদান আরও বাড়াতে হবে। এ ব্যাপারে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় যে টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে তার যথাযথ সুযোগ সৃষ্টি না করা গেলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না। আমাদের দেশে অবকাঠামোগত দুর্বলতা রয়েছে এবং ২৫ শতাংশ লোক এখনও নিচে। যেটি শ্রীলঙ্কার মোট জনসংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি। সুতরাং দারিদ্র্যবিমোচন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তবেই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের সম্ভাবনার দ্বার আরও ত্বরান্বিত হবে। এ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর অর্থনীতি বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
×