ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা লেডিজ ক্লাবের গর্ব ‘কুসুম কলি’

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১১ মার্চ ২০১৬

ঢাকা লেডিজ ক্লাবের গর্ব ‘কুসুম কলি’

রাজধানীর গৃহিণীদের বিনোদন ও সমাজ সেবার এক অনন্য মিলন কেন্দ্র ঢাকা লেডিজ ক্লাব। ১৯৫১ সালে ঢাকার উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত নারীদের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মিলন কেন্দ্র হিসাবে এই ক্লাবের আত্মপ্রকাশ ঘটে। গৃহিনীদের বিনোদনের জন্য এ ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হলেও সময়ের বিবর্তনে সমাজ সেবাই বিনোদনের উপজিব্য হয়ে উঠে। ক্লাবটির সমাজ সেবার অনন্য নিদর্শন হচ্ছে- কুসুম কলি। পথশিশুদের শিক্ষার এক নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান। কুসুম কলির বয়স এখন ৩১। এই ৩১ বছরে এক দুই করে নয়টি কুসুম কলির জম্ম হয়েছে। এসব কসুম কলি থেকে প্রতিনিয়ত ফুটছে অসংখ্য সব ফুল। আর ফুলগুলো ছেিড়য়ে পড়ছে সমাজে। সমাজের অবহেলিত ছেলে-মেয়েরা, যারা জীবনে কোনদিন লেখাপড়ার কথা ভাবেনি তাদের মাঝেই শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে কুসুম কলি নামের এই স্কুলটি। যাদের বাবা-মা দুবেলা দুমুঠো খাবার যোগাড় করতে পারেনা, কারো হয়তো বাবা বা মা নেই। আবার কারো হয়তো কেউই নেই। তারাই কুসুম কলির আশ্রয়ে বই পড়ছে, টিফিন খাচ্ছে। নতুন বই, খাতা, পেন্সিল, স্কুল ড্রেস পাওয়ার আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠছে। ক্লাবের প্রয়াস প্রেসিডেন্ট ফৌজিয়া সামাদের উদ্যোগে ১৯৮৫ সালে চালু হয় প্রথম কুসুম কলি স্কুল। নিজের বাসার গেরেজে প্রথম তিনি স্কুল চালু করেন। স্কুলের দ্বিতীয় শাখাটি চালু হয় বিচারপতি কামালউদ্দিন আহমদের গেরেজে। এভাবে একে একে নয়টি শাখা খোলা হয়েছে কুসুম কলি স্কুলের। আর স্কুলগুলো এখন আর কোন গ্যারেজে নয়, ভাড়া করা ভবনে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে স্কুলটিতে ৩০০ শিশু পড়াশোনা করছে। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানোর পর তাদেরক ক্লাবের উদ্যোগেই বিভিন্ন স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশোনার জন্য ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। দেয়া হয় পড়াশোনার খরচ। আবার অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর ক্লাবের উদ্যোগে তাদের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়, যাতে তারা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। প্রশিক্ষণের পর ক্লাবের উদ্যোগেই তাদের কাজের ব্যবস্থা বা ক্ষুদ্র পুজি দিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। আর যারা আরও বেশি পড়াশোনা করতে চায় তাদের বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। ক্লাব সৃষ্টির ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৫১ সালের মাঝমাঝি সময়ে ঢাকার কিছু উচ্চবিত্ত নারীর উদ্যোগে মুলত প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা লেডিজ ক্লাব। এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি সাহাবউদ্দিনের স্ত্রী বেগম শামস্ সাহাবউদ্দিন। ওই সময়ে ক্লাবের কর্মকান্ড চলত বিচারপতি সাহাবউদ্দিনের সরকারি বাড়ির পেছনে একটি কোয়াটার্সে। ১৯৫৫ সালে ৩৬ ইস্কাটন গার্ডেন রোডে ক্লাবটি স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে ক্লাবটি তিন বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। ১৯৬০ সালে ক্লাবটিকে জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে রেজিস্ট্রেশন করা হয় একটি অলাভজনক সামাজিক সংগঠন হিসাবে। একটি কার্যকরী পরিষদ ক্লাবটি পরিচালনা করে। এ পরিষদে একজন সভানেত্রীসহ বারো জন সদস্য রয়েছেন। কার্যকর পরিষদের নির্বাচন প্রতি তিনবছর পর অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার আগে মুলত পাকিস্তানী নারীরা ছিলেন এই ক্লাবের সদস্য। ১৯৭১ সালের পর তারা পাকিস্তানে চলে গেলে ফৌজিয়া সামাদ এই ক্লাবটি পুনর্গঠন করেন। বর্তমানে এই ক্লাবের নেতৃত্বে আছেন গুলশান আনোয়ারা হক। তার নেতৃত্বে ক্লাব ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। ক্লাবের সদস্যদের জন্য অনেক নতুন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। নানা রকম ক্রীড়া, ইয়োগা, সঙ্গীত প্রশিক্ষণ, আবৃত্তি প্রশিক্ষণ চলছে নিয়মিতভাবে। ক্লাবের সদস্যারা এসব কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন। সবচেয়ে উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, ৫০ বা ষাটোর্ধ গৃহিনীরাও এসে নাচ-গান শিখছেন। প্রতি মাসে সদস্যদের জন্য পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান হয়। এসব অনুষ্ঠানে নেচে-গেয়ে আনন্দে মেতে উঠেন সদস্যরা। ক্লাবের কর্মকান্ড প্রসঙ্গে সভানেত্রী গুলশান আনোয়ারা হক বলেন, ঢাকা লেডিজ ক্লাব এদেশের মহিলাদের জন্য এক বিরাট প্রাপ্তি। দিন দিন এর সদস্য সংখ্যা বাড়ছে। আমরা এখানে বিনোদনমুলক কাজের পাশাপাশি সমাজ সেবা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, শরীরচর্চাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম দিনে দিনে সম্প্রসারণ করেছি। ক্লাবের সদস্যরা আমরা এখানে সকলে মিলে একই বৃন্তে গাথা মালার মতো আনন্দ ভালবাসায় অবস্থান করছি। ঢাকা লেডিজ ক্লাব বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস যেমন- স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিজয় দিবস ইত্যাদি পালন করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন উৎসব যেমন- ঈদ, নববর্ষ ইত্যাদিতে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতি বছর ক্লাব সকল সদস্যদের নিয়ে আয়োজন করা হয় বার্ষিক বনভোজন ও মিলাদ মাহফিলের। ক্লাবের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৭০০। ক্লাবে সদস্য পদ লাভ করতে ৫০,০০০ টাকা এবং প্রতি মাসে ১০০ টাকা ফি দিতে হয়। ক্লাবের প্রধান আয়ের উৎস ক্লাবের ‘হল’ ভাড়া থেকে আসা অর্থ। ক্লাবের রয়েছে নিজম্ব লাইব্রেরি। এই লাইব্রেরিতে আছে প্রায় ১৫ হাজার বইয়ের সমাহার। কাওসার রহমান
×