ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুস্তাফিজ- প্রকৃতির এক খেয়ালি উপহার!

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ৬ মার্চ ২০১৬

মুস্তাফিজ- প্রকৃতির এক  খেয়ালি উপহার!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দেশের সীমা ছাড়িয়ে মুস্তাফিজুর রহমান আজ বিশ্বমঞ্চে। ঢাকা থেকে দুবাই, এশিয়া কিংবা ইউরোপ, আইপিএল হয়ে কাউন্টি- মাত্র আট মাসের ক্যারিয়ারে ২০ বছরের বাংলাদেশী ক্রিকেটারে উষ্ণ ক্রিকেট বিশ্ব। ছোট্ট লিকলিকে বাহুতে ছোড়া একেকটা ডেলিভারি যেন ক্রীড়াবিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়! প্রখ্যাত বৃটিশ সংবাদ মাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর জনপ্রিয় রিপোর্টার বার্নি রনি তার লেখায় মুস্তাফিজকে ‘সময়ের বিস্ময়’ বলে উল্লেখ করেছেন। উপমা হিসেবে ব্যবহার করেছেন প্রকৃতির খেয়ালি উপহার, জাদুকরি সব বাক্যে। আসন্ন টি২০ বিশ্বকাপে আলোর অনেকটা এই টাইগার প্রতিভার ওপর থাকবে বলেই ধারণা তার। পাশাপাশি ইংলিশ কাউন্টিতে ডাক পাওয়ায় ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী টুর্নামেন্টে মুস্তাফিজ কেমন করেন, সেটি দেখতেও মুখিয়ে তিনি। রনি তার লেখায় ‘প্রকৃতির খেয়ালি উপহার’- বাক্যটিতে ব্যাপক জোর দিয়েছেন। কারণ মুস্তাফিজের জন্ম মেগাসিটি ঢাকায় নয়। নয় কোন অভিজাত পরিবারে। সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ঈশ্বরের কৃপা ছাড়া এমন সম্পদের আবির্ভাব অসম্ভব বলেই মনে করেন তিনি। প্রকৃতিজাত প্রতিভার সঙ্গে সাফল্যের পরিসংখ্যান মেশাতে গিয়ে গার্ডিয়ান সাংবাদিক যেন ঘোরের মধ্যে পড়ে যান। আট মাসের ক্যারিয়ারে মাত্র ৮২৪টি বল করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। নিয়েছেন ৪৩ উইকেট। প্রতি উইকেটের জন্য খরচ ১২ রান। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০তে ইকোনোমি রেট যথাক্রমে ২.৫৫, ৪.২৬ ও ৫.৬১! রক্ত মাংসের কোন মানুষের পক্ষে, যার বয়স উনিশের আশপাশে, হাড়ের গঠন মজবুত হওয়ার আগে কারও পক্ষে এটা সম্ভব? ক্রিকেট বিশ্বই সেটি কল্পনা করেনি। সবাইকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছেন টাইগার বাঁহাতি পেসার। মুস্তাফিজের ‘কাটার’ বিশ্বের তাবত ক্রিকেট-বিজ্ঞানীদের জন্য নতুন এক গবেষণার বিষয়Ñ বলে উল্লেখ করেন রনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুস্তাফিজের আবির্ভাব ঝড়ের মতো। গত বছর এপ্রিলে ঢাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে জীবনের প্রথম ম্যাচে (টি২০) ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। ১৪১-এ থেমে যাওয়া শহীদ আফ্রিদির দল হারে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে। তবে ক্রিকেট বিশ্বে সত্যিকারের বিস্ময় হয়ে আবির্ভূত হন ভারত সিরিজে। অভিষেক ওয়ানডেতেই ৫ উইকেট নিয়ে হন ম্যাচসেরা। দ্বিতীয় ম্যাচে ৬, তৃতীয় ম্যাচে ২ মোট তিন ওয়ানডের সিরিজে ১৩ উইকেট নিয়ে অভিষেকেই শিকারের বিশ্বরেকর্ড! এরপর মুস্তাফিজের কাটার বিষে নীল হয় শক্তিধর দক্ষিণ আফ্রিকা। সৌজন্যে ঘরের মাটিতে পাকিস্তান, ভারত ও দ.আফ্রিকার মতো শক্তিধর দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে চতুর্থ বাংলাদেশী হিসেবে আমিরাতে অনুষ্ঠিত প্রথম পাকিস্তান সুপার লীগে (পিএসএল) ডাক পান মুস্তাফিজ (৪০ লাখ টাকায় লাহোর কালন্দার্সে)। যদিও ইনজুরির জন্য কাটার মাস্টারের সেখানে খেলা হয়নি। তারচেয়েও চমক জাগানো ছিল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএলে) জায়গা করে নেয়া। ১ কোটি ৪০ লাখ ভারতীয় রুপীতে মুস্তাফিজকে দলে ভেড়ায় সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। পেস সেনসেশনের ভিত্তিমূল্য ছিল ৫০ লাখ রুপী। বিশ্বের সর্বাপেক্ষ জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্জাইজি টি২০ টুর্নামেন্টে ষষ্ঠ বাংলাদেশী ক্রিকেটার মুস্তাফিজ। এর আগে যেখানে খেলেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, তামিম ইকবাল, মোহাম্মদ আশরাফুল, আব্দুর রাজ্জাক ও সাকিব। সাকিবই একমাত্র বাংলাদেশী যিনি তার দল কলকাতা নাইটরাইডার্সের হয়ে নিয়মিত মাঠে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পেয়েছেন। চমকের এখানেই শেষ নয়। এ মাসের শুরুতে ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার ডাক পান ২০ বছরের পেসার। এই পেস-বিস্ময়কে ন্যাটওয়েস্ট টি২০ ব্ল্যাস্ট টুর্নামেন্টের জন্য দলে নেয় ঐতিহ্যবাহী সাসেক্স ক্লাব। সাকিব ও তামিমের পর মাত্র তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে এ আসরে খেলতে যাচ্ছেন মুস্তাফিজ। অর্থাৎ টি২০ বিশ্বকাপের পর আইপিএল, এরপর কাউন্টি মাতাবেন টাইগার পেসার। মুস্তাফিজকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত সাসেক্স কোচ মার্ক ডেভিসের প্রতিক্রিয়া, ‘আমি দারুণ আনন্দিত। অসাধারণ ওর সামর্থ্য। এই মুহূর্তে সে বিশ্বের অন্যতম সেরা তরুণ প্রতিভা। বোলিং বৈচিত্র্যের কারণে ব্যাটসম্যানদের পক্ষে ওকে খেলা খুব কঠিন। সে আমাদের দলে দারুণ এক সংযোজন।’ ২ টেস্ট, ৯ ওয়ানডে আর ১০ টি২০’র ২১ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ঝুলিতে পুরেছেন ৪৩ উইকেট! এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি২০ খেলার পর সাইড স্ট্রেইন ব্যথায় ভুগছেন মুস্তাফিজ। যে জন্য বাংলাদেশ ফাইনালে উঠলেও টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচ খেলতে পারছেন না। তবে বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষ থেকে ইনজুরি গুরুতর নয় বলে জানানো হয়েছে। ৮ তারিখ ভারতে শুরু হতে যাওয়া টি২০ বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখেই বাড়তি সতর্কতা। যেখানে প্রতিটি দলের জন্য মুস্তাফিজ ফ্যাক্টর হয়ে উঠবেন বলে মনে করেন গার্ডিয়ান সাংবাদিক রনি।
×