ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শংকর দাস

হাজার বছরে বাংলা ভাষা পরিবর্তনের রূপ

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

হাজার বছরে বাংলা ভাষা পরিবর্তনের রূপ

আমরা বাংলা ভাষাকে শুধু ভালোই বাসি না, এই ভাষায় আমরা মনের ভাব প্রকাশ করি, বিদ্যার অনুশীলন করি এবং এই ভাষার সাহায্যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করি। পৃথিবীর ভাষাগুলোর মধ্যে এটি একটি বহুল প্রচলিত ভাষা। ‘ইউনেস্কোর’ অনুপ্রেরণায় বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর আরও অনেক দেশের মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে এবং বাংলা ভাষার চর্চা করে। কিন্তু এই বাংলা ভাষার ইতিহাস আমরা ক’জনই বা জানি। এই ভাষার পরিচয় আমাদের ক’জনের জানা? আজ এই বাংলা ভাষার ইতিহাস, তার পরিচয় ও প্রকৃতি সম্পর্কে সংক্ষেপে বলব। প-িতগণ ভাষার সঙ্গে নদী প্রবাহের তুলনা করে থাকেন। নদী এক উৎস মুখ থেকে জন্ম নিয়ে, বিভিন্ন স্রোতধারায় প্রবাহিত হয়ে বিভিন্ন নামে চিহ্নিত হয়ে, মহাসমুদ্রের দিকে ধাবিত হয়। ভাষাও তেমনি জন্ম-লগ্নের পর যুগের পর যুগ বিভিন্ন রূপান্তর ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় এবং বিকাশ লাভ করে। হাজার বছরের পথ অতিক্রম করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নতুন সহস্রাব্দে পা দিয়েছে। যুগভেদে বা যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভাষার পরিবর্তন ঘটে। বাংলা ভাষার ইতিহাসকেও প-িতগণ তিনটি যুগে ভাগ করে থাকে। যেমনÑ ক) প্রাচীন যুগ, খ) মধ্যযুগ, গ) আধুনিক যুগ। প্রাচীন যুগের সীমারেখা টানা হয় দশম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত। প্রাচীন যুগের পরেই মধ্যযুগ। এই মধ্যযুগের সময়সীমা হচ্ছে তের শতক থেকে আঠারো শতক। আঠারো শতক থেকে শুরু হয়েছে বাংলা ভাষার আধুনিক যুগ। প্রাচীন যুগের সাহিত্যিক নিদর্শন হচ্ছে চর্যাপদ। প্রায় হাজার বছর আগে লেখা চর্যাপদের সঙ্গে আমাদের আধুনিক বাংলা ভাষার অনেক পার্থক্য। নিম্নে একটি চর্যাপদের দুটি চরণ এবং আধুনিক বাংলায় তার অর্থ তুলে ধরছিÑ চর্যাপদÑ ‘কা আ তরুবর (+অ) পাঞ্চ বি ডাল (+অ)। চঞ্চল- (+অ) চিত্র পইঠা কাল (+অ)’ ॥ আধুনিক বাংলায় এর অর্থ হলোÑ ‘দহ হল সুন্দর তরু। তার পাঁচটি শাখা। চঞ্চল চিত্তে কাল প্রবেশ করলো ॥’ প্রাচীন বাংলা ভাষায় প্রতিটি ধ্বনি স্বরান্ত বা স্বরযুক্ত ছিল। অর্থাৎ কোন ধ্বনির হসন্ত উচ্চারণ ছিল না। তাই এই উদাহরণে দেখি ‘তরুবর, ডাল, চঞ্চল এবং কাল’ এই শব্দগুলোর শেষে অ-স্বর যুক্ত হয়েছে। মধ্যযুগের বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এই যুগে বৈদেশিক ভাষার প্রভাবে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হয়। মধ্যযুগ ছিল মুসলমানি আমল। মুসলমানি আমলে রাজ ভাষা ছিল ফার্সি। এ সময়ে বাংলা ভাষার শব্দ ভা-ারে অনেক আরবি ফার্সি শব্দ অন্তর্ভুক্ত হয়। মধ্যযুগের আর একটি বৈদেশিক ভাষার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়, তা হচ্ছে পর্তুগীজ। বাংলা ভাষায় গৃহীত পর্তুগীজ শব্দের মধ্যে রয়েছে ‘বালতি’ ‘চাবি’ ‘প্যারেক’ ‘আলমারি’ ‘আনারস’ ‘ফিতা’ ‘জানালা’ ‘গির্জা’ ‘মিস্ত্রি’ ‘বেহেলা’ ইত্যাদি। আধুনিক যুগের শুরু হয় ইংরেজদের আগমন কাল অর্থাৎ আঠারো শতক থেকে। ইংরেজ আমলে ইংরেজি শিক্ষার ফলে বিশ্বের জ্ঞান, বিজ্ঞান, ইতিহাস-দর্শনের সঙ্গে আমরা পরিচিত হই। আমাদের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ও এ সময়ে বিশেষ সমৃদ্ধ হয়। বাংলা ভাষায়ও নতুন নতুন শব্দ এলো ইংরেজি ও পৃথিবীর অন্যান্য ভাষা থেকে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত নতুন শব্দ ভা-ারে সমৃদ্ধ হলো বাংলা ভাষা মাতৃভূমি-মাতা-মাতৃভাষা শ্রদ্ধার বস্তু। ভাষা একটি নদীর মতোই প্রবহমান যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভাষায় ঘটে কত পরিবর্তন যুগ বদলের মধ্য দিয়ে। প-িতগণ বলে থাকেন যে, দশম শতাব্দীতেই বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়। বাংলার বৌদ্ধ রাজা ও হিন্দু রাজাদের (দশম-দ্বাদশ শতাব্দী) আমলকে বলা হয়ে থাকে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ। কারও মতে, বৌদ্ধ-হিন্দু যুগ। অনুমান করা হয় ১২০৩ খ্রিঃ বখতিয়া খিলজী বাংলা জয় করেন। ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে ইংরেজদের বিজয়ের এ দেশ ইংরেজ আমল শুরু হয়। হিসাবের সুবিধার্থে বলা হয় ১৩০০ থেকে ১৮০০ শতক পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের বিস্তৃতি। প্রাচীন যুগের একমাত্র সাহিত্যিক নিদর্শন ‘চর্যাপদ’। বৌদ্ধ সহজিয়া মত প্রচারের উদ্দেশ্যে চর্যাকারগণ এই চর্যাপদগুলো রচনা করেন। চর্যাপদের একমাত্র পা-ুলিপিটি এ শতাব্দীর গোড়ার দিকে নেপালের রাজ-গ্রন্থাগারে আবিষ্কৃত হয়। এটি আবিষ্কার করেন প-িত হরপ্রষাদ শাস্ত্রী। এ পুঁথিটির নাম ‘আশ্চর্য চর্যাচয়’ বা ‘চর্যাচর্য বিনিশ্চিয়।’ চর্যাচর্য বিনিশ্চয় আমাদের কাছে চর্যপদ বলেই পরিচিত। পা-ুলিপিটি খ-িত ও ছেঁড়া থাকায় পাওয়া গেছে সাড়ে ৪৬টি পদ। চর্যাপদ যারা রচনা করেছিলেন তাদের বলা হতো সিদ্ধাচার্য। তাদের অনেকেই ছিলেন ‘নাথ’ সম্প্রদায়ের লোক। প্রাচীন যুগের চর্যাপদের ২৩ জন কবির মধ্যে মীনপা, কুক্করীপা, ভেন্ডনপা, সানুপা, চৌরঙ্গীপা, শবরীপা, লইপা, বিরূপা, ডেম্বিপা, তেলিপা, পরুপা, দারিসপা, সুষ্করিপা, ভুসুকপা, কহ্নপা, সরহপা, মাস্তিপা, আর্যদেব, কম্বলাস্বর, কঙ্কন, কবির নাম আমরা ভালভাবে জানি। ২৩ জন সিদ্ধাচার্যের খ-িত পত্রসহ সর্বমোট ৫০টি চর্যা ধর্মসঙ্গীত উদ্ধারপ্রাপ্ত হয়েছে। ১৪১৮ খ্রিস্টাব্দে জালালউদ্দিন মোহাম্মদ শাহ বাংলার গৌড়ে রাজধানী স্থাপন করেন। সে সময় কবি কৃত্তিবাস বাংলা ভাষায় ‘রামায়ণ’ রচনা করেন। ন্যায়বিচারের জন্য খ্যাত আলাউদ্দিন হোসেন শাহ সাহিত্যানুরাগী সুলতান হিসেবে সুবিদিত ছিলেন। তাঁর সময়ে কবি বিজয়গুপ্ত ও কবি বিপ্রদাস তার কাব্যের ভনিতায় আলাউদ্দিনের প্রশংসা করেন। আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তার সেনাপতি পরাগল খাঁও কবীন্দ্র পরমেশ্বরকে মহাভারতের পাঁচালী রচনার নির্দেশ দেন। সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ (১৫৩৩-১৫৩৮) এর রাজত্বকালে চৈতন্য ভাগবত কাব্য রচিত হয়। সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধি হয়েছে। মুসলমান কবিরাও বাংলা সাহিত্যের চর্চায এগিয়ে এসেছেন। বাংলা সাহিত্যে তখন কাহিনী কাব্যে অভাব ছিল। সে অভাব পূরণের জন্য তারা আরবি-ফার্সি হিন্দি কাব্য বাংলা ভাষায় অনুবাদে উৎসাহিত হন। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দৌলত উজীর বাহ্্রাম খানের ‘লায়লী-মজনু’ শাহ মুহাম্মদ সগীরের ‘ইউসুফ-জোলেখা’ মুহাম্মদ কবীরের ‘মধুমালতী’ দৌলত কাজীর ‘সতীময়না’ এবং আলাওলের ‘পদ্মাবতী’ উল্লেখযোগ্য। সতেরো শতকে বাংলা ভাষার প্রতিপত্তি বেড়ে গিয়েছিল যে, বাংলা পার্শ্ববর্তী আরাকান রাজ্যেও বাংলা ভাষার চর্চা বিস্তৃত হয়েছিল। দৌলত কাজী, আলাওল, মাগান ঠাকুর আকানে বসেই বাংলা কাব্য রচনা করেন। সতেরো শতকের কবি আবদুল হাকিম বলেছেন, যারা বাংলা ভাষার নিন্দা করে, বাংলা ভাষার চর্চা করে না। তারা এই দেশত্যাগ করে অন্য কোথাও যায় না কেন। যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী। সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি। দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন যুয়ায়। নিজ দেশ ত্যাহি কেহ্নে বিদেশ ন যায়। বহু ভাষাবিধ ও প-িত ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ মনে করেন যে, নাথ বংশের প্রতিষ্ঠাতা দক্ষিণবঙ্গের লোক মীননাথ বা মৎস্যেন্ত্র নাথ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম লেখক, লইপা নহেন। ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর বর্ণিত সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে মীননাথই বাংলার আদি কবি বলে নির্দিষ্ট করা যেতে পারে। বাংলা ভাষা হাজার বছরের পুরনো এ কথা চর্যাপদ আবিষ্কারের আগে কেউ জানতই না। চর্যাপদ আবিষ্কৃত হওয়ার পর আমরা বাংলা ও বাঙালির কথা জানতাম। মধ্যযুগের কবিদের মধ্যে বড় চ-িদাস, মুকুন্দ রাম, বিজয় গুপ্ত, জ্ঞান দাস, মুকুন্দ দাস, বিদ্ধাপতি, আলাওল সৈয়দ সুলতান, দৌলত উজির বাহরাম খান, মোহাম্মদ মুকিম, আবদুল হাকিম প্রমুখ। প্রসিদ্ধ কবিদের নাম আমরা পাই। যে চর্যাপদকে আমরা আমাদের ভাষা ও সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন বলে গর্ব করি, তার ভাষা হয়ত আজকাল অনেকেই বুঝতে পারে না। চর্যাপদের ভাষাকে বলা হয় আলো-আঁধারির ভাষা। কারণ এ সময়কার রচিত চর্যাপদের অনেক পদের অর্থ অত্যন্ত রহস্যময়, বিভিন্ন অর্থ দ্যোতক। তবে কোন কোন পদে তৎকালীন মানুষের অর্থনৈতিক টানাপড়েনের কথাও সমাজচিত্রে প্রতিফলিত হতে দেখা যায়। কাহ্নপাদের দুটি পঙ্ক্তির উদ্ধৃতি দেয়া হলো। মন তরু পাঞ্চ-ইন্দি তসু সাহা ॥ আসা বহল পাত ফল বাহা ॥ অর্থাৎ মন হলো তরু, পঞ্চ ইন্দ্রিয় তার শাখা আশা বহুবিধ পত্রের ও ফলের বাহক। চর্যাগীতগুলো বাংলা ভাষা ও ইতিহাসের সবচেয়ে পুরাতন রূপ। বিতর্কের জালে না জড়িয়ে স্বীকার করতেই হবে এই গীতিকাগুলো প্রাচীন বাংলা ভাষায় রচিত। কিন্তু খটকা লাগে এখানে যে, হাজার বছরের সময়ে পরিসরে রচিত এই সাড়ে ৪৬টি চর্যাগীত বিগত অর্ধ শতাব্দীর বাংলা ভাষা-সাহিত্যের গবেষণা ও গৌরবের অবলম্বন হলেও অনুসন্ধিৎসু পাঠকের মনে এ প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবে উদিত হতে পারে যে, একটি জাতির ভাষা এতকাল পর্যন্ত আবিষ্কৃত থেকে একই ভাষা ও ভঙ্গিতে একই গ্রন্থে সংকলিত হলো কিভাবে? এ প্রশ্নের সদুত্তর দেয়ার কোন চেষ্টা অদ্যাবধি কোন প-িত করেননি বিধায় বিষয়টি হেঁয়ালির মতোই রয়ে গেছে। ১৭৭৮ সালে হ্যালহেড সাহেব রচিত বাঙলা ব্যাকরণ ছাপার পর বাংলা ছাপাখানার যুগ শুরু হয়। ১৮০১ সালে কোলকাতায় ইংরেজ রাজ কর্মচারীদের বাংলা ও অন্যান্য ভাষা শেখার জন্য ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ স্থাপিত হয়। এই কলেজের বাংলা ভাষার প্রধান অধ্যাপক উইলিয়াম কেরি বাংলা ভাষায় গদ্য রচনায় উদ্যোগী হন এবং বাংলা গদ্য রচনায় বাঙালি সহকর্মীদের উৎসাহিত করেন। বাংলা ভাষায় বই ছাপায় তখন কোন অসুবিধা ছিল না। উইলিয়াম কেরির সময় বাংলা গদ্যের রূপ ছিল বিশৃঙ্খল, বাংলা বাক্যে ছিল না দাঁড়ি কমার শাসন। বাঙলা গদ্যকে সুশৃঙ্খল অবস্থায় নিয়ে এলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। যাকে প-িতগণ বলে থাকেন বাংলা গদ্যের জনক। ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ, ড. সুনিতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, মীর মশাররফ হোসেন, পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত এবং বাঙলা সাহিত্যের প্রথম আধুনিক কবি মাইকেল মধুসূধন দত্ত। এক সনেটে তিনি বাঙলা ভাষাকে মণি-মুক্তার সমৃদ্ধ এক রতœ খনির সঙ্গে তুলনা করেছেন। আধুনিক যুগের গোড়ার দিকে ‘নিধুবাবু নামে পরিচিত এক কবি (রামনিধি গুপ্ত, ১৭৪১-১৮৩৯) স্বদেশী ভাষার অর্থাৎ মাতৃভাষার গুণকীর্তন করে লিখেছেনÑ নানান দেশের নানা ভাষা, বিনে স্বদেশী মিটে কি আশা। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে মুসলমান কবিদের বিপুল অবদানে সমৃদ্ধ হলেও আধুনিক বাংলা সাহিত্যে মুসলমান সাহিত্যিকদের আগমন ঘটেছে অনেক বিলম্বে। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের রূপকার ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ, মীর মশাররফ হোসেন সাধু ভাষায় রচনা করেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ কারবালার কাহিনী অবলম্বনে ‘বিষাদ সিন্ধু’ ও জমিদার দর্পণ। হিন্দু মুসলমান কবি সাহিত্যিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলা সাহিত্যের বিশেষ উন্নতি সাধিত হয়। সাহিত্যের সমৃদ্ধি সকল শাখায়ই পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল ইসলামের অবদানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত হয়। বাংলার মানুষ ও প্রকৃতি রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বিশ্বমানবতার বাণী তাঁর কাব্যকে সারা বিশ্বের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক সাহিত্য পুরস্কার ‘নোবেল প্রাইজ’ লাভ করেন। বিশ্বকবি নামেও তিনি সুবিদিত। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম গৌরব কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় বাঙালির জাতীয় চেতনা এক নতুন দিগন্ত লাভ করে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য দশম শতাব্দীতে পথচলা শুরু করে। হাজার বছর ধরে পথ হেঁটে আজ এসে দাঁড়িয়েছে একবিংশ শতাব্দীর দুয়ারে। আলো আঁধারি ভাষা বাংলা আজ কত ঐশ্বর্যে ঐশ্বর্যম-িত। হাজার বছরের দীর্ঘ পথ পার হয়ে বাংলা ভাষা কখনও ঘুরে বেরিয়েছে ফার্সি, পর্তুগীজ, ইংরেজি, উর্দু, বৌদ্ধবিহারে, কখনও গৌড়ের অধিপতির রাজসভায় কখনও বা আরাকান রাজ অমাত্যের দরবারে খুঙ্গি-পুঁথি বগলে করে। কখনও পদাবলী কীর্তনে বা পাঁচালির আসরে ঢোল-খঞ্জনির তালে তালে নৃত্য করেছে কখনও বা গলায় তুলে নিয়েছে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার। কখনও কারাগারে আবদ্ধ হয়ে কপাট ভাঙার গান গেয়েছে। অমর একুশের গান গেয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছে, কখনও বা বন্দুক হাতে নিয়ে মুক্তির গান গেয়েছে। ধন্য আমাদের এই বাংলা ভাষা।
×