ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টুটুল মাহফুজ

আলো আসবেই

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আলো আসবেই

কবিগুরুর ভাষায় ‘দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটাকে রুখি সত্য বলে আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি’ বই দেখায় আলোর পথ। বই কাটায় অন্ধকার। বই পড়ে মানুষ অজানাকে জানে, অদেখাকে দেখে। সত্য বুঝতে শেখে, জানতে শেখে। প্রতিবাদ করতে শেখে। আর যখন এই বই প্রকাশ বা বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আসে তখন আসলে সমস্ত সাহিত্য সংস্কৃতির স্বাভাবিক গতির ওপর বাধা চলে আসে। অশুভ কোন কিছুর ভয়ে যদি জ্ঞানকুঠুরির দরজাটাই বন্ধ করে দেয়া হয় তবে সেই দরজা দিয়ে শুভ কোন কিছুও ঢোকার অনুমতি পাবে না। এখন প্রতিবছর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমিসহ সারা ঢাকা শহরে বইমেলাকে ঘিরে উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে জমে ওঠে বিশাল এক উৎসব। সারা দেশে এমনকি বিদেশেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নবীন, প্রবীণ, কবি-লেখক বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে হাজির হয় ঢাকার বটতলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অমর একুশে বইমেলায়। নবীন, প্রবীণ, কবি-লেখকদের নতুন নতুন নানান বইয়ের খবরাখবর, রংবেরঙের প্রচ্ছদ ডিজাইন, কবি-লেখকদের সঙ্গে স্বল্প আড্ডা-আলাপচারিতা, আর মেলার এদিক ওদিক ছোটাছুটিতে মেতে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। এ হলো জ্ঞানের মেলা, বাংলাভাষীদের প্রাণের মেলা। এ মেলায় রয়েছে কবি-লেখকদের সৃষ্টিশীলতা, রয়েছে প্রকাশকদের বিপুল পরিমাণ টাকাকড়ির বিনিয়োগ, প্রচ্ছদ শিল্পীর কল্পনা ও পরিকল্পনা, কাগজ বিক্রেতাদের লাভ লোকসানের হিসাব, বাঁধাই কারিগরদের স্বপ্ন ও আশা। এ মেলা কেবল উৎ্সব নয়। এর মাঝে আরও কিছু আছে। এখানে একাকার হয়ে মিশে আছে মহান ভাষা আন্দোলনের চেতনা। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বাঙালীর প্রবল বিদ্রোহের বার্তা, মাতৃভাষার প্রতি মমত্ববোধের বার্তা আর সর্বস্তরে বাংলা প্রবর্তনের প্রত্যয়। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রবর্তন আমরা কি আজও করতে পেরেছি? কিন্তু মাঝে মাঝেই এই প্রাণের মেলায় ঘটে চলেছে কোন না কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। গত বছর বই মেলা প্রাঙ্গণ থেকে কুপিয়ে হত্যা করা হলো মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়কে, এই বই মেলা থেকেই হত্যার চেষ্টা করা হয় ভাষাবিজ্ঞানী হুমায়ুন আজাদকে। গত বছর কুপিয়ে হত্যা করা হলো প্রকাশক দীপনকে। হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল আরও প্রকাশকদের। তাদের অপরাধ মুক্তচিন্তার বই প্রকাশ করা। প্রকাশক হত্যা এবং প্রকাশকদের ওপর হামলার ঘটনায় বই প্রকাশ হুমকির মুখে বাংলাদেশে। প্রকাশকদের কথায়, ‘আমরা আতঙ্কিত এই ভেবে যে বই প্রকাশ করে আবার কাকে প্রাণ হারাতে হয়। আমরা বিবেচনা করি ভাল বই, মুক্তচিন্তার ইস্যুগুলো নিয়ে? কিন্তু মুক্তচিন্তার ওপর তো আঘাত আসছে। কোন বই প্রকাশ করা যাবে আর কোন বই প্রকাশ করা যাবে না, তাহলে তো আমাদের হাত-পা বেঁধে দেয়া হলো। আমরা এই অবস্থা মেনে নিতে পারি না। প্রকাশক শুধু নয়, এর আগে লেখক-ব্লগারদের হত্যা করা হয়েছে। তাই এটা স্পষ্ট যে বই, মুক্তচিন্তা করেন যাঁরা, লেখক-প্রকাশক সবাই এখন চাপাতির নিচে। তারা আরও বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়ে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তবে আমাদেরও প্রতিবাদী হতে হবে। আমাদেরও মাঠে নামতে হবে। ঘরে বসে থাকলে চলবে না। অমর একুশের বইমেলাকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশে অধিকাংশ সৃজনশীল বই প্রকাশ হয়। কিন্তু সৃজনশীল প্রকাশকরা হামলা বা হত্যার শিকার হওয়ায় শঙ্কায় আছে। মেলায় আগত পাঠকদের একটা বড় অংশকে দেখা গেছে শুদ্ধস্বর এবং জাগৃতি প্রকাশনির স্টলে। যদিও শুদ্ধস্বর প্রকাশ থেকে এবার নতুন কোন বই প্রকাশিত হয়নি। প্রকাশকদের ওপর হামলা যেন মুক্তচিন্তা বিষয়ক বই পড়তে পাঠকদের বেশি আগ্রহী করে তুলেছে। এছাড়া মেলার সার্বিক বিষয় নিয়ে ক্রেতাদের একজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘সব কিছ ঠিকঠাক মতোই চলছে তবে স্টলের সাজসজ্জা ও কর্মীদের বিষয়েও প্রকাশকদের আরও ভাবা প্রয়োজন। প্রকাশকরা স্টলের বাহ্যিক সাজসজ্জার দিকে নজর দিচ্ছেন বেশি এবং পাঠকদের তা আকৃষ্টও করছে বেশ। বই মেলায় অনেক দৃষ্টিনন্দন স্টল দেখা যায়, কিন্তু বই কীভাবে সাজিয়ে রাখতে হয়, সে দিকে নজর প্রয়োজনের তুলনায় কম। যারা বিভিন্ন ধরনের বই প্রকাশ করেন, তারা একেকটি সারিতে একেক রকম বই রাখতে পারেন কিংবা একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে বই রাখতে পারেন যেখান থেকে পাঠকদের পক্ষে বই খোঁজা সুবিধাজনক হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনবোধে লাইব্রেরি সায়েন্সে পড়ুয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। আর একজন পাঠকের সঙ্গে জানা গেছে, অনেক স্টলে একই সঙ্গে উপন্যাস-গল্প-প্রবন্ধ ইত্যাদির বই এলোমেলোভাবে রাখতে দেখা গেছে। তাছাড়া কোন বইটি পুরনো কিংবা কোনটি নতুন, তাও বোঝার উপায় নেই। প্রচ্ছদের কারণে কোন কোন বইয়ের নাম ও লেখকের নাম থাকে উপরে, কোন বইয়ের নিচেÑ এগুলো মাথায় রেখে স্টল সাজালে তা পাঠকের জন্য সুবিধার হবে। ক্রেতা বা পাঠকদের সঙ্গে স্টলের কর্মীরা কী ধরনের আচরণ করবেন, তাও ছোটখাটো প্রশিক্ষণের বিষয়। প্রকাশকরা এ ব্যাপারে তাদের কর্মীদের বইমেলা শুরুর আগেই এক-দুদিনের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, পাঠক কোন বইয়ের নাম জিজ্ঞাসা করলে কর্মী অম্লান বদনে বলে দিচ্ছেন বইটি নেই। কিন্তু পরে খুঁজে দেখা যায়, বইটি সত্যিই ওই স্টলে আছে। এ ধরনের আচরণ একদিকে যেমন পাঠককে ওই প্রকাশনীর বই কিনতে অনুৎসাহিত করে, তেমনি তা প্রকাশনীর ইমেজের জন্যও ক্ষতিকর। তাছাড়া কোন কোন ক্ষেত্রে বিক্রয় কর্মীদের রূঢ় ব্যবহারও করতে দেখা যায়। অবশ্য এটিও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সব পাঠক এক রকম নন। বিক্রয় কর্মীরা প্রতিদিন অসংখ্য পাঠক সামলান। পাঠকও যদি নিজ ব্যবহারের প্রতি মনোযোগ দেন, তাহলে অনেক ঝঞ্ঝাট এড়ানো যায়। তবে বিক্রয় কর্মীদের মূল দায়িত্বই হচ্ছে সব ধরনের পাঠক সামলানো। প্রায় শেষের পথে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলা ২০১৬। কবি, লেখক, সাহিত্যিক, নাট্যকার, ছড়াকার, সংস্কৃতিকর্মী, বইপ্রেমী, পাঠক, প্রকাশকÑ সব মিলে বাঙালীর প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা। ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমির বটতলায় প্রকাশক চিত্তরঞ্জনের মুক্তধারার একাকী পথচলার মধ্য দিয়ে গ্রন্থমেলার যাত্রা শুরু হয়। সরদার জয়েন উদ্দীন তখন গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক। ইউনেস্কো তখন ঐ বছরকে আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে। সেই ১৯৭২ সাল থেকে স্বল্প রঙ্গে-ঢঙ্গে মৃদু পায়ে এগুতে এগুতে বর্তমান পর্যন্ত এসে দাঁড়াল। বয়সের হিসেবে আজ ৪৪ বছরে পা দিয়েছে বাংলা একাডেমির এই প্রাণের বইমেলা। সময় ও সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বইমেলার গায়ে লেগেছে নতুন রং আর তেজোদীপ্ত হাওয়া। অন্যবারের তুলনায় এবার একুশে বইমেলার পরিধি বেড়েছে। বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রায় ছয় হাজার বর্গফুটের ১৫টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ করা হয়েছে এ বছর। একাডেমি প্রাঙ্গণে ৮৩টি প্রতিষ্ঠানকে ১১১টি ইউনিট, সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ৩২০টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৪০টি ইউনিট এবং সব মিলিয়ে মোট ৪০২টি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৬৫১টি ইউনিট বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়াও সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের অংশটিকে ভাগ করা হয়েছে ১৫টি চত্বরে। দেশের প্রথম সারির শক্তিশালী লেখক সাহিত্যিকরা এখন তাদের নিজের দেশে বন্দী। প্রতিনিয়ত হুমকি আর হত্যার ভয়ে তারা রাস্তায় বের হচ্ছেন পুলিশ প্রহরায়। অনেকে সরকারের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। দেশের ভেতরে স্বাধীনতাবিরোধী এমন গোষ্ঠী থাকা সত্যিই খুব আতঙ্কের ব্যাপার। এ রকম অসুস্থ অবস্থা আমাদের কাম্য নয়। পাঠক-পাঠিকা খুঁজে পাক তাদের স্বপ্ন ও সফলতার দিকনির্দেশনা। প্রসারিত হোক বাংলা ভাষা ও সাহিত্য। আলো আসুক, কাটুক অন্ধকার। সকলের আকাক্সক্ষাই সত্য হবেÑ কাটবে অন্ধকার, তবে এখনো কাটেনি আঁধার। যে আঁধার এখনও ঘিরে আছে তার কিছু জানা যাবে শাহরিয়ার কবির ও ড. আনোয়ার হোসেনের নিচের এ সাক্ষাতারের ভিতর দিয়েÑ শাহরিয়ার কবির কেমন দেখছেন এবারের বই মেলা? বই মেলায় যাইনি আমি এবার। আমার কোন বই প্রকাশ করা হয়নি। প্রকাশ করার সাহস পায়নি। আমিও বলেছি, এ ধরনের বই যদি মেলায় প্রকাশ করা না হয় তবে আমিও মেলায় যাব না। সার্বিকভাবে চলছে ভালই। তরুণরা মেলায় আসছে, বই কিনছে। কি ধরনের বই? আপনার বইয়ের বিষয়বস্তু কি ছিল? মৌলবাদ-ওয়াহাবীবাদ বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, আস্তিক নাস্তিক দ¦ন্দ্ব। বর্তমান সময়ে প্রকাশকদের ওপর চাপ আছে যার ফলে প্রকাশকরা সাহস পাচ্ছে না এ ধরনের বই প্রকাশ করতে। দীপন হত্যাসহ আরও কিছু প্রকাশকের ওপর হামলা হয়েছে। গত বছর বই মেলায় হত্যা করা হলো মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায় কে, হত্যা করা হয়েছিল হুমায়ুন আজাদকে। মৌলবাদ, মুক্তচিন্তা, স্বাধীনতার পক্ষে যারায় লিখেছেন, লিখতে গিয়েছেন তাদের ওপরই হামলা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু উদ্বগের ব্যাপার হচ্ছে, এদের কোন বিচার হচ্ছে না। আজও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। কেন? কোন চাপ আসছে কি? প্রকাশকদের ওপর হুমকি আছে। জীবনের হুমকি। আমার ওপরও আছে। আমাকে রাস্তায় নামতে হয় পুলিশ প্রহরায় কিন্তু আমি তা চায়নি। দেশ স্বাধীন করেছিলাম এভাবে চলার জন্য? আমি মৃত্যু ভয় করি না। আমার বই মেলার পর প্রকাশ পাবে। কোথা থেকে আসছে হুমকি, কারা দিচ্ছে? মৌলবাদীরা। মেলায় ঠিকই হত্যাকারী হামলাকারীদের বই আছে, ঘাতকরাও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেখানে এভাবে বেড়ানোর কথা ছিল আমাদের। এভাবে পুলিশী গার্ড নিয়ে বেড়াব বলে কি দেশ স্বাধীন করেছিলাম। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে বারবার আঘাত এসেছে মুক্ত চিন্তায়। আমি খুব উদ্বিগ্ন। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আপনি স্বাধীন মতপ্রকাশের ব্যাপারে কি বলবেন, গণজাগরণ আন্দোলনে স্বাধীন মতপ্রকাশের দাবির কথা বলে আসছে তা বন্ধ হয়ে যাবে কি না? আমি খুব আশাবাদী মানুষ। আমি বিশ্বাস করি আলো আসবেই। আমি একসময় ভাবতাম আমাদের পর আর কেউ আসবে না। কিন্তু না, আমাদের তরুণরা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী। মুক্ত চিন্তা করতে পারে। মুক্ত চিন্তা মৌলবাদ বিরোধী চিন্তা তারা করছে। তারা প্রমাণ দিয়েছে তার। শাহবাগের আন্দোলনে যে বিশাল সমাগম তারই বহির্প্রকাশ। সাহিত্য-সংস্কৃতির অগ্রযাত্রা তার মানে বাধাপ্রাপ্ত, কি ধরনের বাধা আসছে মনে হয়? আমি আবারও বলছি, আমি আশাবাদী। হ্যাঁ বাধা আসছে। তারপরও সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা, এগিয়ে চলেছে দেশ, এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি। যদিও মুক্ত চিন্তা বিপক্ষে ও স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধের শক্তি স্বাধীনতার পর থেকেই খুব তৎপর। প্রশাসনের অসর্তকতাসহ সরকারের সহযোগিতার অভাব রয়েছে। আমি আমাদের তরুণ লেখকদের লেখায় খুব আশাবাদী। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের চিন্তার খোরাক জোগাবে, স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত রাখবে। আপনার কাছে কি মনে হয়, আমাদের পাঠকরা আসলে কি ধরনের বই পছন্দ করে? গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ? আসলে পাঠক হচ্ছে মাছির মতো। মাছি যেমন মিষ্টির দোকানেও যায় আবার পচা কাদায়ও যায়। পাঠক হচ্ছে এমন। তারা সব বই-ই পারলে দেখতে চায়, পড়তে চায়। তবে আমি আমাদের পাঠকদের নিয়ে খুব আশাবাদী, তারা স্বাধীনতার বই কিনছে, পড়ছে। মেলায় প্রচুর স্বাধীনতার বই পাওয়া রয়েছে। বাজারেও অনেক স্বাধীনতার চেতনা বিষয়ক বই রয়েছে। আপনি এখন কি নিয়ে ব্যস্ত, কি লিখছেন? আস্তিক নাস্তিক দ¦ন্দ¦ বিষয়ক। বইমেলার পর প্রকাশ পাবে। ড. আনোয়ার হোসেন বইমেলা তো প্রায় শেষ, কেমন দেখলেন এবারের মেলা? চলছে ভালই। তবে আমি শঙ্কিত। বেশ কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে গেছে মেলার শুরু থেকেই। কেউ কিছু বলছে না। প্রাণের ভয়ে সবাই কেমন উল্টো স্রোতে গা ভাসিয়েছে। এ অবস্থাকে মোটেই ভাল বলা যায় না। শাহরিয়ার কবিরের বই কোন প্রকাশনা প্রকাশ করে নি, এসব ব্যাপার আপনি কিভাবে দেখছেন? মত প্রকাশে মুক্ত না হলে দেশ এগিয়ে যাবে কি করে। প্রকাশকরা ভয়ে আছে। তাদের হুমকি দেয়া হয়েছে। আমার ওপর হুমকি আছে। ২২ তারিখ সন্ধ্যা ৬ টার দিকে মেলার ৪৭২ নং স্টল প্ল্যাটফর্মে আগুন ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। ঐ স্টলে আমার বই ছিল ‘অনন্ত আমরা চুপ থাকবো না’। স্বাধীন মতপ্রকাশের জায়গাটায় আপনি কি বলবেন? প্রকাশকরা বই নিচ্ছেন না, দেশের শক্তিশালী লেখক সাহিত্যিকরা ভয়ে কথা বলছেন না। তবে কি মত প্রকাশের জায়গাটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে? আমি ব্যাপারটা নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও মুক্তমত প্রকাশ নিয়ে খুব শঙ্কিত আমি। জীবন নাশের হুমকি আছে। তবে আমি ভয় পায় না। অনেকদিন বেঁচেছি আর বাঁচতে চাই না। এবারের মেলায় আমার বইটিও এ ঘরানার। কোথা থেকে আসছে এসব হুমকি? আপনি কি মনে করেন, এগুলো কি আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতির অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেবে? আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য খুব গৌরবের। অনেক রক্তক্ষয়ী আন্দোলন হয়েছে গত শতাব্দীতে। এই অগ্রগতি থামিয়ে দেয়া যাবে না। তবে অগ্রগতিতে বাধা দেয়া হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা চলছে, এক অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ। লেখক প্রকাশকদের ওপর হামলা কিন্তু তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে আমরা একসময় মুক্তি পাব। আমি সেই দিনের আশায় আছি। এবারের মেলায় আপনার কি কি বই বেরিয়েছে? ‘অনন্ত, আমরা চুপ থাকব না’ আর ‘চক্রবর্তীর ঘরে ফেরা।’ এই দু’টি। এর মধ্যে ‘চক্রবর্তীর ঘরে ফেরা’ ছোট গল্প সংকলন। বইটিতে ১১টি ছোট গল্প রয়েছে। কেমন চলছে? আমি আমার দায়িত্ব বোধ থেকে বই লিখি। বই কাটতির ওপর আমার বিশেষ খেয়াল নেই। তারপরও যদি বলতে হয় বলব, চলছে ভালই। মেলায় এবার কোন্ ধরনের বই বেশি চলছে? শিশু-কিশোরদের বই বেশি চলছে। বাচ্চারা তাদের মা-বাবার সঙ্গে মেলায় আসছে, বই কিনছে এই দৃশ্য আমার খুব ভাল লেগেছে। এমনটাই হবার কথা। আর মেলায় তরুণদের বরাবরই বেশি দেখা যায়। আমি জানি ওরা বই কেনে, বই পড়ে। আমাদের পর ওরাই স্বাধীনতার চেতনাকে ধরে রাখবে। মেলার সামগ্রিক বই ও লেখকদের নিয়ে আপনার বক্তব্য কি? প্রতিবারের মতো এবারও মেলায় বিপুলসংখ্যক নতুন বই এসেছে। তবে এখানে কথা হচ্ছে, সব বই-ই যে মানসম্পন্ন তা না। পাঠক-পাঠিকাদের খুঁজে নিতে হবে ভাল বই। মেলা প্রায় শেষ, এবার কাদের বই বেশি চলেছে বলে আপনার মনে হয়েছে? নবীন না প্রবীণ লেখকদের? প্রবীণদের বইয়ের পাশাপাশি নতুনদের বইও চলছে। নতুনরাও ভাল লিখছে। যেমন, এবার শ্রাবণ প্রকাশ থেকে রাজীব মীরের ‘সংবাদপত্রে শাহবাগ’ বইটি প্রকাশিত হয়েছে। বইটি খুব তথ্যবহুল। আমার ভাল লেগেছে। তবে মেলায় বরাবরই হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবালের বই বেশি চলে। মানুষ বই পড়ছে। আমাদের বই পড়তেই হবে। বই-ই আমাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে যাবে।
×