ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভদন্ত করুণা ভিক্ষু

আগামীর স্বপ্ন শিশু

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আগামীর স্বপ্ন শিশু

সবচাইতে কোমল হৃদয়ের প্রাণ হচ্ছে শিশু। শিশুদের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য হৃদয়ের মধ্যে স্থান দিয়েছেন। তিনি চেয়েছেন, শিশুদের উপযুক্ত বাসযোগ্য পরিবেশ। দার্শনিক প্লেটো শিক্ষাতত্ত্বের মধ্যে উল্লেখ করেছেন, শিশুদের সঙ্গীত চর্চার। আনন্দময় পরিবেশের মধ্যে শিশুদের গড়ে তোলার জন্য। গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, মাতা-পিতু নিযং পুত্তং, আয়ুসা একপুত্তে মনুরকেখ। মাতা যেমন স্বীয় পুত্রকে অন্তরের প্রাণ দিয়ে লালন পালন করেন, তেমনিভাবে অপরের সন্তানদের স্বীয় পুত্রের ন্যায় লালন পালন করার জন্য। তাদের এই অভিপ্রায় কেউ অন্তরে লালন করে না। বার বার শিশুরা নির্যাতিত হয়েছে অগোচরে, অন্তরালে ও নীরবে। আজ আমরা দেখি রাজনের মতো ছেলের পাশবিক অত্যাচারে মৃত্যুবরণ করতে, দেখা যায় কোমলমতি শিশুদের চায়ের দোকানে কাজ করতে, দেখা যায় লোহা লঙ্করের দোকানে কাজ করতে, দেখা যায় বিভিন্ন ফুটপাথে অবস্থান করতে, দেখা যায় রাস্তায় ভিক্ষাবৃত্তি করতে, দেখা যায় তাদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করতে, দেখা যায় কংক্রিট ভাঙ্গানোর কাজ করতে। কোন কোন শিশুকে দেখা যায় রেলওয়ে স্টেশনে গাজা, ভাং, সিগারেটসহ বিভিন্ন নেশাগ্রস্ত দ্রব্য গ্রহণ করতে। আজ শিশুরা পড়ালেখা না করে অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। এ কোমলমতি শিশুদের অন্তরের লালিত স্বপ্ন পূর্ণ হওয়ার আগেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় অমানবিক, বিবেকহীনতা কর্মের কারণে। একজন শিশু সবসময়েই বড়দের আদন ও ¯েœহের প্রত্যাশী। কিন্তু দেখা যায় শিশুরা আদর-¯েœহের বিপরীতে তাদেরকে অত্যাচার, নির্যাতন ও অমানবিক কাজ করতে। আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দূষিত পানির মতো মানুষের হৃদয় হয়ে গেছে দূষিত। একের পর এক ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশুদের নির্যাতন, অপহরণ, জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় ও হত্যা ক্রমবর্ধমানহারে বেড়ে চলছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে হবিগঞ্জের বাহুবল থেকে সুন্দ্রাটিকি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অপহৃত চার স্কুলছাত্রের গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধার। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন কোমলমতি শিশুদের হতে ধর্ষণের শিকার, এমনকি তাদেরকে পড়তে হয়, বাল্য বিয়ের পিঁড়িতে। শুধু কি তাই, মায়ের গর্বে শিশু জন্ম নেয়- তখন সেই মা ডাস্টবিনে ফেলে দেয়, বিল্ডিং থেকে ফেলে দেয়, ওষুধ গ্রহণ করে মায়ের গর্বে মৃত্যুবরণ করান গর্বের শিশুকে। শিশুদের বড় হতে হয় নির্মম অবহেলা, অবজ্ঞা ও অনাদরে। এর দায় সমাজের সকলের। এরা আমাদের সমাজের অংশ। আজ মানুষের মধ্যে মমতা নেই, ভালবাসা নেই, দেশের প্রতি টান নেই, দেশের মানুষের প্রতি আস্থা নেই। মানুষ-মানুষের প্রতি দয়া নেই, একে অপরের প্রতি মর্যাদা নেই। মানুষ স্বার্থের পিছনে, মোহের পিছনে, সম্পদের পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে মানুষ হয় হৃদয়হীন। মানুষের আচরণ হয়ে গেছে নির্মম, নিষ্ঠুর। তারাই আজ কোমলমতি শিশুদের মতো সন্তানদের হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ, অত্যাচার করতে কুণ্ঠাবোধ করে না, ভেজালে ভরপুর হয়ে গেছে মানুষের হৃদয় ও অন্তর। এসব কোমলমতি শিশুদের হত্যা করতে আমাদের গায়ে বাধে না। এটাই কি আমরা চাই? তাই সচেতন হওয়া দরকার শিশুদের প্রতি দয়া, মমতা, ভালবাসা, যতœ ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করার। শিশুরা গড়ে উঠুক বিশ্বের এক উজ্জ্বল কর্ণধার। ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার সবুজবাগ ঢাকা থেকে
×