ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আব্দুল মালেক

নেভাদা ও সাউথ ক্যারোলিনার শিকে ছিঁড়বে কার ভাগ্যে!

প্রকাশিত: ০৪:০২, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

নেভাদা ও সাউথ ক্যারোলিনার শিকে ছিঁড়বে কার ভাগ্যে!

শেষ পর্যন্ত দেখা গেল সন্তানের ভোট কামনায় প্রবল তুষারপাতের ভেতর ওয়াকারে ভর দিয়ে ৯০ বছরের বুশ জননী ঘুরছেন ভোটারদের দোরে দোরে। অথচ সর্ব প্রথম খবরটা কানে গেলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন এই বলে- হায় ঈশ্বর আবার আর এক বুশ! কিন্তু অবশেষে পুত্রের আবদারে তাকেও নামতে হলো প্রচারণায়। বাৎসল্য স্নেহ ব্যাপারটিতে পক্ষী মাতার সঙ্গে মানুষ মাতার ফারাকটা খুব বড় নয়। আর বড় ভাই? যদি থাকে ভাই তবে বাঘ মারতে যাই। সে কারণে নেভাদা আর সাউথ ক্যারোলিনার ভোট শিকারে ভাইয়ের সঙ্গে বন্দুক কাঁধে নামতে হলো জেবের অগ্রজ সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকেও। জর্জ সেখানে অনেক জনপ্রিয় বলে কথিত আছে। অথচ প্রার্থী হওয়ার প্রাক্কালে ফ্লোরিডার সাবেক গবর্নর জেব বুশ বলেছিলেন, আমি একজন বুশ হয়ে নির্বাচন করতে চাই না- ব্যক্তি জেবই আমার পরিচয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট হলো না তার নিজস্ব পরিচয়। ‘ক্যানাডিয়ান বর্ন’ সিনেটর টেড ক্রুজ যাকে প্রচারণায় কারচুপির অভিযোগে ট্রাম্প মোকদ্দমা করতে উদ্যত, তিনিও প্রথম থেকেই জেবের থেকে অনেক অগ্রগামী। সবচেয়ে অল্প বয়সী সিনেটর মার্কো রুবিও পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে তাকে। জেবকে পুনঃ বুশ হতে দেখে ডোনাল্ড হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন তার অতি পরিচিত বাক্যে ‘জেব ইজ আ লায়ার!’ এতদিন বলেছে সে নাকি বুশ নয়, এখন দেখ মা ভাই বেরাদর যাবতীয় বুশ নিয়ে কেমন ভোট শিকারে নেমেছে। কিন্তু কোন্্ সুকীর্তিটি করেছে তার গর্বের বড় ভাইটি? জেব বলছে ৯/১১র পর জর্জ বুশ দেশকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। একটা বিশাল ধ্বংসযজ্ঞের পর, সব বিপদ আপদ শেষ হওয়ার পর সেটা ছিল কিসের নিরাপত্তা? তিনি মাস ডেসট্রাকশনের কথা বলে ইরাক আক্রমণ করলেন। কিন্তু সেটা কি ছিল সেখানে- ছিল না। এর ফলে সারা মধ্যপ্রাচ্যে রয়ে গেল অস্থিতিশীল। এবিসি টেলিভিশন নেটওয়ার্কে নিউ হ্যাম্পশায়ার প্রাইমারির পূর্ববর্তী বিতর্ক রাতকে মিডিয়া বলেছিল গবর্নরস নাইট। সেই রাতেও ট্রাম্পের হুঙ্কারে বড় নিষ্প্রভ ছিলেন সাবেক ফ্লোরিডা গবর্নর জেব। বাক্যবাগিশ নিউ জার্সির গবর্নর ক্রিস ক্রিস্টি তো প্রার্থিতাই প্রত্যাহার করে ফেললেন পরের দিন। যদিও সেই রাতেই আপন ঔজ্জ্বল্যে জ্বলে উঠেছিলেন ওয়াহাইও গবর্নর জন কেসি। সুদর্শন কেসির হাস্যোজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব তার প্রাজ্ঞ কথাবার্তার ধরনে নিউ হ্যাম্পশায়ারে তিনি ক্রুজ ও রুবিওকে পরাজিত করে উঠে গেলেন দ্বিতীয় স্থানে। কিন্তু নেভাদা ও সাউথ ক্যারোলিনা প্রচারে তিনি কি খুব সরব হতে পারছেন না কী? ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী নির্বাচনের পরবর্তী ভোট নেভাদা ককাস ২০ ও সাউথ ক্যারোলিনা প্রাইমারি ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই অঙ্গরাজ্য দুটির বৈশিষ্ট্য অনুসারে যথাক্রমে প্রথমটির মেজরিটি ভোটার হচ্ছে ল্যাটিনো ও পরেরটি কালো বর্ণের। ৭৪ বছরের ডেমোক্র্যাট সমাজতন্ত্রী সিনেটর বার্নি উর্ধে মাদল বাজিয়ে তার তরুণ দল সঙ্গে নিয়ে যেভাবে চল চল গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, এবার তিনি কি এককটা হোঁচট খেতে পারেন বিশেষত সাউথ ক্যারোলিনা প্রাইমারিতে? সেখানে ভোটারদের অর্ধেক কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ায় তাদের মধ্যে হিলারি তথা ক্লিনটনদের রয়েছে বিপুল জনপ্রিয়তা। কৃষ্ণাঙ্গ নেতাদের সঙ্গে এককাট্টা হয়ে এবার ক্লিনটন দম্পতি প্রচার কাজে নেমেছেন- সমর্থনও মিলছে। বার্নি কালো নেতাদের কাছে ছোটাছুটি করলেও ব্যাপারটা সহজ নয়। তবে বিস্ময়করভাবে সর্বশেষ ১৭ ফেব্রুয়ারি সিএনএন পোলে নেভাদায় পিছিয়ে থাকা বার্নি ব্যবধান কমিয়ে হঠাৎ করে পৌঁছে গেলেন হিলারির কাছাকাছি- হিলারি ৪৮% ও বার্নি ৪৭%। কিন্তু ককাস নিয়ে এবারও কি হিলারি ভীত? স্বামী ক্লিন্টন এই প্রশ্নের উত্তরে বললেন, ককাস ব্যাপারটা সর্বদাই ‘আনপ্রেডিক্টেবল’। প্রকৃতপক্ষে দুই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর মধ্যে আইওয়া ভোটের ফলাফল ছিল কারও জিত টিত নয়, অনেক কেন্দ্রে সমান সমান হওয়ায় করতে হয়েছে টাই। এরপর টসের মাধ্যমে হিলারি জিতলেন ৪৯.৯ ভোটে এবং অতি সামান্য ব্যবধানে বার্নি ৪৯.৬ পেয়ে হলেন পরাজিত। কিন্তু এর পরেই তো নিউ হ্যাম্পশায়ার প্রাইমারি যাকে মিডিয়া অভিহিত করেছে সাত দশমিক এক ডিগ্রী রিখটার স্কেলে প্রবল ভূকম্পন। এমন ওলটপালটে বার্নি পেয়ে গেলেন ৬০% আর হিলারি ৩৮% ভোট। একথা বলতেই হয় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে উভয় দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে হিলারি ক্লিন্টনই হলেন একমাত্র তারকা প্রার্থী। তিনি একাধারে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সিনেটর ও ফার্স্টলেডি। বিশ্বখ্যাত এই প্রার্থীর সমকক্ষ দু’ দলেই দ্বিতীয় আর নেই। তার বিপুল অভিজ্ঞতা ও জনপ্রিয়তার কারণে দলের উল্লেখযোগ্য কেউই তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় নামার সাহসই পাননি। কিন্তু ভোটারদের কাছে বরাবর বার্নির স্পষ্ট কথা বৃহৎ কোম্পানি ও ওয়াল স্ট্রিটের কাছে যে অর্থনীতির চাবিকাঠি তাতে মাত্র এক পার্সেন্ট ধনিক শ্রেণীর হাতে কুক্ষিগত হয়ে গেছে আমেরিকার সমুদয় সম্পদ। সমাজের অর্থনৈতিক ব্যবধান ঘোচাতে মধ্যবিত্ত ও ওয়ার্কিং ক্লাসের আয় বৃদ্ধি ও নতুন কর্মসংস্থান, মজুরি বাড়ানো, ফ্রি কলেজ শিক্ষা, সকলের জন্য হেলথ কেয়ার ও বিদেশ নীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশী ভূমিকা ত্যাগ করে যুদ্ধ পরিহারের মতো বিষয়গুলো তার এজেন্ডা হওয়ার কারণেই তাকে সমর্থন করে যাচ্ছেন তরুণরা। কিন্তু বর্তমানে নতুন স্ট্র্যাটেজি নিয়ে হিলারি ইতোমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন এসব অসম্ভবের গল্প। যেটা করতে পারব না আমি কখনও সেটা বলি না। যে হিলারি ন্যাশনাল পোলগুলোতে বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন বার্নির থেকে কিন্তু সর্বশেষ ১৭ ফেব্রুয়ারি সিএনএন ন্যাশনাল পোলে দেখা যাচ্ছে হিলারি ৪৪% ও বার্নি ৪২%। রিপাবলিকান দলীয় পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাশনাল পোলে শুরু থেকেই ছিলেন সবার ওপরে। কিন্তু সেই ট্রাম্প ১৭ ফেব্রুয়ারির এই সিএনএন পোলটিতে যে হঠাৎ করে এভাবে টেড ক্রুজের কাছে পরাজিত হবেন এটা অনুমান করা শক্ত ছিল। এই পোলে ক্রুজ ২৮% পেয়ে প্রথম এবং ২৬% ট্রাম্প। তবে সাউথ ক্যারোলিনার প্রাইমারি পোলে ট্রাম্প ৩৮% আর ২২% ক্রুজ। এখানে যদি শেষ পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতে যান তবে অন্য কোন রিপাবলিকান মনোনয়ন প্রত্যাশী তাকে দমাতে পারবেন বলে মনে হয় না। কিন্তু এত ঢাল-তলোয়ার নিয়ে প্রচারণা সত্ত্বেও জেব বুশ এই পোলে মাত্র ৪% ভোট পেয়ে পড়ে রইলেন চতুর্থ স্থানে। লেখক : আমেরিকা প্রবাসী email : [email protected]
×